হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে অপেক্ষা আর কতকাল! অবশেষে মুখ খুললেন আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সংগ্রামের ভিতরে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। শিরায় শিরায় অন্যায় আর অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, অমিত সাহস নিয়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধ তার স্বভাব। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জন্মের পর থেকে দেখেছেন তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কঠিন সংগ্রাম, মুখোমুখি হয়েছেন অনিশ্চিত অন্ধকার সময়ের। বাবাকে বারবার যেতে হয়েছে জেলে ও ফাঁসির মঞ্চে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার পিতাকে কারাবন্দি করে ফাঁসির রায় দিয়ে কবর খুঁড়েছে। দুই ভাই গেছে মুক্তিযুদ্ধে। পরিবারের সঙ্গে তিনি নয় মাস বন্দিদশায় কাটিয়েছেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের কাল রাতে দেশের বাইরে থাকায় ছোটবোন শেখ রেহানাসহ অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু সেই অভিশপ্ত রজনীতে বাবা, মা , ভাইসহ স্বজন হারানোর যন্ত্রণা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। নির্ঘুম নিশুতি রাত কেবলই কাঁদায়। ৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে অন্ধকার সামরিক শাসন কবলিত আশার বাতি জ্বালিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেন। তার নেতৃত্বেই অন্ধকারের কবর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তির নবজাগরণ ঘটে। কিন্তু ষড়যন্ত্র যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না। এ পর্যন্ত ২১ বারের বেশি তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে ২০০৭ সালের ১/১১ এর কালো অধ্যায়। তবুও তিনি দমেননি।
চারদিকে ষড়যন্ত্রের জাল ভয় আর আতঙ্ক তৈরি করা হলেও তার অসীম সাহস ও তেজস্বী নেতৃত্ব অদৃশ্য কালো শক্তিকে পরাস্থ করেছে। ভাবতে অবাক লাগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি রক্ত বিন্দুর প্রতি আমাদের যেখানে কৃতজ্ঞ ও চিরঋণী থাকার কথা ছিল, সেখানে ক্ষমতার লোভ বা ভয়ে নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারের সাথে প্রতারণা, বেইমানী, নিশ্চিহ্ন করার বিশ্বাস ঘাতকতার ধারাটির অপতৎপরতা আজ অবধি বিদ্যমান। কিন্তু প্রতিটি সময় ষড়যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে দেশের উন্নয়নের ধারাকে গতিশীল রাখা, সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁর দূরদর্শিতা, সাহস এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। ১/১১ এর ভুক্তভুগী মাত্রই জানেন এর তীব্রতা এর দহন, অপমান আর অসহায়ত্বের করুণ কাহিনী । আমার মত কত হাজার পরিবার বিনা দোষে সর্বশান্ত বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সুখ আর স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলেছে তার খবর কে রাখে!
২৩ শে জানুয়ারি ২০০৭। আমাদের জন্য সেই ভয়ঙ্কর কাল রাত। মধ্যরাতে হঠাৎ দরজায় বিরতিহীন কলিংবেলের শব্দ। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শ’খানেক কালো ড্রেস পড়া লোক। টিংকু তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো, দরজা খুলে দিলো। রাতের নিস্তব্ধতা চিরে সবাই হুড়মুড় করে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়লো। পুরো বাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে শান্তির জায়গাটি গ্রাস করে নিল এক অচেনা আতঙ্ক। ওরা আমার শাড়ীর আলমারী দেখল, গহনা দেখল, ড্রেসিং টেবিল, বুকশেলফ সবকিছু। একজন ড্রইং রুম থেকে একটি শোপিস তলোয়ার এনে বলল, পেয়েছি স্যার। অফিসারটি ধমক দিয়ে বললেন, 'এটা শোপিস, রেখে আস'। তারা চারতলা শেষ করে তিন তলায় নামলেন। আমি দুই বাচ্চা নিয়ে বেড রুমে বসে আছি। সুযোগ বুঝে একজন উপরে উঠে এলেন।
বললেন, আপনার গহনা আর টাকাগুলো দিন, আবার দেখতে হবে। ঠিক এমন সময় একজন অফিসার তাকে বললেন, ‘আমার অনুমতি ছাড়া আপনি এখানে এসেছেন কেন নীচে নামুন'। ভেতরে ভেতরে আমি ভয় পাচ্ছি। আমি একা মহিলা মানুষ। এখন মধ্যরাত, চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। পুরো বাড়ীতে শ’খানেক পুরুষ লোক। অজানা আশঙ্কায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। একজন খুশীতে চিৎকার করে বলল পেয়েছি স্যার। মনে হলো নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তির মতোন কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলেছে। ওদের স্যার নামক লোকটি বললেন, 'কি পেয়েছেন'? উত্তর এলো শর্টগান। আমি বললাম,'' লাইসেন্স আছে'' । তারা বললেন, একতলা-দুতলার চাবি দিন। আমি বললাম, ওটা জি-হাঞ্জের অফিস, চাবি আমার কাছে নেই। ওরা সমস্ত ফার্নিচার ভেঙে ফেলল। টিংকুর সাথে সাথে আমাদের ড্রাইভার, কাজের লোক, বাসার ম্যানেজার, গ্রামের বাড়ি থেকে আসা কয়েকজন মেহমানকে ধরে নিয়ে গেল। তারা চাকরি ও চিকিৎসার জন্যে এসেছিলেন। আচ্ছা, এতগুলো গরীব অসহায় লোককে ওরা ধরে নিয়ে গেল কেন? ওদের কী দোষ? আমি ভোর ৫টায় ফজরের নামাজ আদায় করে এবিএম জাকিরুল হক টিটনকে সঙ্গে নিয়ে র্যাব-৩ এর অফিসে গেলাম। টিংকুর স্নেহসান্যিধ্যে থাকা টিটনই সেই বিপদের সময় মুরগির খাঁচা ভরা ট্রাকে চরে উত্তরা থেকে এসেছে সাহায্য করবে বলে।
বাইরে বসে আছি, এমন সময় র্যাবের অফিসার সুলতান-ই-নুর এলেন। প্রথমে কথা বলতে চাইলেন না, আমি নাছোড়বান্দা। তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, আমার অনেক কাজ আছে। বললাম, আমার বাসা আপনার এলাকার ভেতর। আমার স্বামীকে কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে আমি জানি না। আপনার কাছে এসেছি সাহায্য চাইতে। এবার তিনি ভেতরে ঢুকতে দিলেন। পরদিন পত্রিকা খুলে একেবারে মিথ্যা সম্পূর্ণ অলিক বানোয়াট কাহিনী দেখতে পেলাম। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সকলের নিষেধ উপেক্ষা করে আমি আপা মানে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সুধা সদনে দেখা করতে গেলাম। আপাকে বললাম, ওরা টিংকুকে বলির পাঁঠা বানাচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাচ্ছে। সাংবাদিকদের দিয়ে যা খুশী তা লিখিয়ে ওর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে চাচ্ছে। আমি এখন কী করব? আপা বললেন, “তোমাদের বঙ্গবন্ধু বছরের পর বছর জেল খেটেছেন, আর তুমি এত অল্পে ভেঙে পড়লে কী করে হবে!'' পরদিন প্রেসিডিয়ামের একটি সভায় আপা দাবি করেন, “কোনো নির্দোষ ব্যাক্তি যেন শাস্তি না পায়”। একেকটি দিন যেন একেকটি মাসের সমান। বিকেল হলেই বুকটা কেমন ধর-ফর করতে থাকে।
আওয়ামী লীগের মরহুম নেতা আব্দুর রাজ্জাক ফোন করে বললেন, ''একজন মৌলভী সাহেব দিয়ে ৪০ দিন পর্যন্ত ইয়াছিন সূরা পড়ানোর ব্যবস্থা করো'' । জাসদ সভাপতি ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফোন করে বললেন, “মুন্নি প্রয়োজনে আমি তোমাকে নিয়ে সর্বোচ্চ জায়গায় যাব, চিন্তা করো না''। আমি শুধু বললাম '‘আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, আর পারছি না’। নীচের তলায় ড্র্ইং রুমে বিভিন্ন খতম চলছে। আমার হাতে তসবিহ্। সবসময় আমি অজু রাখি, কখন কোন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় কে জানে। আমার ঘুম হয় না, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা। অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেললাম্। তিন দিনের দিন আমার এক আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে একটা কল এলো । অন্যপ্রান্ত থেকে বলে উঠলেন আমাদের স্বজন আমাদের অতি আপন এক সেনা কর্মকর্তা , ''এ রাতটা বড় কঠিন টিংকুর জন্য। কাল সকালে ওরা তাকে হার্ট ফেইলোর, স্ট্রোক অথবা ক্রস ফায়ার দেখাতে পারে, তোমরা সদকার ব্যবস্থা করো''। তিনি আরও বললেন, '' নেত্রীকে জানাও, এদের টার্গেটের শীর্ষে তিনি, এরা ধীরে ধীরে ওনার দিকে অগ্রসর হবে'' । আমি ঘটনাটি একটি চিরকুটে লিখে ইঞ্জিনিয়ার চন্দনকে দিয়ে ধানমণ্ডি ৩ নাম্বারে ড. আওলাদ হোসেনের কাছে পাঠালাম নেত্রীকে জানানোর জন্য।
হঠাৎ খবর এলো দুই কোটি টাকা দিলে আমার স্বামীকে ওরা ছেড়ে দেবে। এতো টাকা কোথায় পাব? টাকার জন্য সবাইকে ফোন করতে লাগলাম। এরপর আবার চিরকুট এলো, টাকার ব্যাপারটা সবাই জেনে গেছে, আমার টেলিফোন টাকা চাওয়া উচিত হয়নি। এখন ১ কোটি টাকা দিলে ওরা ওকে এমনভাবে টর্চার করবে যাতে তার কিডনি বিকল না হয়, অন্ধ না হয়। অর্থাৎ ১কোটি টাকার বিনিময়ে ওর সমগ্র অঙ্গ ঠিক থাকবে। আমি দিশা হারিয়ে ফেলালম। একদিকে আমার স্বামীকে ওরা দোষী বলছে, অন্যদিকে আবার সকলের সামনে জিম্মি করে গোপনে টাকা চাইছে। ৭ দিন পর মাঝরাতে আমার ড্রাইভার মিশির আলী, ম্যানেজার বেলাল এবং গ্রামের লোকদের ছেড়ে দিল। আমার মুখোমুখি বসে ওরা কাঁদতে লাগল। বলল, মধ্যযুগীয় কায়দায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে টর্চার করেছে। ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মুখের ওপর হাজার ভোল্টের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। মাথা নীচে পা উপরে দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি ভাবি, চোখে কালো কাঁপড় বাঁধে কেন? তবে কি ওরা ভয় পায়? ওরা কি জেনেশুনে অন্যায় করছে? ওরা ওদের ওপর অকথ্য র্নিযাতন করেছে। ওদের সারা শরীরে কালো কালো দাগ। তবে জানলাম টিংকু বেঁচে আছে। বাকী রাতটুকুন আমার চোখে আর ঘুম এলো না। পরদিন সবাইকে নিয়ে আমার বড় কালো গাড়িতে করে রওয়ানা হলাম ড. কামাল হোসেনের চেম্বারের উদ্দেশ্যে।
