শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এই নামে একটি বই লিখেছিলেন, আজকের লেখাটির জন্য আমি তাঁর বইয়ের নামটি ব্যবহার করছি। আমার মনে হয়, আমি যে কথাগুলো বলতে চাইছি তার জন্য এর চেয়ে বেশি উপযুক্ত আর কোনো নাম হতে পারে না।
দেশের পাবলিক পরীক্ষার সময় আমি কিছু বাড়তি ই-মেইল পাই। ছেলেমেয়েরা তখন পরীক্ষায় ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নগুলো আমার কাছে পাঠায়। আমি তখন তাদের লিখি পরীক্ষা হওয়ার পর যদি দেখা যায় আসলেই প্রশ্নগুলো মিলে গেছে, তাহলে তারা যেন সত্যিকারের প্রশ্নগুলোও স্ক্যান করে আমাকে পাঠায়। আমি নিয়মিতভাবে তাদের উত্তর পাই—গত দুটি পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ মিল।
পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক আগে সব প্রশ্নই ফাঁস হয়ে যায়, তখন ছেলেমেয়েরা তার উত্তর রেডি করে পরীক্ষা দিতে যায়। কোন কোন কলেজে এই ঘটনাগুলো ঘটে আমি সেটা জানি, চেষ্টা করলে সেই কলেজের কোন শিক্ষক এটা করেন, মনে হয় সেটাও আমি বের করে ফেলতে পারব; কিন্তু এখন পর্যন্ত এর জন্য কোনো শিক্ষক, ছাত্র বা অভিভাবক গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে আমি শুনিনি! কেন কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? উত্তরটি আমার জানা নেই। অনুমান করতে পারি যে ধরে নেওয়া হচ্ছে এটা এখন এই দেশে আর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। যে কাজটি অপরাধ নয় তার জন্য কেন একজন ‘সম্মানিত’ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হবে?
সত্যি কথা বলতে কি, শুধু পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস করা যে অপরাধ না তা নয়, কয়েক দিন আগে প্রশ্ন ফাঁস করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সেটা প্রকাশ করে দেওয়াও কিন্তু অপরাধ নয়। পরীক্ষার কয়েক দিন আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে সবার কাছে সেটা চলে যাচ্ছে; কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চোখে সেটি কখনো ধরা পড়ছে না। আমার এক ছাত্র সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন ঘ্যানঘ্যান করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ‘বিভ্রান্তি’ না ছড়ানোর জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে। সত্য কথা যদি বিভ্রান্তি হয়, তাহলে আমরা এখন কী করব?
কেউ যেন মনে না করে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে ছেলেমেয়েরা ঠিকভাবে লেখাপড়া শিখছে না, সেটাই আমার দুশ্চিন্তার কারণ। সেটি মোটেই আমার দুশ্চিন্তার কারণ নয়। আগ্রহ থাকলে একজন কত দ্রুত কত কিছু শিখে নিতে পারে সেটি আমার চেয়ে কেউ ভালো করে জানে না। আমার কাজই হচ্ছে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেওয়া, আর কিছু দিতে পারি না বলে আমি আমার কাছাকাছি ছেলেমেয়েদের শুধু উৎসাহ দিয়ে দেখেছি তারা ম্যাজিক করে ফেলতে পারে। কাজেই কে কতটুকু শিখেছে সেটা নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা নেই, যখন যেটা প্রয়োজন তখন তারা সেটা শিখে নেবে। আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের নৈতিকতা নিয়ে, সেটা হচ্ছে আসল ক্যান্সার।
যদি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করে নিত, তাহলে এটা বন্ধ করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক একটি কাজ হতো। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় কখনো এটি স্বীকার করেনি। কাজেই তাদের চোখে এ ধরনের কোনো ঘটনা দেশে ঘটেনি। যে ঘটনা ঘটেনি সেটা তো আর অপরাধ হতে পারে না। তাই বাংলাদেশে প্রশ্ন ফাঁস কোনো অপরাধ নয়। যারা প্রশ্ন ফাঁস করছে তারা নিশ্চিন্ত নিরাপদ ‘ইনডেমনিটি’ ভোগ করছে—তাদের কে ধরবে?
কিন্তু যে সর্বনাশ হওয়ার কথা সেটা কিন্তু হয়ে যাচ্ছে; ক্যান্সার ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। যে ছেলে বা মেয়েটির অন্যায় করার কথা নয়, তাদের অন্যায় করার জন্য প্ররোচনা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে; তারা অন্যায় করতে শিখছে। একবার অন্যায় করা শিখে যাওয়ার পর তারা নিশ্চয়ই এক ধরনের অপরাধ বোধে ভুগতে শুরু করে, সেটা ঢাকার জন্য তখন তারা অন্যায়ের সপক্ষে জোর গলায় কথা বলতে শুরু করে। এ রকম একজনের আমার কাছে পাঠানো ই-মেইলের একটা উদাহরণ দিই : ‘স্যার, আমার নাম ‘অমুক’ (ছেলেটি নিজের নাম লিখেছে, আজকাল গোপনে অন্যায় করতে হয় না। নিজের নাম ঘোষণা করে অন্যায়ের বর্ণনা দেওয়া যায়। আমি নামটি প্রকাশ করলাম না।) আমি স্যার বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজের একজন ছাত্র।’ (ছেলেটি নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামটি লিখতে সংকোচ বোধ করেনি; তাই আমিও সেটি প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করছি না।)... ‘স্যার আমি আপনাকে এখন বিষয়টি ভালো করে আপনার কাছে বিশ্লেষণ করছি। স্যার আমরা প্রশ্ন আউট করে পরীক্ষা দিই না। প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিই।’ (প্রশ্ন ফাঁসের অভিশাপের এর থেকে সুন্দর বিশ্লেষণ সম্ভবত আর কেউ দিতে পারবে না। ছেলেটি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে সে প্রশ্ন ফাঁসের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়, কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের বেনিফিসিয়ারি। বিষয়টি বেআইনি কিংবা অনৈতিক কি না সেটি নিয়ে তার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। প্রশ্নটি কোথায় পায় সেটিও লেখা নেই—থাকলে বিশ্লেষণটি আরো পূর্ণাঙ্গ হতো। কিংবা কে জানে প্রশ্নগুলো হয়তো এত ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় এই প্রশ্নটা হয়তো অবান্তর।)... ‘কারণটা স্যার স্বাভাবিক, ভালো প্রতিষ্ঠানে Apply করতে হলে ভালো গ্রেড লাগে।’ (কেন ফাঁস করা প্রশ্ন দেখে পরীক্ষা দেয় তার উত্তরটিও খুব সহজ-সরল।)... ‘তাই পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে বের হওয়া প্রশ্ন আমরা সলভ করে যেতাম হলে।’ (পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন বের হওয়া এখন অতিনিয়মিত একটি ঘটনা। সূর্য ওঠার মতো একটি ব্যাপার। এটি ঘটবেই।) ‘আমরা রসায়ন প্রথম পত্র পরীক্ষার সময় একটা রেস্টুরেন্টে বসে প্রশ্ন সমাধান করছিলাম। স্যার সত্যি কথা বলতে আমি সলভ করছিলাম...’ (ছাত্রটি সত্যবাদী, অকপটে স্বীকার করেছে! পরীক্ষার আগে নিশ্চিন্তে-নিরাপদে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করার জন্য রেস্টুরেন্টও আছে। সেখানে সবার সামনেই অপকর্মগুলো করা যায়। এর মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, কোনো অপমান নেই!) আমার কাছে পাঠানো ই-মেইলের পরবর্তী অংশে তার কিছু ব্যক্তিগত বিপদের বর্ণনা আছে। ফেসবুকে খবর প্রচারের তথ্য আছে, তাদের অপরাধী হিসেবে দাবি করা নিয়ে আক্ষেপ আছে। বাক্য চয়ন এ রকম, ‘সে HSC-২০১৬-এর পরীক্ষার্থীদের চোর বলে অভিহিত করে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমিসহ একটি প্রতিষ্ঠান ছোট হয়ে যায়।’ (যৌতুকের বিষয়টি সবাই লক্ষ করেছে? ছাত্রটি একটি অন্যায় করতে প্রস্তুত আছে; কিন্তু সেটি জানাজানি হয়ে তার প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানির ব্যাপারটিকে নিজের অপরাধ হিসেবে দেখছে না, সেটি অন্যদের সীমা অতিক্রম করা বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছে!) ‘আমরাও বলেছিলাম যে আমরাও চাই না প্রশ্নপত্র আউট হোক। কিন্তু যদি আউট হয়, তাহলে পেয়েই পরীক্ষা দিতে চাই।’ (এই একটি কথা দিয়েই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পুরো সর্বনাশের কথাটুকু প্রকাশ করে দিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস হলে সে সেটা দেখে পরীক্ষা দেবে—এটি সে উচ্চকণ্ঠে আমার কাছে জানাতে পারে, তার ভেতরে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ নেই, লজ্জা নেই। শুধু তা-ই নয়, এরপর যে বাক্যটি লিখেছে সেটি আরো ভয়ংকর!)... ‘স্যার, আমি চাই আপনি আমাদের ও তাদের উদ্দেশে একটি সংশোধনমূলক একটি উত্তর আশা করছি।’ (বাংলা বাক্য চয়নে এ রকম সমস্যা সারা ই-মেইলে আছে, সেটি এই মুহূর্তে বিবেচ্য নয়; কিন্তু আমার কাছে তার প্রত্যাশা খুবই বিচিত্র। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর সেটি দেখে পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে এ রকম একটি ‘সংশোধনমূলক বাণী’ আমি দিই, যেন পুরো একটি প্রজন্ম কোনো রকম অপরাধবোধ ছাড়া অপরাধ করে যেতে পারে!)
