ভাবলেই গা শিউরে ওঠে, মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। অথচ গত ১০০ বছর আন্দোলন করেও কুর্দিরা স্বাধীনতা পায়নি, গড়তে পারেনি ‘কুর্দিস্তান’ নামে স্বাধীন-সার্বভৌম কোনো রাষ্ট্র।
স্বাধীনতা শব্দটি কতটা দুষ্প্রাপ্য তা কেবল কুর্দিরাই জানে। কত রক্ত, কত বিদ্রোহের পরও আজ তারা পরাধীন। শুধু পরাধীনই নয়, নিজ দেশে পরবাসী। নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয়তা কোনো কিছুরই স্বীকৃতি নেই।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে বৃটিশ-ফরাসি-রাশিয়ানরা যখন অটোম্যান সাম্রাজ্য ভাগাভাগি করে নেয়, তখনই কুর্দিদের স্বাধীনতার শেষ সম্ভাবনাও অস্তমিত হয়। মধ্যপ্রাচ্য ভাগাভাগির ‘সাইকস-পিকট চুক্তি’ (১৯১৬), কুর্দিস্তান গঠনের আশাজাগানিয়া ‘সেভরেস চুক্তি’ (১৯২১) ও সেভরেস চুক্তির পরে প্রাক্তন অটোম্যান সাম্রাজ্যের জাতিসমূহ ও মিত্রশক্তির (বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালি ইত্যাদি) মধ্যে উদ্ভূত সঙ্কট নিরসনে স্বাক্ষরিত ‘লৌসান চুক্তি’ (১৯২৩) কোনোটাতেই কুর্দিদের কোনো লাভ তো হয়নি, বরং তারা আগের চেয়েও বেশি খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছে।
আর্মেনিয়া থেকে শুরু করে জাগরোস পর্বতের পাদদেশ, আনাতোলিয়া মালভূমির পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব ভাগ, ইরানের উত্তর-পশ্চিম মালভূমি ও প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার উপরিভাগের সমতট থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বসবাসকারী কুর্দিদের আনুমানিক সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন। যে সকল অঞ্চল নিয়ে কুর্দিরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে আজ তা পাঁচটি দেশ - তুরস্ক (উত্তরাঞ্চল), ইরাক (দক্ষিণাঞ্চল), সিরিয়া (পশ্চিমাঞ্চল), ইরান (পূর্বাঞ্চল) ও আর্মেনিয়ার (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) দখলে চলে গেছে।
স্বাধীন কুর্দিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধার নাম তুরস্ক। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির আদেশে অন্যতম বিচলিত, মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা তুরস্ক গত ৮০ বছর ধরে কুর্দিদের ওপর নির্বিচার নির্যাতন করছে। তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ১৫-২০ শতাংশ লোক কুর্দি হলেও সেখানে তাদের কোনো রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই। তুর্কিরা কুর্দিদের বাক-স্বাধীনতা খর্ব করেছে, তাদের ভাষা, পোশাক, নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি তুর্কিরা কুর্দিদের জাতিসত্ত্বাকে অস্বীকার করে, ‘কুর্দি’ না বলে ‘পার্বত্য তুর্কি’ বলে।
তুর্কিদের বিরুদ্ধে কুর্দিরা দফায় দফায় আন্দোলন করেছে। প্রথম দিকে স্বায়ত্ত্বশাসনের আন্দোলন হলেও পরের আন্দোলনগুলো ছিলো স্বাধীনতার। ১৯৭৮ সালে আব্দুল্লাহ ওসালানের নেতৃত্বে কুর্দিরা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) নামে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলে। প্রতিষ্ঠার ষষ্ঠ বছরে পিকেকে তুর্কিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। তুর্কিরা এতটা কঠোর হস্তে আন্দোলনগুলো দমন করেছে যে, আনুমানিক ৫০ হাজার কুর্দি এ সব আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। নির্যাতন, নিপীড়নের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ১৯৯০ সালের দিকে পিকেকে স্বাধীনতা বাদ দিয়ে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে ফিরে আসে।