বুঝলাম আমার গাড়িকে ফলো করা হচ্ছে। সঙ্গে ছাত্র নেতা সালাউদ্দিন শেলু। প্রথমে ব্যারিস্টার তাঞ্জিব, পরে ব্যারিস্টার সারা হোসেনের সাথে দেখা করলাম। তাঁকে বললাম, ''এদের কী দোষ! এদেরকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, এদের মামলা আপনাকে লড়তে হবে''। সারা হোসেন রাজী হলেন। সন্ধ্যার একটু পরে ফোন এলো, কারা যেন ল-ইয়ারকে অনুরোধ করেছে মামলা না নিতে। ওরা নাকি দেশের ভালোর জন্য কাজ করছে। অল্পদিনের মধ্যে ওরা টিংকুকে ছেড়ে দিবে। সত্যিই কি দেশের ভালোর জন্য করছে! মনে মনে খানিকটা আশ্বস্ত হলাম।
দু-দিন পর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত, আরও দুইজন নারীর সঙ্গে আমরা উত্তরায় একটি ছয়তলা ভবনের ছাদে উঠে মোনাজাত করলাম। এদের একজনের স্বামী তখন কারাগারে। তার মুখ হাসি হাসি। তিনি কুড়িয়ে পাওয়া একটি খবরের কাগজ পড়ে শোনাচ্ছেন। নাজমুল হুদা, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী, তৈমুর আলম খন্দকার, গিরিলাল মোদি, সালমান এফ রহমান, মোহাম্মদ নাসিম, পঙ্কজ দেবনাথ, আওলাদ হোসেন, জমুনা গ্রুপের নুরুল ইসলাম বাবুলসহ আরও অনেককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বললেন, মুন্নি আপা আমাদের শেষ এদের শুরু। আমাদেরকে এতদিন অনেকে অনেক কথা বলেছে, এখন! সেই রাতেই টিংকুকে আমাদের মগবাজার বাসায় নিয়ে এলো। তারপর ক্যান্টনমেন্ট থানায়। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রথম আমার সুপ্রিম কোর্টে আসা। প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে তির্যক মন্তব্য কানে আসে “চোরের বউ।” বুঝলাম সবই সাজানো। টিংকু বলল, সেনা সমর্থনে তত্বাবধায়ক সরকারে দেশ চলছে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ভাবে। ৯০এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই হয়তো কেউ টার্গেট করে রেখেছিল আমাকে।
টিংকু বললো 'তবে চিন্তা করো না, হাবিয়া দোযখ থেকে এবার বেহেশতে এলাম'। মামলার দায়িত্ব দিতে বললো, তার ছাত্র রাজনীতির দুই সহযোদ্ধা বর্তমান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও ওবায়দুল হাসান শাহিনকে। এ বিষয়ে রাকশুর সাবেক জিএস ও বর্তমান বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে বললো। আদালত থেকে ওদেরকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে নেয়া হলো। জেলে ওর ঠিকানা হল সেল নম্বর ৭ বকুলে।
এসবি ক্লিয়ারেন্স ছাড়া টিংকুর সাথে আমার দেখা হবে না। মালিবাগ এসবি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স বের করতে লাগবে তিন দিন। ছাত্রলীগের অর্পণা অভয় দিয়ে বললো, '' চিন্তা করবেন না আমি সব ব্যবস্থা করে দিব।'' শুরু হলো আমাদের চিঠি চালাচালি। টিংকু চিরকুট পাঠিয়ে জানালো, ১টি বড় ফ্রিজ, ৪২ ইঞ্চি টেলিভিশন, ১টা মাইক্রোওভেন, ১ টি বড় টেবিল ফ্যান, ১টা রেডিও ও কফি মেকার সহ হাড়ি, পাতিল, প্লেট, গ্লাস, চামচ পাঠাতে। জবাবে লিখলাম, '‘পরিবর্তিত সময়ে, সময় এবং স্রোত দুটোই উল্টো দিকে বইতে শুরু করেছে, বর্তমান ক্ষমতাশীনদের মানুষ ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে, দেশের সুশীলরাও ওদের সঙ্গে আছে, চারদিকে সৎ-যোগ্য ও ত্যাগী মানুষদের জয়-জয়কার! এখন একটু সংযত হও''। দুদিন পর তার সঙ্গে দেখা হলো।
মনে হল খানিকটা শুকিয়ে গেছে। দুই সন্তানসহ আমাদের তিনজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল, বলল, অনেক অত্যাচার করেছে আমাকে বিনা কারণে। আমি নির্দোষ। এরা কি করতে চাইছে কেন চাইছে ওরা নিজেরাও জানে না। ওদের কোনো হোমওয়ার্ক নেই। ওরা ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য বুঝে না। খুব অল্প সময়ে এদের ওপর মানুষের আস্থা সরে যাবে। আধাঘন্টা শেষ। আমাদের চারদিকে লোক দাড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছে। কি করছি দেখছে কি বলছি শুনছে। বিষন্ন অস্রুসুজল নয়নে চলে এলাম। পরবর্তিতে দেখলাম, খুব অল্প সময়েই মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। ওদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠছে।
