বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বর্তমান সরকার আমলা বা পুলিশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চারপাশে ‘শূন্যতা’ সৃষ্টি হওয়ায় শেখ হাসিনার সামনে ‘ভয়াবহ দিন’ অপেক্ষা করছে।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে কিছু কথা লিখতে হচ্ছে। আসলেই কি সামনে ‘ভয়াবহ দিন’ অপেক্ষা করছে। চক্রান্তকারীরা দলের মধ্যে কৌশলে ৭৫-এর পর থেকে রূপ পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে এদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭৫-এর পর রাজাকারদের দোসররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই তারা তাদের সুদরপ্রসারি পরিকল্পনা এঁকেছিল মুশতাকের মত চরিত্রধারী যারা আওয়ামী লীগে ছিলেন তাদের দিয়ে ইমিডিয়েইট পরিকল্পনা করেছিল ইন এনি কন্ডিশন সারা বাংলাদেশে ৭১-এর চিহ্নিত পরাজিত যারা তাদেরকে একটু আড়ালে রেখে তাদের নিকটাত্মীয় যাদের বয়স কম তাদের একটি অংশকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের মধ্যে ডুকিয়ে এমনভাবে তালিম দেয়া হয়েছে যে আওয়ামী লীগের ছেলেদের চেয়ে তাদের ভূমিকা আর এক ধাপ এগিয়ে।
পঁচাত্তরের পর ২১ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে ছিল-এই সময় ক্ষমতাসীনরা সর্বক্ষেত্রে তাদের মনোনিত লোক নিয়োগ করেছে আর যাদেরকে এখনও আমরা চিনতে পারছিনা। সেই ৭১-এর চিহ্নিত পরাজিত শত্রুদের একটি অংশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আসীন, ব্যাটেবলে মিল হচ্ছেনা জ্বালাও পোড়াও করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করেও আওয়ামী লীগের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ৭১-এর চিহ্নিত পরাজিত শত্রুরা আগে থেকেই জানে এমন সময় আসবে বাঙালি জাতি আমাদের বিচার করবে এবং সময় বিবেচনায় আমাদের কারো কারো সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড হবে তার পর আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী কি সেই পরিকল্পনাও তারা ঠিক করে রেখেছে যা আজ কাজে লাগানোর জন্য কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চারপাশে ‘শূন্যতা’ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
চারপাশে ‘শূন্যতা’ সৃষ্টি হওয়ায় শেখ হাসিনার সামনে ‘ভয়াবহ দিন’ অপেক্ষা করছে। চক্রান্ত করে শেখ হাসিনার কাছের লোকদের সরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। ‘প্রয়োজনে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে। তাসের ঘরের মতো কিছু ভেসে যেতে দেওয়া হবে না।’অধ্যাপক আনোয়ার বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আশে পাশে যেভাবে শূন্যতা সৃষ্টি করে তাকে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় শেখ হাসিনার চারপাশে শূন্যতা তৈরি করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার পাশে যেসব সিভিলিয়ানরা ছিলেন, চক্রান্ত করে তাদেরকে সরানো হচ্ছে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন, জামায়াত শিবির রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের আমাদের প্রয়োজন নেই। তারপরও এরা এখন নতুন পরিকল্পনায় আওয়ামীলীগের পতাকা তলে-দলে দলে যোগ দিচ্ছে কিভাবে? আবার দলকে এবং দেশকে ৭৫এর পরবর্তী সময়ের মত 'মানি ইজ নো প্রবলেম' বলে রাজনীতিকে আবার 'ডিফিকাল্ট' করে আওয়ামী লীগের রূপ ধারণ করে জামায়াত শিবির রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা অবৈধ টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ডুকে আন্তর্জাতিক আদলতে বিচারের মাধ্যমে যে সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে তাদের বদলা নিতে তারা এখন বদ্ধ পরিকর। এরা সুবিধাবাদী চরিত্রহীন নেতাদের মাধ্যম আওয়ামী লীগের পতাকা তলে-দলে দলে যোগ দিচ্ছে। এমন কি বিভিন্ন কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে বড় বড় সম্পাদকীয় পদে ঢোকার চেষ্টা করছে। নব্য আওয়ামী লীগ সেজে ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সম্পাদকদের মোটা অংকের বিনিময়ে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হতে চলেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সৃষ্টিকর্তা আপনার দীর্ঘায়ু দিক আর মঙ্গল করুন। আপনার হয়তো আর কিছুরই দরকার নেই, কিন্তু আমাদের অনেক কিছুর দরকার আছে আপনাকে দিয়ে, আপনি বেঁচে থাকুন আপনার জন্য নয়! আমাদের জন্য, দেশের জন্য। আমাদের মত সাধারণ কর্মীরাই আপনার পাশে আছে, ছিল এবং থাকবে। সুবিধাবাদী হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশকারীরা কোন দিন আপনার নয় শুধু সুবিধার জন্য তারা বার বার চক্রান্ত করছে। দলের নিবেদিত কর্মীরা বার বার আহত হয়ে কইতেও পারেনা আবার সইতেও পারেনা। যেভাবে সিভিলিয়ানদের চক্রান্ত করে সরানো হচ্ছে। একই সাথে আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীদের চক্রান্ত করে আপনার কাছ থেকে, দল থেকে দূরে সরানো হচ্ছে। বিষয়টি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিনা, এখন সঠিক সময় কি-না! কেন জানি একটা নীরব ষড়যন্ত্রের গন্ধ আসছে, চারপাশে ‘শূন্যতা’ অনুভব হচ্ছে আমাদের সামনে কি আসলেই ‘ভয়াবহ দিন’ অপেক্ষা করছে। সাহস করে লিখছি, যেহেতু আমাদের কাউন্সিল আসন্ন, আগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কোন পরামর্শ নয়, জয়বাংলা শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে বেঁচে আছি। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ৯ বছর বয়সের এক মা-হারানো সন্তান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন আওয়ামী লীগের কর্মীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসা থেকে লেখা। আপনার নির্দেশের বাইরে বা দলের আদর্শের বাইরে যারা কাজ করছেন-তাদেরকে হয়তো আমরা জানি না, আপনি বার বার সতর্ক করে বলেন, জামায়াত শিবির রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের আমাদের প্রয়োজন নেই দলে আনার, তারপরও আপনার অজান্তে আনা হচ্ছে। আপনাকে রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে হয়তো বা আওয়ামী আদর্শের লোক বলে।
এই বিষয়টি এতই ভয়ানক যা আপনাকে না বলে পারলামনা। নতুন করে একটা সুদর প্রসারী পরিকল্পনার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখন আর জামায়াত-শিবির নেই, এরা সবাই আওয়ামী লীগের পতাকা তলে-দলে দলে যোগ দিচ্ছে আমাদের কিছু নেতাদের মাধ্যমে। এর পরিণাম কি হবে, আপনার নিশ্চয়ই অনুমেয় বেশি বলার প্রয়োজন নেই। আর যাদের মাধ্যমে এরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে এরা কারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? এ সংবাদ এনএসআই আর ডিজিএফআইকে দিয়ে সংগ্রহ করলে হয়তোবা সঠিক হবে না। বঙ্গবন্ধুর সময়কার আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা এখনও জীবিত। তৃণমূলের সংবাদ এদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করলে ভাল হয়। এরা নীরব হয়ে গেছে হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে। শুধু নৌকায় ভোট দেয় আর আফসোস করে, যখন দেখে ৭১-এর পরাজিত শক্ররা যারা অত্যাচার করেছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখন আর্টিফিশিয়াল জয়বাংলা শ্লোগান দিচ্ছে আর তারা ৭১-এর পরাজয়ের বদলা নেবার পায়তারা করছে। ৭৫-এর পরের আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে তৃনমূলের সংবাদ সংগ্রহ করে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে যোগদানকারীরা অন্য মেরুর।
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক চাপ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দলটির বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রেক্ষাপটে জনাব শাহরিয়ার করিব সেদিন বলেছিলেন- জামায়াতিরা ঢুকছে, সতর্ক হন: জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিকে আপনি বলছেন, জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যদিকে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে, তাদের ফুল দিয়ে গ্রহণ করা হচ্ছে।" -এ দলটি বিএনপিকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে, বিএনপির জামায়াতীকরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন তারা আওয়ামী লীগের শরীরের ভেতরে মওদুদীবাদের বীজ ঢোকাতে চায়। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ড সতর্ক না হলে দেশের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।” বলে তিনি যে মন্তব্যটি করেছিলেন বিষয়টি অত্যন্ত জরুরিভাবে মোকাবিলা না করলে চক্রান্তকারীরা সফল হবে।
যে সকল জামায়াত শিবির রাজাকার তাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে দূরে সরানোর সময় এখন। প্রবাসের যারা আওয়ামী রাজনীতি করেন তাদের পূর্ব পুরুষের (রাজাকার আলবদরদের) আসল চেহারা জনসম্মুখে প্রকাশ করার সময় এখনই। দেশে এই সকল রাজাকার সন্তানরা সক্রিয় হতে পারেনি কারণ, তাদের পূর্ব পুরুষের ৭১-এর অপরাধের কথা কেউ ভুলেনি, এদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এদেরই ৭১/৭৫ পরবর্তী প্রজন্ম প্রবাসে এসে সহজে ঢুকে পড়েছে-দলের বড় নেতা হয়েছে। এদের স্থানীয় ইউনিয়ন থেকে তার রাজনীতি করার উদ্দেশ্য জেনে হউক আর না জেনে হউক প্রবাসে সহজে দলে ঢোকানো হয়েছে। এরা এক সময় লুটপাটের রাজনীতিতে শামিল হবে। একই পরিবারের মানুষ জামায়াত শিবির রাজাকার মওদুদীবাদের দর্শনের চরম ভক্তরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কি তাদের চরিত্র বদলিয়ে ফেলবে?
বিদেশে বসে যারা এই নকশা বাস্তবায়ন করছে তার প্রমাণ মিলে যখন আপনার পাশে ৭৫ চক্রান্তকারীদের সন্তানরা কৌশলে প্রবাসে এসে বিভিন্ন রাজাকারদের সন্তানদের নিয়ে আপনার বা দলের অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে ছবি উঠায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে দেশে বিদেশে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি করে চলেছে। রূপ পরিবর্তন করে প্রবাসে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে আর আওয়ামী লীগের রূপ ধারণ করে আর্টিফিশিয়াল জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে জামায়াত শিবির বিএনপির সন্ত্রাসীদের সাথে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে, আর তাদের ফুল দিয়ে গ্রহণও করা হচ্ছে। এত সবের পরও কি আমরা ধরে নিতে পারি না যে আসলেই সামনে ‘ভয়াবহ দিন’ অপেক্ষা করছে?