‘চাপ’ আর ‘চাপা’ নিয়ে ‘চাপাচাপি’

‘চাপ’ আর ‘চাপা’ নিয়ে ‘চাপাচাপি’
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:০৭:২৭
‘চাপ’ আর ‘চাপা’ নিয়ে ‘চাপাচাপি’
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+
'জীবনটা গল্প নয়, গল্পের চেয়েও অদ্ভুত'- দার্শনিক তত্ত্ব কপচাতে হলে এ জাতীয় হাইথট ডায়ালগ হয়তো জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশের সার্বিক চাপাবাজি ঠিক কতোটা অদ্ভুত তা একমাত্র খোদা মালুম। 
 
একটি দেশের পুনর্গঠনের জন্য ৪৫টি বছর যথেষ্ট কিনা জানি না। শুধু এতোটুকু জানি, আমাদের দেশের সরকারি আর বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মাত্র দুটো  'চাপ' আর 'চাপা'। ক্ষমতায় থাকুন আর রাজপথে থাকুন, কুচ পরোয়া নেহি! 'চাপ' আর 'চাপা' থাকলেই হলো। মূলত 'চাপ' আর 'চাপা' নিয়েই চলে আমাদের রাজনীতির সংসার। 
 
কথায় বলে, স্বর্গ, মর্ত্য আর পাতাল নিয়েই নাকি আমাদের ত্রিভুবন। আবার হিন্দু পুরাণ মতে, পাতালের নাকি সাত স্তর - অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাল। পাতাল সবচেয়ে নিচের তল। তবে বাংলা বাকরীতিতে 'রসাতল'ই কেন সর্বনাশের চরম সীমা হয়ে গেছে, তার জবাব ভাষাতাত্ত্বিকরাও দেননি। তবে সবাই কমবেশি বুঝতে পারছি, আমাদের মেধা ও মনন আজ রসাতলেই ফেঁসে গেছে। 
 
দেশের রাজনীতিরও প্রকৃত চিত্র এটাই। সুতরাং যা হবার তা-ই হয়। অগণতান্ত্রিক তেলের বন্যায় ভেসে প্রকৃত গণতন্ত্র হেঁচকি তোলে। 'চাপ' আর 'চাপা' সমান তালে চলে। আর অবৈদান্তিক গর্দভগণ জোরেসোরে চেঁচান : ‘আমরা কারা- ‘চাপাবাজ,’ ওরা কারা-  ‘চাপাভাঙা'। 
 
সত্যিই আমাদের দেশ চাপাবাজির উর্বর ক্ষেত্র। এদেশে চাপাবাজির প্রসার দেখে খোদ গোয়েবলসও সমাধিতে শুয়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন। মাত্রাজ্ঞানহীন চাপাবাজিই এখানে জাগতিক প্রসার বাড়ায়। চাপাবাজি জানলে মিঁউমিঁউ করতে হয় না। বেড়াল সেজে ঘরের কোণে সঙ্গোপণে কল্কেও টানা লাগে না। আবার চাপাবাজির এই দেশে দুই মেরুর চাপাবাজের কোলাকুলিও বৈধ! এবার বুঝুন, ঠেলা সামলান। মনে রাখবেন, যা ভাঙা যায়, তা-ই 'আইন'। 
 
চাপাবাজি আমাদের নেতাদের ভাষণে ত্রিমাত্রিক দর্শন এনে দিয়েছে। তাই সবহারার দল ডাস্টবিনের দিকে দৌড়ায়। আর ডগ স্কোয়াডের মহামান্য কুকুর সদস্য চেয়ারে চার পা তুলে মুরগির রান চিবায়। নেতাদের যান্ত্রিক ওয়াদাগুলো সচিবালয়ের মহাফেজখানা অথবা পত্রিকার পৃষ্ঠায় কালো অক্ষরে বন্দি থাকে। 
 
আপত্তি তুলে লাভ নেই ভেইয়া! চাপাবাজির তোড়ে আপনি নিজেই খড়কুটোর মতো ভেসে যাবেন। বরং এই বেশ ভালো আছেন। দেশের এক খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী আমজনতার (ম্যাঙ্গো-পাবলিক) উদ্দেশ্যে বলেছেন, ছুঁচো (চিকা) দেখলে বলবেন: 'বিরোধী দলের সেই হাতিটি না খেতে পেয়ে এখন শুকিয়ে গেছে'। আর ডগ স্কোয়াডের কুকুর সদস্য দেখলে বলবেন : 'সরকারি দলের সেই ছুঁচোটি মুরগির রান খেতে খেতে এখন সারমেয় আকৃতি ধারণ করেছে'। 
 
রঙ্গমঞ্চের ঠিক পেছনেই আগুন লেগেছে। ভীতসন্ত্রস্ত ভাঁড় স্টেজে ছুটে এসে বলছে : 'জনাব আগুন লেগেছে, আগুন। যে যার জান বাঁচান'। দর্শকরা ভাবছেন, এটাও বুঝি এক ধরনের সরস তামাশা। অতএব হাততালি পড়ছে। ভাঁড় যতই কাকুতি-মিনতি করে 'আগুন আগুন' বলে চেচাচ্ছে, দর্শকরাও ততই জোরে হাততালি মারছে। 
 
ঠিক এমনি করেই আমাদের জাতীয় জীবনে আজ আগুন লেগে গেছে। আর তামাশা মনে করে আমরা হাততালি মারছি। অতএব চাপাবাচির জয় হোক। জয়তু চাপাবাজ! জয়তু চাপাবাজি! দম মারো দম!
 
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com