২০০৪ সালে আরো দুটি কুর্দি সংগঠন পিকেকের সাথে যোগ দেয়। এদের একটি পার্টি অব ফ্রি লাইফ অব কুর্দিস্তান (পিজেএকে), অন্যটি কুর্দিস্তান ফ্রিডম ফ্যালকনস (টিএকে)। শেষেরটি মূলত পিকেকে ভেঙে তৈরি হওয়া নতুন একটি দল। এর পর স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর সশস্ত্র বিদ্রোহ সরকারকে অস্থিতিশীল করে দেয়। ২০১২ সালে গঠিত হয় কুর্দি সমর্থিত বাম রাজনৈতিক সংগঠন পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)। এদের সহায়তায় ওই বছর তুরস্ক সরকার প্রথম বারের মতো পিকেকের সাথে শান্তি আলোচনায় বসে। আলোচনার ফলে পিকেকে তুরস্ক থেকে উত্তর ইরাকে তাদের সৈন্য সরিয়ে নিতে থাকে।
তবে না, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কথা রাখেননি। সেখানে পরে কী ঘটেছিল তা বোঝার জন্য ইরাক ও সিরিয়ার কুর্দিদের বিষয়ে একটু জেনে নেয়া প্রয়োজন।
ইরাকে এখন কুর্দিদের অবস্থান তুরস্কের কুর্দিদের চেয়ে ভালো। তবে তার পেছনেও রয়েছে এক নির্মম ইতিহাস। ১৯১৮ সাল থেকে বারজানি গোত্রের নেতৃত্বে কুর্দিরা ইরাকী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম করছে। কুর্দিদের এ সংগ্রাম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে মোস্তফা বারজানির কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (কেডিপি, ১৯৪৬) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালে রাজতন্ত্রের পতন হলে কুর্দিদের ভাগ্য কিছুটা হলেও প্রসন্ন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে ইরাক সরকার ও কুর্দিদের সমঝোতায় উত্তর ইরাকে (বর্তমানে ইরাকি কুর্দিস্তান) কুর্দিদের স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল (রাজধানী এরবিল) প্রতিষ্ঠিত হয়। কুর্দি অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করে, ইরাকি সংবিধান সংশোধন করে লেখা হয়: ‘ইরাকি জনগণ দুইটি জাতিগোষ্ঠির সমন্বয়ে গঠিত, আরব ও কুর্দি’।
সুখের এ দিনগুলো তিন বছরের বেশি টেকেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের শাহ মোহাম্মাদ রেজা পাহলভির সাথে এক গোপন চুক্তির ভিত্তিতে সিআইএ ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তা এবং ইরানের মদদে কুর্দিরা উত্তর ইরাকের তেলসমৃদ্ধ কিরকুক শহর দখল করে। ফলে ইরাকি সরকারের সাথে কুর্দিদের সংঘাত পুনরায় ছড়িয়ে পড়ে।
তবে কুর্দিদের কপাল পোড়ে যখন আলজেরিয়ার মধ্যস্থতায় ইরান ও ইরাকের মধ্যে ‘আলজিয়ার্স চুক্তি’ (১৯৭৫) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী কুর্দিদের সহায়তা বন্ধ করে ইরান আর ইরাক সরকার উত্তর ইরাকে কুর্দিদের ঘাঁটিগুলো দখল করে কুর্দি উচ্ছেদ ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এ সময়ে ৬০০’র বেশি কুর্দি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
এ সময় ইরাক ও ইরানে ক্ষমতার পালাবদল হয়। ইরাকে নতুন প্রেসিডেন্ট হন বাথ পার্টির সাদ্দাম হোসেন (১৯৭৯-২০০৩)। অন্যদিকে ইসলামিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের ক্ষমতায় আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। দুই দেশের মধ্যে ইতিহাসের পাতায় নতুন একটি যুদ্ধের কলঙ্কও লেখা হয় - ইরাক-ইরান যুদ্ধ (১৯৮০-৮৮)।
আলজিয়ার্স চুক্তির পরে ইরাকি আক্রমণে কেডিপির নেতারা যখন ছত্রভঙ্গ হয়ে যান তখন সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে জালাল তালাবানির নেতৃত্বে ইরাকি কুর্দিদের অন্য একটি সংগঠন প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তান (পিইউকে, ১৯৭৫) আত্মপ্রকাশ করে। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে প্রথম দিকে কেডিপি ও পিইউকে একে অপরকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে তারা নিজেরাই ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে (১৯৭৮)।
