কেউ যদি আমাকে রাখঢাক ছাড়া সাদামাটা ভাষায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কনসেপ্ট সম্পর্কে বলতে বলেন, তাহলে আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে দেবো, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি চলমান প্রক্রিয়া, একটা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জার্নি। যাকে বলে ‘ফিলোসফি অব রেভ্যুলেশন’। এই প্রযুক্তি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।’
আমরা সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী। তাই কোনো পরিস্থিতির প্রতিকূলতা বর্তমান সরকারের ডিজিটাল চেতনাকে হারাতে পারবে না। বড় স্বপ্ন দেখতে সত্যিই সাহস লাগে। আমি স্বপ্ন দেখি এদেশে একদিন গুগল-ফেসবুকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে তরুণরা। তবে চাওয়া ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের সফটওয়্যার ও সেবা পণ্যের রফতানি ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা।
দেশের মোট জনশক্তির অর্ধেক নারী, আমি মনে করি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও এ দেশে নারীর ক্ষমতায়ন করা সম্ভব। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ৬টি ডিজিটাল প্রশিক্ষণ বাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।
আমরা থেমে থাকিনি। যুবসমাজের জন্য আউটসোর্সিং ও অ্যাপস বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। নিজ দেশের প্রয়োজন মেটাতে এবং পশ্চিমা বিশ্বে তথ্যপ্রুযক্তিতে দক্ষ জনবল (প্রোগ্রামার) পাঠাতে স্কুল পর্যায় থেকে প্রোগ্রামার খুঁজে বের করতে শুরু করেছি জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা।
দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমরা কয়েকটি বিষয় নির্দিষ্ট করেছিলাম, যেমন কানেক্টিটিভিটি পৌঁছে দেওয়া। আমরা ইনফো সরকার ২ -এর মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, ফাইবার অপটিক হাইস্পিড ক্যাবল দিয়ে।
এটা ঠিক হাইটেক পার্ক ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। কারণ হাইটেক পার্ক হবে ডিজিটাল ইকোনোমির ব্যাকবোন। সেটার কাজ আমরা শুরু করেছি সফলভাবে। এখন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।
দেশবাসীর কাছেও এটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার, প্রযুক্তিকে সাধারণের নাগালের মধ্যে আনার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সতর্ক অধ্যবসায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমি ডিজিটাল বাংলাদেশের আইকন হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৯৯ সালে পাস হওয়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাই টেক পার্ক প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করতে চাই। কারণ হাই টেক পার্ক ছিলো আমাদের স্বপ্নের একটা প্রকল্প। শেখ হাসিনা তার প্রথম আমলে এই প্রকল্পের কাজ করতে চেয়েছিলেন।
মাঝে অন্য সরকার এসে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়নি। এরপর বাধা হয়ে দাঁড়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা আর নেই। আমি আগাগোড়া নিপাট আশাবাদী মানুষ। আমি জানি আমাদের দেশ হচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম ফ্রি ল্যান্সারের দেশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এটি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের মডেল হিসাবে বিবেচিত হবে।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ দরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি জেলায় একটি আইটি ভিলেজ বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারের পরিত্যক্ত ভবন ও জমিতে সফটওয়্যার টেকনোলজি কেন্দ্র করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
আমরা চাই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলার এক লাখ গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠুক। দেশ একটি সমৃদ্ধ গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাক। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে (ফ্রিল্যান্সার টু এন্টারপ্রেনার) তাদের জন্য খুব কম সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং- প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আমি জানি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদের ডিজিটাল মানবসম্পদ লাগবে। সেটাতে আমরা সাফল্যের সঙ্গে এগোচ্ছি। প্রতি বছর আমরা প্রায় ৫০ হাজার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।
আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সারাবিশ্বের তরুণ প্রজন্মের একটা পরিচিতি গড়ে তুলতে চাই। বলতে চাই আমরা অত্যন্ত মেধাবী, দক্ষ ও কম্পিটিটিভ প্রাইস। এভাবেই আমরা আমাদের বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই। তথ্যপ্রযুক্তি আউটসোর্সিং সেখানে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আমরা ইতিমধ্যে ডিজিটাল প্রশিক্ষণ বাস প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যাতে থাকছে ৬টা বাস। বাসগুলো আগামী তিন বছরে আড়াই লাখ নারীকে প্রশিক্ষণ দেবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে আধুনিক প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই সেখানে এই বাসগুলো পাঠানো হবে। নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বের জন্য তৈরি করার চেষ্টা করা হবে।
২০৪১ সালকে টার্গেট করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই চলমান প্রক্রিয়ায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ তরুণদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। আইসিটি সাসটেইনেবল অ্যাওয়ার্ডও তরুণদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। আমাদের তরুণরাই এই ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
লেখক: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী