সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি তথ্য বাইরের দেশগুলোতে খুব কমই নজর কেড়েছে। সেটি হলো বাংলাদেশে গত বছর সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে, এটাই তার প্রমাণ। কারণ নিজেদের অর্থ ঢালতে বাংলাদেশকেই তারা সঠিক জায়গা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
চলতি বছরের মার্চে আমেরিকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ বাংলাদেশী মনে করে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুব ভালো কিংবা মোটামুটি ভালো, ৭৭ শতাংশ মনে করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুস্থির আছে, নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ব্যাপারে আশাবাদী ৭২ শতাংশ মানুষ।
গতবছর বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগ বাড়ার মূল মন্ত্রটি ছিলো তৈরী পোশাক শিল্পের প্রসার। তবে বিনিয়োগকারীরা তেল, গ্যাস, ব্যাংকিং, টেলিকমিউনিকেশন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতেও অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগের বিষয়ে অনেক বেশি উদার। এখানে অনেক খাতে ১০০ শতাংশ হারেও বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আবার ব্যবসায় উঠিয়ে নেয়ারও সুযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিয়মিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। যার হার ৬ শতাংশেরও বেশি। বিশ্বের মধ্যে প্রবৃদ্ধি বাড়ার এ হার উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ১৮০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সাল নাগাদ এর আকার বাড়বে ৩২২ বিলিয়ন ডলারে। এ প্রবৃদ্ধি তৈরী পোশাক শিল্পের জন্যই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ যতটুকু জানে, তার চেয়ে এটা আরো বেশি গতিশীল একটা শিল্প। অধিকাংশ মানুষ বিশ্বে বাংলাদেশকে টি-শার্ট রফতানিকারক হিসেবে জানলেও বাংলাদেশের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা এমন উন্নত মানের পোশাক তৈরি করেন; যা ইউরোপের সেরা বুটিকগুলোতে বিক্রি হচ্ছে।
গার্মেন্ট শিল্পে অধিকাংশ কর্মীই নারী, যা সমাজে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে। একই সাথে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনেও সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর ২৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে; যা ২০১৫ সালের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।
২৫ বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৬ বছর; বর্তমানে যা ৭০ বছরের কাছাকাছি। এ হার ভারত ও পাকিস্তান থেকে চার বছর বেশি। ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত গরিব মানুষের সংখ্যা ২৬ শতাংশ কমেছে। ৬৩ মিলিয়ন থেকে এ সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নে নেমে এসেছে। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশ, এক দশক আগে যা ছিল ৪০ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে শ্রমিক আয় বেড়েছে, শিশু জন্মহার কমেছে, নির্ভরশীলতার হার কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই অর্থনীতির এ প্রসার শুরু হয়েছে। সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই এ প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত রয়েছে। শেষ কথা এটাই বলবো যে, বাংলাদেশের সফলতার গল্প সবেমাত্র শুরু হয়েছে, যা চলতে থাকবে। সূত্র: ডিপ্লোম্যাটিক ক্যুরিয়ার। অনুবাদ করেছেন বিবার্তার সাব এডিটর ফারজানা আক্তার
লেখক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।
বিবার্তা/ফারিজ/কাফী