কলসিন্দুরের নারী ফুটবলার ও ফুটবলের খসড়া

কলসিন্দুরের নারী ফুটবলার ও ফুটবলের খসড়া
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:৪৮:৪০
কলসিন্দুরের নারী ফুটবলার ও ফুটবলের খসড়া
জোবায়ের মিলন
প্রিন্ট অ-অ+
আমরা নিজেদেরকে ভাগ্যবান বলবো না সৌভাগ্যবান বলবো না দুর্ভাগা বলবো তা একবাক্যে বলা মুশকিল। কিছুটা আলোচনা করে বা কিছু বিষয় আলোকপাত করে সিদ্ধান্তে পৌঁছালে বোধ হয় ভালো হয় সব পক্ষের পক্ষেই। অন্যথায় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে শিরোনামটি।
 
ফুটবল বাংলাদেশের জনপ্রিয় না অজনপ্রিয় না নামমাত্র একটি খেলা তা মনে হয় বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বলবার প্রয়োজন নেই। তা আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই জানি। ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকাতে ফুটবল খেলাকে দেবতার খেলা হিসেবে দেখা হয়। আর যারা খেলেন বা যারা দেলোয়ার অর্থ্যাৎ ফুটবলার যারা তাদেরকে দেবতার সন্তানসম দেখা হয়। এই কথাটি শুধু ইউরোপ, আমেরিকা নয় এশিয়া তথা বাংলাদেশের বোদ্ধা থেকে শুরু করে আপামর সাধারণ মানুষও জানেন। এরমধ্যে যারা ফুটবলকে একটু বেশি ভালোবাসেন তারা তো আরও জানেন। সেই জানা থেকেই বলা যায়, ফুটবল দুনিয়াজোড়াই জনপ্রিয় খেলা।
 
বাংলাদেশে ফুটবল খেলা কবে থেকে শুরু সে ইতিহাস আলোচ্য নয়। তাই ইতিহাস থাক। বলা যায় বাংলাদেশেও ফুটবল জনপ্রিয় খেলা। এখন যদিও জৌলুস নেই তার আঁচ আছে। মাঠে না হলেও স্মৃতিকাতরতায়। স্বাধীনতার কিছু পূর্ব থেকে এদেশে ফুটবল খেলা জনপ্রিয় হতে শুরু করে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অন্য হাজার খেলাকে পাশ কাটিয়ে ফুটবল খেলা প্রধান খেলায় পরিণত হয়। মানুষ হাটে মাঠে শুধু নয় হাজার টাকার টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা দেখতে ভিড় করে কাতারে কাতারে। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বই এর গোড়ার দিক পর্যন্ত ফুটবলই ছিল একমাত্র জনপ্রিয় খেলা। তার ধারেকাছেও ছিল না অন্য কোনো খেলা। আজকের ক্রিকেট কে জানতো তখন?
 
এমনও দিন গেছে আজকের ঈদের ট্রেন টিকিট পাওয়ার মতো মানুষ একদিন, দুদিন আগ-থেকেই দাড়িঁয়ে থাকতো আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স, মুক্তযোদ্ধা তথা ফুটবল খেলার একটি টিকিটের জন্য টিকিট কাউন্টারের সামনে। কত মারামারি, কত হইহুল্লোড়, কত মিছিল যেতো সারি সারি। স্টেডিয়াম উপচে পড়তো মানুষের ঢল। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স যে-ই জিততো পথে পথে নামতো ঢোল তবলা নিয়ে আনন্দ র্যা লি। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে পাগলপ্রায় তরুণরা প্রদক্ষিণ করতো গাঁয়ের এমাথা থেকে ওমাথা। রঙ ছিটিয়ে করতো উল্লাস। মুরুব্বিরা বসে থাকতো রেডিওতে কান পেতে। এই ফুটবল খেলাকে ঘিরে জীবনও গেছে অনেক। হয় মারামারি করে না হয় খেলা দেখতে গিয়ে। তখন ঘরে ঘরে টিভি, মিডিয়া ছিল না। একটা টিভির সামনে হাজারে হাজার মানুষ। ভিসিআর এর মতো খেলা দেখার জন্য ভাড়া আনা হতো টিভি। তরুণরা টিফিনের টাকা জমিয়ে চলে যেত খেলা দেখতে। না হয় পরিশোধ করতো ভাড়া আনা টিভির টাকা। আজকের ক্রিকেটের মতো রূপ ছিল ফুটবলের। অহংকার ছিল ফুটবলের।
 
