২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রথমে ১২, তারপর ৫, পরে আরো ৪ জন শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে ড. মো. মতিউর রহমানকে আহবায়ক এবং ড. তুহিন ওয়াদুদকে সদস্য সচিব করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করা হয়।
২০১০ সালে বেশ কয়েক জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরে ড. সরিফা সালোয়া ডিনাকে আহবায়ক করে বেরোবি শিক্ষক সমিতির আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। ২০১০-১১ এই দু'বছর নানাবিধ প্রতিকূলতা বিশেষ করে সেই সময়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এবং ভিসির প্রবল বাধার মুখে কোনো নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
২০১২ সালে সর্বপ্রথম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন সামনে রেখে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে একটি দল গঠিত হয় এবং পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচন করে সবগুলো পদে জয়যুক্ত হয়।
এ নির্বাচনে ৮ জন শিক্ষক প্রগতিশীলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের ব্যানারে নির্বাচন করেন। ২০১২ এর কার্যকরি সংসদ সব শিক্ষকের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় বেশ সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তৎকালিন ভিসির দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে ভিসির পক্ষ অবলম্বন করে শিক্ষক সমিতির মূল্ আদর্শ ভূলণ্ঠিত করা হয়।
২০১৩ সালে তারা কোনো নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়। এসময়ে সমিতির গঠনতন্ত্র নিয়ে শিক্ষকরা পাল্টাপাল্টি অবস্হান নেন। গঠনতন্ত্র নিয়ে সর্বসম্মত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই ২০১২ সালের সংসদ ২০১৪ সালের জন্য নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলে নীল দল, সাদা দলসহ সাধারণ শিক্ষকরা তলবি সভার মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির এডহক কমিটি গঠন করেন।
অপরদিকে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় আরেকটি কমিটি গঠন করে। পরস্পর বিরোধী অবস্থানের মুখে শিক্ষক সমিতি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে। ২০১৪ সালের শেষদিকে দু’পক্ষের শিক্ষকদের অংশগ্রহণে ২৭ জন শিক্ষকের বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে ক্যাস্পাসে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে।
এ সুযোগে নানান মহল থেকে অসংখ্য দাবি যুক্ত হতে থাকে। এমন কি সাবেক ভিসি cÖ‡dmi ড. Avãyj জলিলের আমলে অবৈধ নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিও যুক্ত হয়। ক্যাম্পাস অশান্ত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে, শুধু ২৭ শিক্ষকের বেতন-ভাতার দাবির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখে নীল দল আন্দোলন থেকে সরে যায়।
আন্দোলনের মুখে ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস, ও প্রশাসনিক ভবন বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ২০১৫ এর তফসিল ঘোষিত হয়। প্রথমবারের মত নীল দল এবং প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ উভয়ই পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচন করে।
নির্বাচনে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের প্যানেল একটি সদস্য পদ ব্যতীত জয়লাভ করে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রে নীল দলের প্রার্থীরা ০/১/২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। যুগ্ম-সম্পাদক পদে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়।
২০১৫ এর কার্যকরি সংসদ কোনো রকম সাধারণ সভা না করেই ২৭ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে ভিসির পতনের আন্দোলনে রুপান্তরিত করে। একপর্যায় অ্যাকাডেমিক ভবনগুলো তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে। মার্চ মাস পযর্ন্ত ক্লাস, পরীক্ষা, প্রশাসনিক এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে প্রায় ৯২ হাজার আবেদনকারী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। শিক্ষামন্ত্রী, মন্ত্রীর পক্ষে সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, রসিক মেয়রসহ সবার আলোচনার উদ্যোগ /আলোচনা ব্যর্থ হয়। শিক্ষক সমিতির নেতারা ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যান সম্মিলিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে।
একনাগাড়ে প্রায় ২৭ দিন অবিশ্বাস্য এই আমরণ অনশন কর্মসূচি চলে। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, কয়েক জন সংসদ সদস্য রসিক মেয়রের সাথে আলোচনা করে নীল দলের সমর্থনে জেলা প্রশাসন-পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায় ৬ মাস বন্ধ থাকার পর প্রশাসনিক-অ্যাকাডেমিক ভবনের তালা অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাস্পাস সচল করে।
ভিসি পদত্যাগকারী শিক্ষকগণকে স্ব স্ব পদে যোগদানের অনুরোধ করে তিনবার চিঠি দেন। একপর্যায় চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। এসময় শিক্ষক সমিতির কার্যকরি সভায় স্ব স্ব পদে পুনরায় যোগদানের সিদ্ধান্ত হয় এবং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয় গৃহীত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানানোর জন্য।
কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে নেতাদ্বয় ওই সিদ্ধান্ত যথাসময়ে জানাতে ব্যর্থ হন। পদত্যাগকারী সবার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। ভিসি একাই অনেকগুলো পদের দায়িত্বগ্রহণ করেন। অনেক বিভাগ প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে। সিন্ডিকেট সভায় অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত হয়ে যায়, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন শিক্ষকরা।
পরীক্ষার পারিতোষিক পরিশোধ, পদোন্নতি, চাকরি স্থায়ীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষকদের নানাবিধ অসন্তোষ থাকলেও বর্তমান শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ কোনো ভূমিকা রাখেনি। এমন কি কোনো সাধারণ সভা আহ্বান করেও শিক্ষকদের মতামত নেননি।
২০১২-২০১৫ পর্যন্ত একটি পক্ষ বার বার সমিতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
প্রত্যাশাপূরণে দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং ক্যাম্পাস বিনির্মাণে যথাযথ পদক্ষেপ ও পরিকল্পনাগ্রহণ ইত্যাদির হিসাব-নিকাশ-বিচার-বিশ্লেষণে ২০১৬ নির্বাচনে পরির্বতন আশা বৈকি! নির্বাচনে আবারও নীল দল এবং প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ পৃথক দু'টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল চূড়ান্ত করেছে। আসছে ২০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। শিক্ষকদের মূল্যবান ভোটের রায়ে বেরোবির আগামী দিনের পথচলা হোক সুন্দর ও শান্তিময়।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।