ইরাক-ইরান যুদ্ধে কেডিপি-পিইউকে উভয়েই ইরানের পক্ষাবলম্বন করার ফলে ইরাকি কুর্দিদের সামরিক বাহিনী পেশমেগ্রা সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এর প্রতিশোধ নিতে সাদ্দাম হোসেন ইতিহাসের দুটি বর্বরতম কুর্দি হত্যাযজ্ঞ ঘটান। একটির নাম আল-আনফাল ক্যাম্পেইন (১৯৮৬-৮৯) আর অন্যটি হালাবযা কেমিক্যাল অ্যাটাক (১৯৮৮)। এই দুটি ঘটনায় ইরাকি ও কুর্দি মিলে প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়।
যা হোক, ইরাক-ইরান যুদ্ধ সমাপ্তির সাথে সাথে কুর্দিদের উপরে ইরাকিদের অত্যাচারের মাত্রাও কমে আসে।
উপসাগরীয় যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর হাতে সাদ্দাম হোসেনের পরাজয়ের পরে পেশমেগ্রা বাহিনী ইরাকের উত্তরাঞ্চল থেকে ইরাকি বাহিনীকে হটিয়ে দেয় এবং যৌথ বাহিনী কুর্দিদের নিরাপত্তা স্বার্থে উত্তরাঞ্চলকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করে। ফলে উত্তর ইরাকে ‘ডি-ফ্যাক্টো’ স্বায়ত্ত্বশাসন পায় কুর্দিরা। পরের বছর (১৯৯২) কেডিপি ও পিইউকে মিলে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার গঠন করে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সাদ্দাম হোসেনের পতনের পরে। আমেরিকা ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করলে কুর্দিরা সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মার্কিনিদেরকে সহায়তা করে। ইরাক সরকারের পতনের দুই বছরের মাথায় (২০০৫) ইরাকের উত্তরাঞ্চলে (দুহক, মসুল, এরবিল, সুলাইমানিয়াহ, হালাবজা ) কুর্দিদের স্বায়ত্বশাসন বলবৎ হয়।
কুর্দিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল সিরিয়ান কুর্দিস্তান রোজাভা নামে পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে এ অঞ্চলে (আল-হাসাকাহ গভর্নরেট ও আল-রাক্কাহ এবং আলেপ্পো গভর্নরেটের উত্তরাংশ) কুর্দিদের ‘ডি-ফ্যাক্টো’ স্বায়ত্ত্বশাসন রয়েছে। সিরিয়ায় কুর্দিদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নাম কুর্দিশ ন্যাশনাল কাউন্সিল (কেএনসি) ও ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) এবং এদের সামরিক বাহিনীর নাম পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজে, ২০১১)।
সিরিয়ায় আইএসের উত্থানের পর প্রথম আঘাত আসে কুর্দিদের ওপর। এরা আল-রাক্কাহ থেকে কুর্দিদেরকে উচ্ছেদ করে (২০১৩) সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করে। সে কারণে কুর্দিরা বরাবরই আইএসের দখলদারিত্বের বিরোধিতা করছে।
তুর্কি-পিকেকে শান্তি আলোচনা ভঙ্গ
আইএস কর্তৃক সিরিয়ায় কুর্দি অধ্যুষিত আলেপ্পো গভর্নরেটের কোবানি দখলের (২০১৪) প্রতিবাদে তুরস্কের কুর্দিরা বিক্ষোভ শুরু করে। সিরিয়ার ওয়াইপিজের সদস্যরা কোবান ছেড়ে তুরস্কে ঢোকার পথে তুর্কি সরকারের বাধার মুখে পড়ে, ফলে কুর্দিদের সাথে পুনরায় তুর্কিদের সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। তাছাড়া, আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে তুর্কিরা কুর্দি অধ্যুষিত ইরাকে কয়েকবার বোমা হামলা করলে পিকেকে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেস্তে যায়। এরপর থেকে বিরতিহীন সংঘাত চলছে।
ভাবতে ভালোই লাগে, দেড় লাখ আর্মেনীয় ও ৫০ হাজার কুর্দি হত্যাকারি তুরস্ক আজ মানবাধিকারের ঢোল-তবলা বাজায়।
ইরানি কুর্দিস্তান (পূর্বাঞ্চল)
