মন্ত্রিসভায় প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’। আইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশে উল্লেখ আছে, যে কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে (বৈদ্যুতিন) মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মীমাংসিত কোন বিষয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডা চালালে বা অবমাননা করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের খসড়া প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে সেটি আরো পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করতে আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গণমাধ্যমের খবর থেকে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকে বলতে চাচ্ছেন এটা মুক্ত আলোচনা কিংবা বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আবার কেউ বলছেন জোর খাটানো। যেমন, আমি আমার ফেসবুক ওয়ালে দণ্ডের কথা শেয়ার করায় আমার এক বন্ধু মন্তব্য করেছেন ‘অনুভূতির উপর জোর খাটানো কি কোন গণতান্ত্রিক দেশে সম্ভব?’ (বিশ্বাস করি তিনি বিরুদ্ধ অবস্থান থেকে নয়, জানার আগ্রহ থেকেই এমন মন্তব্য করেছেন) জবাবে আমি বলেছিলাম, ‘যে সন্তানের ব্যবহারে আদব নেই তাকে আদব শেখায় বাধ্য করা অবশ্যই অভিভাবকের দায়িত্ব।’ ঠিক এ জায়গাটিতে একটু বড় করে ব্যাখ্যা খুঁজতে চাই এখানে।
নাগরিকরা যদি কোন ভুল পথে হাঁটে সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের পথ দেখিয়ে দেয়া। আর সেই সঠিক পন্থাটি হচ্ছে আইন। রাষ্ট্রীয় স্বাভাবিক নিরাপত্তা ও শৃংখলার জন্য কিছু আইন বহু বছর ধরে বিদ্যমান। যেমন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি ইত্যাদি। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আইন সংবিধান তো রয়েছেই। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও শৃংখলা আরো সুন্দর করার স্বার্থে রাষ্ট্র প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে আরো আইন প্রণয়ন করে। তেমনি একটি পরিস্থিতিতে তৈরি করতে হচ্ছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’।
বর্তমান সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল হিসেবে দেশের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ এখন ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন প্রায় অর্ধকোটি মানুষের উপস্থিতি নিয়মিত। ভাল দিকের পাশাপাশি খারাপ দিক হল একশ্রেণীর মানুষ বুঝে না বুঝে নানান রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন মানুষের মনে। এ বিভ্রান্তি থেকে বাদ যাচ্ছেন না দেশের গৌরবের দুটো জায়গা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
অতীতে আমরা দেখেছি দেশের কোন কোন রাজনৈতিক দলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা এবং ইতিহাস নিয়ে বিতর্কমূলক নানান বক্তব্য দিয়েছেন, আর সেটা তাদের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অন্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। জাতির জনককে নিয়ে পৃথিবীর কোন দেশে বিতর্ক নেই, কেবল আমরাই স্পর্ধা দেখাই। এখনো সভ্য হতে পারিনি তা বোধহয় আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তাই বলে এতটা অসভ্য কেন!
সেই যুক্তিতে বলছি, শৃংখলার স্বার্থে অসভ্যকে সভ্য করতে রাষ্ট্রকে কখনো কখনো কঠোর হতে হয়। সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন আইন করার দাবি জানিয়ে এসেছিল সচেতন নাগরিকরা। সরকার সেই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে ধন্যবাদ। তাছাড়া আরো একটি কথা না বললেই নয়, সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে সমালোচনা করা আর উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রোপাগান্ডা বা অবমাননা করা দুটো এক জিনিস নয়।
লেখক: আইনজীবী ও সম্পাদক, ল’ ইর্য়াসক্লাব বাংলাদেশডটকম
বিবার্তা/জিয়া