ধনী, গরীব, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, নেতা কর্মী সবার উপরেই জুলুম। দমবন্ধ মানুষ হাঁস-ফাঁস করছে। দ্বিতীয় বার দেখা করার জন্য একমাস অপেক্ষা করতে হবে। মতিঝিলের নিজের ব্রোকারেজ হাউজের অফিসে যাওয়া শুরু করি। অন্য একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম আমাকে বললেন, ‘আপনার স্বামী দোষী! আমি বলি ‘আপনি কি করে জানলেন? '‘পত্রিকা পড়ে’' সোজা-সাপটা উত্তর। আমি চিৎকার করে উঠি, পত্রিকায় যা কিছু ছাপা হয় সবই কি সঠিক? আপনি না ইঞ্জিনিয়ার! মনে মনে বলি সমাজের সামনে মানুষের চরিত্র হননে তারা সফল। পঙ্কজ দেবনাথের স্ত্রী মনিকা মনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি। অতিরিক্ত মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই সময়ের আগে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হচ্ছে।
আমি মনোয়ারা ক্লিনিকে গেলাম। মনিকা কাঁদছে ওর সাথে আমি, দিদি আমরা সবাই কাদঁছি আমাদের কষ্ট এক, কান্না এক। আমরা একে অপরের কষ্টের আত্মীয়। এই মুহূর্তে যে শিশুটির জন্ম হবে তার চারদিকে প্রতিকূল পরিবেশ। দ্রোহের আগুন কি শিশুটিকে স্পর্শ করছে, মনে মনে ভাবি। ফুটফুটে একটা মেয়ে হলো, মেয়েটির বাবা এখন জেলে। কবে দেখা হবে ওর বাবার সাথে? দ্বিতীয়বার টিংকুর সাথে দেখা করতে গেছি, ওর খুব মন খারাপ। বললো, তাকে ভীষণ চাপ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুল জলিল ও বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা দিতে। জানতে চাইলাম, তুমি কি ঠিক করেছো? সে বলল, ওদের কে পরিস্কার বলে দিয়েছে ওনারা তার নেতা। প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু মামলা করবে না। টিংকুর ওপর একদিকে মামলা করার চাপ অব্যাহত থাকলো অন্যদিকে তাকে বুঝানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ার হাবীব ফোনে অনুরোধ করতে থাকলেন। বুঝতে পারি আমি নজর বন্দী। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দেয় আমার ওপর চোখ রাখছে কেউ। আমাদের বাসায় কেউ আসতে চায় না। বিপদে পড়বে এই আশঙ্কায় অনেকে এড়িয়ে চলেন।
নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে আবার রোজ বিকেলে রমনা পার্কে হাঁটতে যাই। একদিন অপরিচিত একজন আমার পাশে পাশে হাঁটতে শুরু করলেন। তিনি আমায় প্রস্তাব দিলেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা দিলে আমার স্বামীকে মুক্ত করা সম্ভব। অবাক হয়ে তাকে বললাম, এতোবড় অন্যায় মিথ্যাচার আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিষয়টি নেত্রীকে অবহিত করার জন্য আমাদের নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর বাসায় গেলাম। তার স্বামী প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম বজলুর রহমানের সামনেই খুলে বললাম। তিনি নেত্রীকে জানাবেন বলে আমায় আশ্বস্ত করলেন। তবে নেত্রীর থেকে এই মুহূর্তে দূরে থাকার পরামর্শ দিলেন। তারা দু’জন বললেন, ‘মনে সাহস রাখো, আর কখনও কোনো অবস্থাতেই নিজেকে দূর্বল মনে করবে না।
এই মুহূর্তে তুমি দূর্বল হলে অন্যরা তোমাকে পেয়ে বসবে।’ পরে তাঁদের এই্ উপদেশ আমার চলার পথের পাথেয় হয়ে রইল। এর মাত্র অল্প কিছুদিন পর আজম যে চৌধুরী সহ অন্য আরও কয়েকজন নেত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিলেন। হয়তোবা বাধ্য হয়েই। তৃতীয়বারের মতো আমি টিংকুর সাথে দেখা করতে গেলাম, এবার অনেক বই নিয়ে এসেছি, বেশির ভাগই উপন্যাস। ও আমাকে বললো একটা ডিভিডি সেট আছে আমাদের কাছে। নতুন হিন্দি সিনেমা, আর বাংলা সিরিজ নাটক এর সিডি পাঠাও। ৭ নম্বর সেলে নতুন সদস্য যমুনা গ্রুপের নুরুল ইসলাম বাবুল, জনকন্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ। টিংকুকে বললাম, নুরুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে কথা বলবে না। ওনার পত্রিকায় তোমার বিরুদ্ধে আজেবাজে লিখছে। টিংকুর জবাব জোর করে লেখানো হয়েছে। এ নিয়ে মন খারাপ করো না।