ইরানে ৫০ লাখের মতো কুর্দি বাস করে। ইরানি কুর্দিদের অধিকাংশই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কুর্দিস্তান, কেরমানশাহ, ইলাম, পশ্চিম আজারবাইজান ও উত্তর খোরাসান প্রদেশে বাস করে। ইরানের ইসলামী বিপ্লব সেখানকার কুর্দিদের জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনতে পারেনি, বরং এ বিপ্লবের পর থেকে কুর্দিদের প্রতি ইরানের বৈষম্যমূলক আচরণ আরো বেড়ে যায়। কুর্দিদের পক্ষ থেকে কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক পার্টি অব ইরান (কেডিপিআই, ১৯৪৫) বরাবরই ইরানিদের এ আচরণের প্রতিবাদ করে আসছিল।
ইরানি সেনারা কুর্দি আব্দুল রহমান কাসেমলৌকে হত্যা করলে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সদস্যদের সাথে কেডিপিআইয়ের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। তবে ইরানের প্রতিরোধের মুখে কুর্দি বিদ্রোহীরা কখনোই সুবিধা করতে পারেনি। তাই ১৯৯৬ সালে কেডিপিআই একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।
ইরানে কুর্দিদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে তুরস্কের পিজেএকে ইরানেও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পিজেএকের মিলিশিয়া বাহিনী ইস্ট কুর্দিস্তান ডিফেন্স ইউনিটসের (ওয়াইআরকে) সাথে ইরানি বাহিনীর ছোটখাটো আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ লেগে থাকলেও এ যাবৎ বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আর্মেনিয়ার কুর্দিস্তান (উত্তর- পূর্বাঞ্চল)
আর্মেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে কুর্দিরা বসবাস করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোম্যান সাম্রাজ্যের তুর্কিরা যখন আর্মেনিয়ায় গণহত্যা (১৯১৫) চালায় তখন এই কুর্দিরা অটোম্যানদের পক্ষ নেয়। আর্মেনীয়রা তা আজও ভুলতে পারেনি। তদুপরি, ১৯৩৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্ট্যালিনের শাসনামলে আর্মেনিয়ায় কুর্দিদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকার বজায় ছিল। স্ট্যালিন বহু আর্মেনীয় কুর্দিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন।
১৯২৩-২৯ সময়ে আজারবাইজনে সোভিয়েত ইউনিয়নের কুর্দি অধ্যুষিত একটি প্রশাসনিক ইউনিট ছিল ‘রেড কুর্দিস্তান’; লাচিন নামের শহর ছিল যার কেন্দ্র। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে আর্মেনীয়রা যখন নাগার্নো-কারাবাখ ছিটমহল দখল করে তখন ওই ছিটমহলে প্রবেশ করিডোরে তৎকালীন রেড কুর্দিস্তানের লাচিন, কেলবাজার শহরগুলোও তারা দখল করে নেয়। ফলে সেখানকার কুর্দিরা বাস্তুহারা হয়ে পড়ে।
কুর্দি জাতিসত্ত্বার ইতিহাস আট থেকে ১২ হাজার বছরের হলেও তারা আজও পায়নি কোনো স্বাধীন, সার্বভৌম কুর্দি রাষ্ট্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে কুর্দিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেটুকু আশা জেগেছিল তা বৃটিশ-ফরাসি চক্রান্তে চিরকালের মতো ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। লৌসান চুক্তির (১৯২৩) ফলে বৃটেন-ফ্রান্স-ইতালি কুর্দিস্তানকে টুকরো টুকরো করে তুরস্ক, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও আজারবাইজনের (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়। তারপরে ১০০ বছরেও স্বাধীনতা পায়নি কুর্দিরা, আর কখনো না-ও পেতে পারে।
কুর্দিদের বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি। একদিন কুৎসিত চেহারার একজন লোককে দেখে মহানবী (সা.) তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। লোকটি বলেছিল, সে একজন কুর্দি। এ কথা শুনে মহানবী (সা.) আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, হে আল্লাহ, আপনি কখনোই কুর্দিদের একত্রিত হতে দিবেন না; তারা একত্রিত হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিবার্তা/ফারিজ