প্রিয়তায় আকাশছোঁয়া হলেও ফুটবলাররা মান পায়নি কোনকালেই। বাংলাদেশের ফুটবল যখন ম্যারাডোনা, পেলে, রোমারিও, ক্যানেজিয়া, বাতিস্তুতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তখন তাদের সাথে ফেডারেশনের অনেকের ছবি উঠলেও কোনো খেলোয়াড় ছুঁতে পারেনি সেসব লিজেন্ডের জার্সিটিও। অথচ খেলোয়াড়ের সাথে খেলোয়াড়েরই দেখা হবার কথা। কথা হবার কথা। তা হয়নি কখনো। না সেদিন, না আজ। ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি সালাউদ্দিন সাহেব নিশ্চয় ভুলে যাননি সেই ন্যক্কারজনক ঘটনা- যেদিন তিনি ফুটবলের হীরু আলম থাকাবস্থায় খেলা শেষে হোটেল থেকে বিনা কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাঁকেসহ আরও দুই ফুটবল জাদুকর'কে। কোন কারণ ছাড়াই তাদের মতো লিজেন্ডদের আটকে রাখা হয় দীর্ঘ সময়। অপমানে কান কাটা গেলেও কোন ফেডারেল বডি সেদিন কোন দুঃখ প্রকাশ করেননি। সালাউদ্দিনদের মতো ফুটবল খেলোয়াড়কে নাজেহাল করার কারণে কারো কোন বিচার হয়েছে বলে আমরা শুনিনি। কেন সেদিন তাঁকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা তিনি আজও জানেন কিনা জানি না। বাংলাদেশ ফুটবলের বরপুত্র সালাউদ্দিন সাহেবকে সে অপমান আজও হয়তো পীড়া দেয় মাঝে মাঝে। তবে আজ পদ-পদবির ভারে আড়ালে থাকা খেলোয়াড় অপমানের, হেয় করার, ছোট করার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার এমন শত ঘটনা ভুলে গেছেন হয়তো। হয়তো ভুলে গেছেন সালাউদ্দিন, চুন্নু, সাব্বিরদের পা যা পারে সভাপতির ওই চেয়ারের দ্বারা সারা জীবনও তা করা সম্ভব নয় কোনদিনও।
 
নব্বইয়ের দশকে আমরা যারা সবে বড় হচ্ছি, ফুটবলের যৌবন কাঁপনে কাঁপছি, কিছু বুঝে আর না বুঝে, আবাহনী-মোহামেডান আর আসলাম, চুন্নু, মহসিন, কানন, সাব্বির, কায়সার হামিদ বলতে যারা উন্মাদ তারা দেখেছি খেলোয়াড় অপমান কত প্রকার ও কি কি। দেখেছি একদিকে জয় জয় মহারব আরেক দিকে খেলোয়াড়কে বক্সিং মেরে থুঁতনি ফাটিয়ে দিতে। দেখেছি বিদেশ সফরে খেলোয়াড় ঘুমাচ্ছে সাধারণ বিছানায় আর ফেডারেশন কর্তারা অসাধারণ শয্যায়। খেলোয়াড়ের দৈনন্দিন টাকা বাড়াতে হাইকোর্ট জজকোর্ট এক হয়ে যাচ্ছে অথচ রাঘব বোয়ালরা পার্টিতে খাচ্ছেন জাপান জার্মানি ব্র্যান্ড। সে সময়ে চুন্নু, সাব্বির, আসলামদের প্রতি অবহেলা অপমান ন্যক্কারজনক শতশত ঘটনা আমরা দেখেছি। দেখেছি রেফারিকে মাঠে ফেলে বেদম প্রহার করতে।
 
দেখেছি খেলোয়াড়কে গলাধাক্কা দিয়ে মাঠ থেকে রেব করে দিতে। দেখেছি বড় বড় ব্যক্তিকে আকাশের গায়ে পা দিয়ে চলাচল করতে যে কিনা ফুটবলের জন্য একটি ‘ফ’ও কুড়িয়ে আনতে পারেননি তার জীবদ্দশায়। আমরা দেখেছি খেলোয়াড়ের চেয়ে ফেডারেলদের ফুলে ও ফেঁপে উঠার হাজার চিত্র অথচ একজন খেলোয়াড় খেলার শেষে বিদেশে টেক্সি চালায় ভাগ্যের কি নিদারুণ পরিহাসে। এমন ঘটনা রয়েছে হাজারে হাজার। বলতে থাকলে দিন রাত হবে। রাত দিন হবে। এসব ঘটনা সেদিন চোখে পড়েনি যাদের চোখে পড়বার কথা থাকে। হয়তো পড়েছে, তারা না দেখার ভান করে ছিলেন কোন না কোন লঘু লোভের আশায়। কিন্তু লঘু লোভ যে গুরু ধ্বংস হয়ে একদিন ছোবল বসাবে পায়ে তা তারা বুঝে উঠেননি। না-হয় বুঝেও চুপ ছিলেন সামান্য আর্থিক সুবিধা পাবার কারণে। পাছে জলাঞ্জলি দিয়েছেন এ দেশের সোনালি ফুটবলকে। আজ ফুটবলের মাঠ বিরান ভূমি। আজ বিনা টিকিটেও মাঠে হাজির হয় না কোন এক স্কুল পলাতক বালক/বালিকা।
 
ফুটবলের এমন যখন অবস্থা। এমন যখন পোড়খাওয়া সময়; তখন আমাদের শুনতে হয় কলসিন্দুর থেকে ভেসে আসা নারী ফুটবলারদের আর্তনাদ। শুনতে হয় এএফসি  চ্যাপিম্পয়নশিপ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের মার্জিয়া, সানজিদা, মারিয়া, শিউলিদের কান্নাজড়ানো কণ্ঠ। শুনতে হয় তাঁদের প্রতি অবহেলার করুণ কাহিনী। টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে সদ্য এএফসি থেকে সোনামুখ নিয়ে ফিরে আসা মেয়েদের লোকাল বাসে করে বাড়ি ফিরার এক নিদারুণ চিত্র। ভেসে ওঠে সে বাসে নাজেহাল হওয়া কষ্টের বার্তা। আমরা দেখি তাঁদের পিতার আক্ষেপ ভরা অভিযোগ। এখানেই শেষ হয় না ফুটবলে দেশের সম্মান বয়ে আনা মার্জিয়া, কৃষ্ণা রানিদের অপদস্ত কাহিনী। স্বর উঠে ধোবাউড়া উপজেলায় তাঁদের নিজ স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও। কে এই জোবেদ আলী? কে এই স্কুল শিক্ষক, যার কাছে দেশের সম্মান ভূলুন্ঠিত হয় নিমিষেই? যার কাছে মার্জিয়া, মারিয়াদের সম্মান মিলে না এতটুকু? কাকে জুতা পেটা করার কথা বলে জোবেদ আলী? কাদেরকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবার সাহস দেখায় জোবেদ আলী? কী ক্ষমতা জোবেদ আলীর? জোবেদ আলীরা কি জানে না এই শিউলিরা সোনার ফসলের মতো ফুটবল ফলাচ্ছে নতুন করে এদেশে, যেখানে মামুনুলরা ফলাচ্ছে কেবল আগাছা!
 
