কাজী আরেফ আহমেদ

কাজী আরেফ আহমেদ
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০১৬, ০১:৪৫:৫৫
কাজী আরেফ আহমেদ
কাজী সালমা সুলতানা
প্রিন্ট অ-অ+
কাজী আরেফ আহমেদ। ষাটের দশকে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন একজন সৎ ও সজ্জ্বন ব্যক্তি।লক্ষে ছিলেন আপোষহীন ও অবিচল।ব্যক্তগত জীবনে তিনি সততার বিরল দৃষ্টান্ত।
 
হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর সরব পদচারনা শুরু।ছয় দফার আন্দোলন থেকে উনসত্তরের গনঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের অনিবার্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করেন।
 
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে সাড়ে চার দশক থেকে জাতীয় রাজনীতির গতি প্রবাহের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ।
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়েই তিনি ছিলেন প্রথম কাতারের যোদ্ধা,সংগ্রামী চেতনার এক অগ্রসৈনিক।ষাটের দশকের গোড়াতেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে গড়ে তোলা হয় গোপন সংগঠন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস হিসাবে সর্বজনবিদিত। কাজী আরেফ ছিলেন এই নিউক্লিয়াসের তিন সদস্যের একজন।
 
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রুপকারদের একজন ছিলেন।জাতীয় সংগীত নির্ধারণেও রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা।মহান মুক্তিযুদ্ধকালে কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (বি এলএফ) বা মুজিব বাহিনীর প্রধান।
 
কাজী আরেফ ছিলেন জাসদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।জিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গনতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাত্বিক প্রবক্তা। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন ১০দলীয় ঐক্যমোর্চা। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গনআন্দোলনের অন্যতম সেনানী।
 
১৯৯২ তে  মহিয়সী মাতা জাহানারা ইমামকে সঙ্গে নিয়ে একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়ন ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি গঠন করেন।যুদ্ধাপরাধীমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক  বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে  ৭২টি সংগঠনের যৌথ সভায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তুরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সমন্বয়ে গড়ে তুলেছিলেন  জাতীয় সমন্বয় কমিটি। ১৯৯২র ২৬মার্চের গণআদালতের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।
কাজী আরেফ আহমেদ
১৯৯৯ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুরে সন্ত্রাস বিরোধী এক জনসভার মঞ্চে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন কাজী আরেফ আহমেদ।এ সময় তিনি ছিলেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি। একই মঞ্চে নিহত হন জাসদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পর পর দুবার নির্বাচিত দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও তফসের মণ্ডল।
 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃঢ়চেতা এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৬৬ সালে যখন ছয় দফা ঘোষণা করেন কাজী আরেফ তখন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি। ছয়দফা ঘোষণা পর অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি ছিলো, ছিলো সঙ্কা।এসময় ছাত্রলীগ মহানগর শাখার সভাপতি হিসাবে সর্বাগ্রে ছয়দফার পক্ষে মহানগর কমিটির শাখায় সমর্থণ এবং এর পক্ষে রাজপথে বিশাল মিছিল বের করেন কাজী আরেফ আহমেদ।
 
ব্যক্তিগত জীবনে কাজী আরেফ ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শণে বিশ্বাসী।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলের  রাজনীতির বিরুদ্ধে কাজী আরেফ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৮০ সালে গড়ে তোলেন ১০ দলীয় মোর্চা। ১৯৭২থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্বেও আওয়ামীলীগের সাথে জাসদের এই মোর্চা গড়ে তোলেন।
 
আজীবন প্রচারবিমূখ এই সব্যসাচী নেপথ্যে থেকে নীতিনির্ধারকের ভুমিকা পালন করেছেন জাতির প্রতিটি ক্লান্তি লগ্নে। ১৯৯০য়ের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্রগণঅভ্যুথ্থানেও অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই বিপ্লবী বীর।দায়িত্ব পালন করেছেন তৎকালীন ৫দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃত্বে।তাঁর জীবন যাপনেও সমাজতন্ত্র ও স্যেকুলার আদর্শের প্রতিফলন ছিলো পূর্নমাত্রায়।ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনে ছিলো না কোন মোহ।দেশেরআজকের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন কাজী আরেফ আহমেদের মতো নির্মোহ আদর্শিক চেতনার দৃঢ় নেতৃত্বের।এমন একজন নেতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে কিছু সন্ত্রাসীর বুলেটে।
 
‘আমাকে হত্যা করলে বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে আমি শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাবো আমার বিনাশ নেই
 
বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আস্বাদ হয়ে ফিরে আসবো আমার বিনাশ নেই...’
 
লেখক: কাজী আরেফ আহমেদের ভাতিজি
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com