তাকে জানালাম, ঢাকা শহরে এখন জোর গুজব দুই নেত্রীকে নাকি ভেতরে ঢোকাবে। দুই নেত্রীর মুখোশ পরে গানের সাথে এনিমেশন করে মোবাইল ফোনে ফোনে তাদেরকে বিদ্রূপ করা হচ্ছে। টিংকু বলল, ‘বড় দুই দলের লোক ছাড়া গণবিচ্ছিন্ন লোক দিয়ে দেশ চালানোর চিন্তা উর্বর মস্তিস্কের ফসল। এতে দেশের সর্বনাশ হবে’। চতুর্থবার টিংকুর সাথে দেখা করতে গেলাম, সাথে নিয়ে গেছি হাজীর বিরিয়ানী। এসবির লোক বললো, আপনি খেতে পারবেন না। টিংকু রেগে গেল। স্বভাবসুলভ চিৎকার করে বললো, অন্যরা যখন খায় তোমরা কি তখন চোখ বন্ধ করে রাখো? কত পাও ওদের কাছ থেকে? ওর আর বিরিয়ানী খাওয়া হলো না। ৭নং সেলটি একটা পুরনো বাড়ির মতন। পাশাপাশি কতগুলো রুম। ঘরের ছাদটি টিন দিয়ে করা। একটি মস্ত উঠোন। উঠোনের একদিকে পানি ধরে রাখার জন্যে আয়তকার একটা চৌবাচ্চা। চারিদিকে ছোটবড় গাছ। ৭ নম্বর সেলের পাশে রাস্তা। রাস্তার অপর পাশে ৫ তলা গার্মেন্ট। আমরা ৪ তলায় উঠলে ওদেরকে দেখতে পেতাম। জেলখানায় ওদেরকে দেখতে খাঁচার পাখির মত মনে হতো।
যতবার ৪ তলায় উঠেছি ততবারই মন খারাপ হয়েছে। তারপরও যেতাম। না যেয়ে থাকতে পারতাম না। পঞ্চমবার যখন দেখতে গিয়েছি তখন টিংকুকে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। ওদের সেলে নতুন যোগ হয়েছেন আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আবুল খায়ের লিটু, মীর নাসির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল, ইকবাল হাসান মাহমুদের ছেলে আবিদ। পুরনোদের মধ্যে আছেন গিরিলাল মোদী, তার ভাই গিরিশলাল মোদী, পঙ্কজ দেবনাথ, আওলাদ হোসেন, মাহমুদ হাসান বাবুল, তৈমুর আলম খন্দকার, কমিশনার কাইয়ুম, সিয়াম কয়েস সামী, মুন্সী আনোয়ার, মো. রাজ্জাক, হাসেম চেয়ারম্যান আর হাসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক করা হয়েছে ড. আনোয়ার হোসেন, ড. হারুন আর রাশিদ, ড. নীম চন্দ্র ভৌমিককে। টিংকু বলল, একটি টেবিল ও ছয়টি চেয়ার পাঠাতে হবে কার্ড খেলার জন্য। ও' বলল, চিন্তা করো না দেশের সমস্ত বড়লোকরাই এখন জেলের ভেতর। ওরা নিজেরাই কনফিউজড, ত্রাস সৃষ্টি করার জন্যেই সবাইকে জেলে পুরছে, দেশে ভীতির শাসন কায়েম করতে চাচ্ছে। ক্ষমতার মোহে অন্ধের মতো যা খুশী তাই করছে। যে মামলাগুলো দিচ্ছে এগুলোর একটিও ধোপে টিকবে না। সব সাজানো মামলা। যারা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে মদের মামলা দেয়, কোনোদিন মদ পান না করেও মদের মামলায় দেশ ছাড়া করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে তারা আর যাই হোক বেশিদিন নয়। বলেই দরাজ গলায় প্রাণখোলা হাসিতে ফেটে পড়লো।
হঠাৎ বলল, আমরা জেলখানার মসজিদটা সংস্কার করছি, অফিস থেকে টাকা পাঠিয়েছে। আমার রুমে হাই কমোড লাগিয়েছি। জেলখানাটা অনেক পুরানো। সংস্কার করা প্রয়োজন। আমি বুঝলাম টিংকু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। জেলখানার কিছু লোককে বলা হয় ‘ফালতু’। ফালতুরা প্রচণ্ড গরিব। অনেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ওরা জেলখানায় বড়লোকদের কাজ করে পয়সা আয় করে বাড়িতে পাঠায়। ৭ নং সেলে ফালতু’র কোনো অভাব ছিল না। আর কারারক্ষীদের বলা হয় '‘মিয়া সাহেব’'। জেলখানায় সময় কাটে না। এ জন্য সমান তালে চলে ধর্ম-চর্চা আর রূপ-চর্চা। ছেলেরাও মাথায় মেহেদী লাগায় আর মুখে মাস্ক। জেলখানার যুব মহিলা লীগের মেয়েদের কাছ থেকে ওদের কাছে লিস্ট এসেছে কিছু কসমেটিকস যোগাড় করে পাঠানোর জন্য।
কারণ জেলে মেয়েদের সাজগোজ করার উপর কোর্স করানো হয়। একই সাথে চলে ধর্ম-কর্ম। গিরিলাল মোদী, তার ভাই গিরিশলাল মোদী, পঙ্কজ দেবনাথ একসাথে পূজো করে কাঁককে খাবার দিতেন। অনেকে সকালে হাঁটতে বের হতেন। এটা শুনে আমি টিংকুকে দশটি হাফ প্যান্ট আর তিন জোড়া কেডস কিনে দিয়েছিলাম হাঁটার জন্য, কিন্তু ও হাঁটেনি। আবিদ নিয়মিত ব্যায়াম করত। শুক্র ও শনিবার ছাড়া যে কোনো সরকারি ছুটির দিনে আমরা জেলখানায় খাবার পাঠাতে পারতাম। একজনের জন্যে খাবার পাঠানোর নিয়ম। কিন্তু আমার প্রত্যেকেই এতো খাবার পাঠাতাম যাতে বিশজন লোক অন্তত সাতদিন খেতে পারে।
পরের দিকে বুঝেছিলাম পাঠানো খাবার ওদের হাতে পৌছার আগেই হাত বদল হয়ে যেত। দেশে বেশির ভাগ মানুষেরই টিন নাম্বার নেই, ইনকামট্যাক্স সার্টিফিকেট নেই। কেবলই অবৈধ সম্পদের পাহাড়, কেবলই কালো টাকা। অনেকে আবার জ্ঞানের অপ্রতুলতায় প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেনি বলে। ব্যাপক হারে ধর পাকড় চলছে সেইসাথে চারিদিকে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া। দেশের মানুষের চোখে ঘুম নেই। মানসম্মান হারানোর ভয়, নাজেহাল হওয়ার আশঙ্কা আর আতঙ্কগ্রস্থতা তাঁদের তাড়া করে ফিরে। টিংকুর কোম্পানির পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি তখন আমার কাছে। ওদের সাদা টাকার অভাব নেই। আমি টিংকুর অত্যন্ত কাছের মানুষ আমাদের আপনজন এস এম কামাল হোসেনকে অভয় দিলাম। আমাদের কোম্পানির প্যাডে উনার ইনকামট্যাক্স সার্টিফিকেট সম্পূর্ণ ঠিক করে দিলাম। ষষ্ঠবার গিয়ে দেখি ওকে কেমন যেন অস্থির মনে হচ্ছে। টিংকু বলল, ক্ষমতাসীনরা দেশের পূঁজিপতিদের ধরে এনে এলোপাথাড়ি মামলা দিচ্ছে যে গুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
আমি বললাম, এমন হলে পুঁজিপতিরাতো দেশে বিনিয়োগের পরিবর্তে বিদেশকেই নিরাপদ মনে করছে। এ টাকা দিয়ে দেশের লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হতে পারতো, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা সার্বিক পূঁজির বিকাশে তা বিরাট ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু এখন সব টাকা অন্ধকার পথে বিদেশে পাচার হয়ে যাবে ওরা কি বুঝতে পারছে না যে দেশের কত বড় ক্ষতি ওরা করছে? টিংকু বলল, অর্থনৈতিকভাবে দেশটাকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলছে। পঙ্গু দেশকে অন্যদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। সপ্তমবার যখন দেখা করতে যাই তখন ওর ডিভিশন হয়েছে কিন্তু ও অন্য কোথাও যাবে না। ৭নং সেলে থাকতে থাকতে কেমন একটা মায়া জন্মে গেছে।
এই সেলের বেশীরভাগ বন্দীই ভিভিশন পেয়েছে। কিন্তু ওরা কেউ যাবে না। এখানে ওরা একে অপরের কষ্টের আত্মীয়। সমস্ত অপমান অবমাননা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সাক্ষী। সেলে নতুন যোগ হয়েছে ইকবালুর রহিম। ও টিংকুকে খবর পাঠিয়েছিল টিংকু যেন ওকে ৭নং সেলে নিয়ে আসে। ডিআইজি শামসুল হায়দার চৌধুরীর ডাক নাম জুয়েল। জামালপুরে আমাদের কাছাকাছি বাসা। এ ছাড়া আমার ভাইয়ের জিগরী দোস্ত। জামালপুরে আমরা একসাথে বড় হয়েছি। এই সুযোগে আমি ওনার কাছে প্রায়ই অনেক আবদার করতাম। তার একটি ছিল ইকবালুর রহিমকে ৭নং সেলে নিয়ে আসা। টিংকু বলল, ‘ইকবাল সারাদিনই কান্নাকাটি করছে ওর মনটা বড় নরম। ইকবালকে ওরা চাপ দিচ্ছে বাহাউদ্দিন নাসিমের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য। ইকবাল ওর বউ আর তিনটি ছোট ছোট বাচ্চার কথা ভেবে রাজি হয়ে যাচ্ছে।
আমি ইকবালকে ভয় দেখিয়েছি, তুই মামলা করলে রাতের বেলা তোকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলব। এখন ইকবাল আরও বেশী কান্না কাটি করছে’। এবার আমার পঙ্কজ দেবনাথের সাথে দেখা হলো। উসকো-খুশকো চুল। চোখ দুটো লাল পরনে পুরনো ময়লা পাঞ্জাবী। বলল ভাবী দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম, তাও আবার প্রথম ৫০ জনের মধ্যে। ওর চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগল। আমি বললাম ধৈর্য ধরেন ওরা বেছে বেছে তাদেরকেই ধরছে যারা প্রতিবাদ করতে জানে, আপনি ভাল সংগঠক এইজন্যই আপনাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। পঙ্কজ দেবনাথ বললেন, জানেন আমার বাচ্চাদের দুধ কেনার পয়সা নাই অথচ ওরা মনিকার বিরুদ্ধেও মামলা করেছে। মনিকাকে দুটি বাচ্চা নিয়ে ১৩ মাইল হেটে কলকাতায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয়েছে। আমি বললাম জানি, টিংকু মনিকাকে সাহায্য করার জন্য লন্ডনের (বর্তমান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সৈয়দ সাজেদুর ফারুক এবং কলকাতার অনুপ কুমার সাহাকে ( তুলসি) জেল থেকে লুকিয়ে অনুরোধ করে লুকিয়ে টেলিফোন করেছে।
পঙ্কজ দেবনাথকে মালির কাজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৭নং সেলের সবাই ওর সাথে এই কাজটি করত। নতুন নতুন ফুলের চাড়া লাগাত। এতে ওরা প্রচুর আনন্দ পেত। আমাকে বলা হল বাগানে পানি দেওয়ার জন্য একটি পানি ঢালার ফোয়ারা কিনে আনতে। অষ্টমবার যখন আসি তখন আমাদেরকে বসতে বলে টিংকুকে খবর পাঠিয়েছে। আমাদের পাশের চেয়ারে আমানুল্লাহ আমান ও তিনটি ছেলে-মেয়ে ওরা ওদের বাবার সাথে দেখা করতে এসেছে। আমি আমার বাচ্চাদের বললাম, দেখ, ওদের বয়সও তোমাদের মতন কিন্তু ওদের বাবা-মা দুজনই জেলে। টিংকু এলো। সাথে আবিদ। আবিদদের আজ পূর্নমিলনী। ওর মা আর সারাও আসবে। ওদের তিনজনের আজ দেখা হবে। সারা ২০-২২ বছরের একটি মেয়ে। যে বয়সে মানুষ পুরো পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখে সে বয়সে ও জেলখানার চার দেয়ালে বন্দি। মেয়েটির চোখে মুখে অজানা এক আতঙ্ক। কী অপরাধ মেয়েটির? বাবা যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তার সাজা তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে কেন পেতে হবে? ওরা কি আলাদা সত্তা নয়?