ভারতের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুর নানা দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এই গ্রামের মেয়েরাই তাক লাগিয়ে দিয়েছে ফুটবল খেলে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে এদেশের গৌরব বাড়িয়েছে, লাল সবুজের পতাকাকে নিয়েছে আরও এক ধাপ এগিয়ে। একথা আর কেউ না জানুক বাংলাদেশে ফুটবল ফেডারেশন তো জানে তাদের দ্বারা এদেশের কী লাভ হলো? কী অর্জন তাদের? যেখানে বারবার ফেল করছে জাতীয় ফুটবল দল সেখানে নারী ফুটবলাররা স্বপ্ন দেখছে, স্বপ্নকে ছুঁতে চাইছে, ছুঁইছেও অনূর্ধ্ব-১৬। ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে আনছে এএফসি ট্রফি। অথচ সে সানজিদা, নাজমা, শিউলিদের প্রতি এহেন আচরণ কোন সভ্যতার প্রতীক? কলসিন্দুরের নারী ফুটবলারদের পিতা দিনমজুর, মাতা অন্যের বাড়ির কাজ করে দিনাতিপাত করে বলেই কি একটি লোকাল বাসে ফিরতে হয় সোনার কন্যাদের? জোবেদ আলীর রক্তচক্ষুর অপমান সইতে হয় নীরবে?
 
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও রাষ্ট্রের প্রতি প্রশ্ন করতে চাই, কলসিন্দুরের নারী ফুটবলারদের লোকাল বাসে বাড়ি পাঠিয়েছ, আপত্তি নেই। প্রশ্ন, আপনারা কোন বাসে বাড়ি ফিরেছেন বা ফিরবেন? আপনাদের দৈনন্দিন হাত খরচের জন্য ফেডারেশন থেকে কত খরচ করছেন আর কীর্তি বয়ে আনা কন্যাদের হাতে কত খরচ দিয়েছেন? তাঁরা বাড়ি ফিরতে যে অপমান অপদস্ত হলো, আপনারা কি এমন কোন অপমানে পড়েছেন? ফেডারেশনের কাছে আরো প্রশ্ন, এই মেয়েদেরকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ও নিরাপদে বাড়িতে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়ার দায়িত্ব কার? আমি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাই, দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা এইসব নারী বা কিশোর ফুটবলারদের নিরাপত্তা কার হাতে? তাদের সম্মান, তাদের দেখবাল, তাদের যত্ন-আত্তি কারা দেখভাল করছে ও দায়িত্ব কার? আপনার, ফেডারেশনের না তাদের নিজেরটা নিজের?
 
ওইদিন লোকাল বাসটিতে চড়ে কলসিন্দুরে যাবার পথে তাদের যে সম্মানহানি হলো, তারা যে ভোগান্তির স্বীকার হলো, তারা যে অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাড়ি গেল তার দায় কে নেবে? তাদের জন্য কি লোকাল বাসে চড়েই বাড়ি যাবার কথা ছিল বা ওইটুকু অনুদানই পাশ করা ছিল। প্রধানমন্ত্রী আপনার নিকট অনুরোধ আপনি বিষয়টি খেয়াল করবেন, খোঁজ নেবেন মারিয়া, শিউলিদের কি কি পাওনা ছিল, তারা তাদের পাওয়াটুকু ঠিকঠাক পেয়েছে কিনা। যদি না পেয়ে থাকে তার জবাব আপনি নেবেন এবং উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন তা প্রত্যাশা করতেই পারি। খোঁজ নেবেন সম্মানিত মেয়েদের লোকাল বাসে চাপিয়ে কর্তৃপক্ষ কোন বাসে বাড়ি গেছেন বা যাবেন। জোবেদ আলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে, শুনেছি গণমাধ্যমে। বরখাস্ত করাই কি শেষ কথা? দেশের গর্ব বয়ে আনা মার্জিয়াদের যে জোবেদ আলী জুটাপেটা করতে চাইলো, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বলে আমি মনে করি। আপনি তা করবেন, সে আশা অবান্তর নয় জানি।
 
প্রবাদ আছে, ‘যেখানে প্রতিভার সম্মান নেই, সেখানে প্রতিভা জন্মায় না।’ ‘মানির মান যে দেয় না, সে নিজেও মান পায় না।’ প্রবাদগুলো নিঃফলা নয়। যুগে যুগে প্রবাদ প্রবচন যেমন সত্যরূপ তেমনি তার মূল্যও প্রচুর। বাংলাদেশ ফুটবলের যে ইতিহাস, যে কালো অধ্যায় তাদের আছে তাই প্রমাণ করে বা মনে করিয়ে দেয় প্রবাদগুলো। আর সে কারণেই আজকের ফুটবলের এহেন দশা। 
 
ভোরের রবির মতো যে ফুটবল উলোকোজ্জ্বল উদিত হয়েছে সে ফুটবল আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে কেবলমাত্র তাদের গোড়ামি ও ফেডারেশনের কাড়াকাড়ি, খাইখাই আর খেলোয়াড়ের প্রতি অসম্মান সূচক আচরণের কারণেই। যে একবার ফুটবল ফেডারেশনের হয়ে ফুটবল খেলেছে সে তার সাত জনমের কাউকেও আর ফুটবলে আনতে চায়নি। তাই খেলোয়াড় থেকে তৈরি হয়নি খেলোয়াড়। খেলোয়াড় দ্বারা তৈরি হয়নি খেলোয়াড়। অপ্রীতি আর বিতৃষ্ণার করাণে ফুটবল থেকে যেমন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ফুটবলের মানুষেরা তেমনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ফুটবলের প্রতি প্রেমিক দর্শকেরাও। তারা দিনের পর দিনে দেখেছে ফুটবলকে ঘিরে শত শত নীচ প্রকৃতির ঘটনা। মুখ ফিরিয়েছে মানুষ তবু মুখ ফিরায়নি লোভাতুর যারা তারা। তাই তারা বার বার ফিরে আসে ঘটিটাও চেছে খেতে কিন্তু মানুষ তো আর ফিরে না। তাই ফুটবলও আর জাগে না। মাঠ উপচে পড়ে না প্লেকার্ড, ফেস্টুনে ভরপুর হাত। চিৎকারে ফাটে না, পাকির আলী, এ্মিলির নাম। টিশার্টে, মাথার ক্যাপে স্থান পায় না সালাউদ্দিন, সাব্বিরের মুখোচ্ছবি। 
 
ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে আজ আবার ফুটবলের দিকেই খেয়াল দিতে হবে। ভুলে যেতে হবে রাজনীতি, স্বার্থনীতি। ভুলে যেতে হবে নিজের আয়নায় নিজের চেহারা দেখার রীতি। পকেট ভারী করার নিচুতা। ভুলে যেতে হবে খেলোয়াড় অসম্মান করার অভ্যাস। যে খেলোয়াড় দিয়ে খেলা বাঁচে সে খেলোয়াড়কে অপমান অপদস্ত করে খেলাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। যে গরু দুধ দেয় সে গরুকে আদর যত্ন করতে হয়। লালনপালন করতে হয়। নিজের ক্ষতি হলেও তার লাভ দেখতে হয়। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে হাসি ঠাট্টায় আনন্দে রাখলে তার দ্বারা আনন্দের কিছু করা সম্ভব হয়।
 
রাজনীতি দুষ্টু খেলার চক্র ভুলে খেলাকে ভালোবেসে খেলাকে লালন করতে না পারলে রাজনীতিই হবে, পদ-পদবিই হবে খেলা আর হবে না। খেলোয়াড় পাওয়া যাবে না। দেশের কথা ভেবে, রাষ্ট্রের সম্মানের কথা ভেবে খেলা ও খেলোয়াড়দের সাথে সম্মানসূচক আচরণ করতে হবে। খেলোয়াড় সম্মানিত হলে সে উজ্জীবিত হবে, তাকে দেখে আর দশজন উজ্জীবিত হবে। প্রতিযোগিতা বাড়বে। প্রতিযোগী বাড়বে। আমরা পাবো সোনার সন্তান। সোনার সন্তান পেলে ফুটবল আবার জাগবে, আবার মাতাবে জেলা থেকে জেলা। আবার মাঠে দেখবো হৈ রৈ রব। ঢোল তবলার মিছিল, জিতিলোরে জিতিলো. . .আবাহনী জিতিলো. . .মোহামেডান জিতিলো।
 
জোবেদ আলীর চাকরি গেল। মার্জিয়া, মারিয়া, শিউলিদের যারা লোকাল বাসে চড়িয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমালো তাদের কী হলো, কী বিচার করলো ফেডারেশন তাদের তা কি আমরা জানতে পারবো না? আদতে তাদের বিচার হবে কি? আশা করি তাদেরও বিচার হবে। আমরা তা জানার অপেক্ষায় রইলাম।
 
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com