বিদ্যুতের যাওয়া-আসা এবং বাস্তবতা

বিদ্যুতের যাওয়া-আসা এবং বাস্তবতা
প্রকাশ : ১১ মে ২০১৬, ০৮:৫৮:৪২
বিদ্যুতের যাওয়া-আসা এবং বাস্তবতা
নজরুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+
গত মাসের শেষ দিকে গ্রামে গিয়েছিলাম। বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়াতে আমারও বেশ বিরক্তির উদ্রেক হয়েছিল। সন্ধ্যার পর থেকে ৩/৪ বার লোডশেডিং। কখনো কখনো ২/৩ ঘণ্টা একটানা বিদ্যুৎ থাকে না। রাজধানীতেও বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে, তবে এতটা ঘন ঘন নয়, লোডশেডিংয়ের স্থায়িত্বও একেবারে অসহনীয় নয়। 
 
একটা বাস্তবতা হলো, মানুষের বিদ্যুৎ ক্রয়ের সক্ষমতা যতটা বেড়েছে সে তুলনায়  উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে বেশ কিছুটা ফারাক রয়ে গেছে। রয়েছে সরবরাহ লাইনের ত্রুটি। সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের দায়িত্ব অবহেলা তো রয়েছেই।
 
বিদ্যুৎ ব্যবহারের চালচিত্রও বদলে গেছে। উপজেলা পর্যায়ে কেউ আগে এসি দেখেছেন কিনা জানি না। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, উচ্চ-মাঝারি ব্যবসায়ী সবার বাড়ি ও অফিসে এসি’র সংযোগ দেখতে পাবেন। আমার বাড়ি যে উপজেলায়, সেখানে অন্তত গোটা পঞ্চাশেক অফিস ও বাড়িতে এসি’র সংযোগ দেখতে পেয়েছি। বাস্তবে এ সংখ্যা  হয়ত আরও অনেক বেশি। 
 
শহরে এসে জানলাম এ বছর রেকর্ড পরিমাণ এসি বিক্রি হয়েছে এবং হচ্ছে। গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবার বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা, টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটর আছে। গ্রামের সামর্থ্যবানদের বাড়িতে এসিও চোখে পড়েছে। এসি বিক্রির আউটলেটে গিয়ে দেখুন, ১০ হাজার টাকা গুণলেই এসি মিলছে। সঙ্গে আরেকটি উপদ্রব যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন। শহরে বন্ধ হলেও গ্রামের রাস্তায় শত শত ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেল, এসব ব্যাটারির চার্জ দেওয়া হয় মূলত বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ থেকে।
 
শহরের প্রায় প্রতি বাড়িতেই আইপিএস আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও বৈদ্যুতিক বাতি বা পাখা বন্ধ হচ্ছে না। দেশে প্রায় ১২ কোটি মোবাইল টেলিফোন মানুষের হাতে। আইপিএস বা মোবাইল চার্জের জন্য নাকি ২/৩ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। 
 
বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখলাম, চলতি মাসের ৪ তারিখে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৭,৪৩৮ মেগাওয়াট। কোন লোডশেডিং নেই। বাস্তবের চিত্র হয়ত ভিন্ন। কারণ বিতরণ লাইনের ত্রুটির কারণে অনেক জায়গায় গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি।
 
২০০৯ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৪,২৯৬ মেগাওয়াট। ২০১৬ সালে যা হয়েছে ৮,৩৪৮ মেগাওয়াট। উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এ সময়ে বিদ্যুতের সংয়োগ দেয়া হয়েছে ৩ কোটির বেশি। সরকারি হিসেবে দেশের শতকরা ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। পূর্বে গ্রামের মানুষদের বঞ্চিত করে আমাদের মতো শহুরে মানুষদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এখন তাতে ভাগ বসেছে, ফলে আমাদের খানিকটা অসুবিধা হচ্ছে।
 
কেউ কেউ হয়ত বলবেন, টাকা দিব, পণ্য/সেবা (বিদ্যুতকে যদি পণ্য বা সেবা যেটা হিসেবেই গণ্য করি)পাব না কেন? খুবই যৌক্তিক কথা! কিন্তু বিদ্যুতের বেলায় সম্ভবত এটি খাটে না। আজকে পরিকল্পনা শুরু করলে অন্তত ৪/৫ বছর লেগে যায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে।
 
দেশে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে আমরা সাশ্রয়ী হলে দুর্ভোগ হয়ত কিছুটা কমতো। কিন্তু সামর্থ্যবানেরা ভোগে বিশ্বাসী, সাশ্রয়ে নয়। কাকে, কী উপদেশ দেবেন? আমরা কি নিজেরা সেগুলো মেনে চলি? সরকারি/কর্পোরেট অফিসগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়। অকারণে এসি, বাতি, পাখা চালু থাকে। বাইরে যখন ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, কর্তাব্যক্তিরা তখন ১৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রুম ঠাণ্ডা করে স্যুট পরে অফিস করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর গ্রীষ্ম ও  শীতকালের ড্রেসকোডের পরিবর্তন আনেন। গরমে হাফহাতা শার্ট পরে অফিসে এলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তা মানেন ক’জন? 
 
আমি তালপাতার পাখার বাতাসে বড় হয়েছি। আমার সন্তানের বৈদ্যুতিক পাখাতেও চলে না; তার এসি চাই। আমার পিতার সামর্থ্য ছিল না। আমার সন্তানের পিতার সামর্থ্য হয়েছে। এই সামর্থ্যবানের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। রাষ্ট্রের সামর্থ্যও বাড়ছে। তবে, দৌঁড়ে খানিকটা পিছিয়ে। এটাকেই বলে  ট্রানজিশন পিরিয়ড বা ক্রান্তিকাল। আমরা এখন সেই সময়টা অতিক্রম করছি।
 
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com