টিংকু বলল, আবিদ খুব মন খারাপ করে থাকে। বিশেষ করে ওর বোনটার কথা ভেবে বলে, চাচা আমার বোনটার বিয়ে হবে না। ওদের আরেক সঙ্গী ব্যারিস্টার হেলাল সান্ত্বনা দিয়ে বলে চিন্তা করিস না, তোর বোনের যার সাথে বিয়ে হবে ওরাও নিশ্চয়ই এখন জেলাখানায় আছে ওরা জেলখানায় বসে বসে দুষ্টুমি করে নিজেদের ছেলে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে নিজেদের মধ্যে। নবমবার যখন যাই টিংকু নীচের দিকে তাকিয়ে আছে কথা বলছে না। খানিকটা চিন্তিত দেখাচ্ছে। আমি বললাম শরীর খারাপ? ও উত্তর দিল না। বলল, এতদিন হয়ে গেল কোনো মামলা দিতে পারল না, তুবও আটকে রেখেছে। দুই নেত্রীকে ওরা সাবজেলে রেখেছে। কিন্তু এরপর কী করবে সে ব্যাপারে ওদের কোনো নির্দেশনা নেই। দেশের সমস্ত মেধাকে জেলে বন্দি করে ওরা কী করতে চাইছে সেটা তারাই ভালো জানে।
আমি বুঝলাম জেলের চার ধেয়ালে ও হাপিয়ে উঠেছে। তবে নতুন একটা ঘটনা হলো, ও' আমাদের তিনজনের জন্য তিনটি শেফালি ফুলের মালা এনেছে। নিজ হাতে গেঁথে। আমার মেয়ে মালা পেয়ে খুব খুশী হলো। জেলখানায় থেকেও ওরা প্রিয় জনকে কিছু উপহার দিতে চায়, খুশী করতে চায়, সুখী মুখ দেখতে চায়। ওঁরা সবাই তখন প্রিয়জনদের চমকে দেওয়ার জন্য নিজ হাতে শেফালী ফুলের মালা গেঁথে আনত। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা নতুন একটা ইস্যু বের করেছে ইয়াবা সুন্দরী। রাত বিরাতে ওরা সুন্দরী মেয়েদের বাড়িতে হানা দেয়। সুন্দরী মেয়েরা কি শুধু গভীর রাতেই ইয়াবার ব্যবসা করে! নাকি ক্ষমতার উম্মক্ততায় ওরা যা খুশী তাই করছে।
আমরা সবাই নিশ্চুপ, প্রতিবাদের ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কারণ ওরা বিধাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে, সকল জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। ওরা নিজেদেরকে একেকজন বিধাতা বলে মনে করছে। এদের চোখ আছে, কিন্তু দূরদৃষ্টি নেই। কান আছে কিন্তু মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ সেখানে পৌছায় না। মুখ আছে কিন্তু চিন্তার গভীরতা না থাকায় সঠিক বাক্যটি বেরিয়ে আসতে পারে না। মন আছে কিন্তু মস্তিস্কের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে সঠিক সিদ্ধান্তটি সে গ্রহণ করতে পারে না। তাদের আবেগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইগোর কাছে। ওদের সাধ আছে সাধ্য নেই। সবচেয় বেশী যেটা নেই তা হচ্ছে নিজেদের ক্ষমতা এবং দৌড় সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা।
নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ওরা একবারেই অজ্ঞ। ওরা সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলেছে। গ্রাম এবং মফঃস্বল শহরগুলোতে বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ি– ঘর ভাঙছে, দোকান-পাট ভাঙছে, হাট-বাজার নষ্ট করছে। দেশের কোথাও দুর্নীতি কমেনি কিন্তু রেট বেড়ে গেছে। দেশে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। অর্থনৈতিক মন্দার চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে তার উপর আবার র্যাংগস ভবনের নীচে চাপা পড়ে এতগুলো হতভাগ্য দিনমজুরের মৃত্যু। মৃতদেহগুলো সরানোর ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হচ্ছে না। আত্মীয়-স্বজনের সামনে দিনের পর দিন বীভৎসভাবে চাপা পড়ে আছে কেন ? ওরা গরিব বলে ?
এই কি সু-শাসনের নমুনা? কোথায় আছে দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ? মাত্র কিছুদিন আগে যে ক্ষমতাসীনদের তারা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছিল আজ সেখানে শুধুই ধিক্কার। দুর্নিতিবাজদের ধরতে গিয়ে এক দল দুই হাতে টাকা কামাচ্ছে, এতে নিজেদের মধ্যে অনেকেই অসন্তুষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বিশেষ করে যেদিন শেখ হাসিনাকে অপদস্ত করে গ্রেফতার করে আদালতে নিয়েছে সেদিনই সেই সরকারের বিরুদ্ধে জনমত এক যায়গায় মিলিত হয়েছে। বাইরে সর্বগ্রাসী হতাশা আর ক্ষোভ তাদের গ্রাস করে রেখেছে। আগস্ট মাস, অফিসে কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করছি হঠাৎ দেখি প্রচণ্ড নিম্নমুখি প্রবণতা। কোনো কারণ নেই। পুঁজিবাজার নীতি-নির্ধারণে কোনো পরিবর্তন আছে বা আসছে বলেও আমার জানা নেই। তাহলে কি দেশের অবস্থা খারাপ? অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠল।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমানকে ফোন করতেই তিনি বললেন, বাসায় চলে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল হয়েছে। শুনতে পেলাম খেলার মাঠে ছাত্রদের সাথে সেনা সদস্যদের আচরণ নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ১৪৪ ধারা জারী হতে পারে। পথ-ঘাট সব ফাঁকা। যে যেদিক পারছে ছুটে পালাচ্ছে। আজ আমার গাড়িতে উঠতে ইচ্ছে হল না। রিক্সায় বাড়ি ফিরবো। ‘আহ! ’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের ভেতর কেমন একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র সুমহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সবকিছুর সূতিকাগার এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সময়ের সাহসী সন্তানেরা দেশের প্রয়োজনে ঠিকই গর্জে উঠেছে, প্রতিবাদ করছে, প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। ওদের এই আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষরাও এতে শামিল হলো। চলল তিন দিন ব্যাপী কারফিউ। ওদেরও মনে হয় টনক নড়ল। দেশের মানুষ অত্যাচারে অতিষ্ঠ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনো শাসন তারা চায় না।
এই অকাট্য সত্য কথাটি হয়তো ওরা অনুধাবন করতে পারছে। এই এক বছরে একাধারে ভয়াবহ ভূমিধ্বস, প্রচণ্ড খরা, বন্যা, তীব্র গরম ও তীব্র শীত। তার ওপর সিডরের মহাদুর্যোগ। প্রকৃতিও বুঝি ওদের এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষণা করেছে। ভুক্তভোগীরা সবাই বলছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। ‘আমাদের সময়’ পত্রিকায় একটা খবর বের হলো। ‘শেরাটন’ এর সামনে বাস পোড়ানোর মামলায় নেত্রীসহ আরো অনেকের সাথে টিংকুকেও আসামী করা হবে। রাতেই আমার মোবাইলে প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন এলো। ঐ প্রান্ত থেকে বলল, ‘আপনার স্বামীর অপকর্মের সমস্ত ভিডিও আছে আমাদের কাছে। আর বাস পোড়ানোর মামলায় তার ফাঁসি হওয়ার সম্ভাবনা’। আমি উত্তর দিলাম, ‘কোন সমস্যা নেই, আপনাদের ভিডিও দিয়ে যা খুশি করতে পারেন। আর বাস পোড়ানোর কথা বলছেন, টিংকু তখন দুই মাস দেশের বাইরে ছিল, পাসপোর্টে সীল আছে, আমি প্রমান করতে পারবো’।
চারদিক থেকে টাকার চাপ। কোথায় পাব আমি এত টাকা? জাতীয় চার নেতার মত জেলের ভেতরে সবাইকে ওরা ব্রাশ ফায়ার করে মারবে। নয়তো গ্রেনেড হামলা করবে। আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি। আমি সামসুল হায়দার চৌধুরীর কাছে গেলাম। উনি বলল, আমার জীবন থাকতে জেলের ভিতর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার প্রশ্নই ওঠে না। আমি নিশ্চিন্ত হলাম। ১০ই জানুয়ারী, ২০০৮ এ টিংকুকে ছাড়ার পর পুনরায় নাটকীয়ভাবে এরেস্ট করে জেলে ঢুকালো। এবার টাকার চাপ আরও দ্বিগুণ। কিন্তু আমার পক্ষে টাকা দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এপর্যায়ে আমি মইন ইউ আহমেদের সাথে দেখা করতে চাইলাম কিন্তু টিংকু কিছুতেই রাজী হল না। বলল খবরদার তুমি কারো কাছে যাবে না। শেষ পর্যন্ত ১০ই ফেব্রুয়ারী, ২০০৮ এ ও' ছাড়া পেল। নতুন করে শুরু হলো মেজর জাকিরের অত্যাচার। দিন নেই রাত নেই আমার মোবাইলে ফোন করে টিংকুকে দেখা করতে বলে। টিংকু দেখা করে এলো। ওর প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা। বলল, ‘আমি আর পারছি না’।ভিসা করা ছিল। আমি পরদিন ওকে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলাম। দীর্ঘদিন বিদেশ থাকার পর একসময় ও ফিরে এলো। পুরো শরীর চেকআপ করিয়েছে শুধু মাথা ছাড়া। ২০০৮ এর ডিসেম্বরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলো। দেশে দিন বদলের হাওয়া লেগেছে। দেশের সামনে ‘ভিশন ২০২১’। ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। সবকিছুর পরিবর্তন হবে। উন্নত থেকে উন্নততর হবে। ভালো থেকে ভালোতর হবে। কিন্তু ভালো যাছে না টিংকুর শরীরটা।
ওর মন মেজাজ চিন্তা-চেতনা কোন কিছুই আগের মত নেই। কেমন একটু এলোমেলো। মাঝে মাঝে ভয় হয়, আবার ভাবি অত বড় একটা ধকল গেছে পরিবর্তন হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু পরিবর্তনটা যে এতো বেশি হয়ে গেছে ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি। টর্চার সেলে ওকে যে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে, ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে তার ফলস্রুতিতে ওর ব্রেইনের কোষ মিউটেশন হয়ে টিউমার, টিউমার থেকে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। পরিনাম ওর এই অকাল মৃত্যু। আমি এখন কার শাস্তি চাইব? কার কাছে চাইব? কি অপরাধ ছিল টিংকুর? কেন ওকে বাঁচতে দেওয়া হলো না? ১/১১ তে আমরা যারা বিনা কারণে অত্যাচারিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি তাঁরা সমস্বরে বলতে চাই '' বিচার হোক''।
কারণ ভুক্তভুগি মাত্রই জানেন এর ভয়াবহতা দহন কষ্ট আর কান্নার ইতিহাস। ৯ বছর পর নেত্রী যখন মুখ খুলেছেন আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। যে কোন অন্যায়েরই বিচার হওয়া উচিত। আর ১/১১ র ভয়াবহ রূপ দেশের আর্থিক ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের উন্নত দেশে সেকেন্ডহোম রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। অনেককে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছে , বাধ্য করেছে। দেশের টাকা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দেশে উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করেছে। সেই সময়ে জোর করে ব্যবসায়ীদের, রাজনিতিবিদদের দেশ ছাড়াই করেনি, তাদের সন্তানদের নাজেহালই করেনি, জোর করে টাকা আদায় করেছে। কিছু জ্ঞানপাপী মানুষের উর্বর মস্তিষ্কের ফসল ১/ ১১ আমাদের দেশটিকে পিছিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতার রোষে দেশের আপামোর মানুষের শান্তি হরণ করে ভয়- ভীতি দেখিয়ে তাঁদের দুঃশাসনের পথ প্রশস্ত করেছে। তাঁদের অন্যায় অত্যাচার আর জোড়-জুলুমে অসহায় সাধারণ মানুষরাও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছে । ওই সময়ে একমাত্র নেত্রীর দেশে থাকার সাহসী সিদ্ধান্ত তাঁর অটল অবস্থান ওদের সমস্ত ষড়যন্ত্রের পথ নস্যাৎ করে দিয়েছে। সময় প্রমাণ করেছে দুঃসময়ে তাঁর নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ সঠিক ছিল।
তাই আপনার কাছেই সবিনয় নিবেদন, ১/১১ র ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ শক্তিগুলোর মুখোশ উন্মোচন করুন। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, মানুষের অধিকার হরণ করেছে, চরিত্র হরণ করেছে, জুলুম নির্যাতন করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করুন। আমাদের না বলা কষ্ট ও বেদনার কথা দেশের মানুষ জানুক। আমাদের লাঞ্ছনার ইতিহাস নীরবে নিভৃতে কেঁদে ফিরবে আর কত কাল! ২২ জানুয়ারির এক তরফা ক্ষমতা আকড়ে থাকার বিএনপি দলীয় নির্বাচনের বিকল্প ১/১১ হয়তো অনিবার্য ছিল। কিন্তু মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হননের মাধ্যমে ক্ষমতার দাম্ভিকতায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মানুষকে নিগৃহীত, লাঞ্ছিত ও মিথ্যে মামলায় কারা নির্যাতন ও দেশ ত্যাগ করার এখতিয়ার তাদের ছিল না। সেদিনের লাঞ্ছিতদেরই নয় ১/১১ এর কুশীলবদের বিচার এখন সময়ের দাবি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, ঢাকা স্টক একচেঞ্জ
বিবার্তা/মহসিন