প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে আমি একবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলাম—কোনো লাভ হয়নি। আমার কাছে যেটি খুবই রহস্যময় মনে হয় সেটি হচ্ছে সংবাদপত্রগুলোর নীরবতা! দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে এ রকম একজন যখন আমাকে জানায় আমি তখন জানতে পারি যে আরো একটি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে; কিন্তু কোনো সংবাদপত্রে আমি তার খবর ছাপা হতে দেখি না। ঘূর্ণিঝড়-ভূমিকম্প-মহামারি বা তার চেয়েও বড় বিপর্যয় থেকে এটি কোনো অংশে কম নয়; কিন্তু তার পরও আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো আশ্চর্য রকম নীরব। আমি তার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। হতে পারে যাঁরা সংবাদপত্র চালান তাঁরা সবাই সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ, তাঁদের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে ও-লেভেল-এ-লেভেলে পড়াশোনা করে, লেখাপড়ার মান কিংবা নৈতিকতা নিয়ে তাঁদের কোনো দুর্ভাবনা নেই। দেশের মূল মধ্যবিত্ত মানুষের ছেলেমেয়েদের কী সর্বনাশ হলো সেটি তাঁদের বিবেচ্য বিষয় নয়। বছরে একবার পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর ভি সাইন দেখানো হাস্যোজ্জ্বল কিছু ছেলেমেয়ের ছবি ছাপিয়ে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলেন। কী ভয়ানক মন খারাপ করা একটি অবস্থা!
শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে পারছে না আমি এটা মেনে নিতে রাজি নই। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এই সমস্যা নেই; শুধু আমাদের দেশে এই সমস্যার সমাধান নেই, এটি হতে পারে না। আমার মনে হয়, কোনো একটি বিচিত্র কারণে সমস্যাটিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। যদি এ রকম হতো যে এটি খুবই বিচ্ছিন্ন বিষয়, মাত্র একজন-দুজন এভাবে ফাঁস করা প্রশ্ন পেয়ে যায়, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ রকম ভূমিকায় অর্থ খুঁজে পেতাম; কিন্তু এখন বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের ইন্টারনেটে চোখ বোলানোর সুযোগ আছে। স্মার্টফোনের দাম এত কমে গেছে যে এটি এখন বিলাসিতা নয়। কাজেই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিটি ছেলেমেয়ে চাইলেই সেটি সংগ্রহ করতে পারবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি ঘোষণা দিয়ে সব প্রশ্ন ফাঁস করে সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছে দিত, আমার একটু দুঃখ হতো যে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া না শিখেই পরীক্ষায় পাস করে যাচ্ছে। কিন্তু এখন আমার দুঃখটা আরো অনেক বেশি, এখন আমি জানি আমরা নিজেরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্রিমিনাল হওয়ার প্রথম ধাপটি হাতে ধরে পার করে দিচ্ছি। সেই কাজটি কে করছে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়!
২.
২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন, ২০১৫ সালে সেই সংখ্যাটি হয়েছে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে জিপিএ ফাইভের সংখ্যা বেড়েছে এক হাজার গুণের চেয়েও বেশি (প্রায় দেড় হাজার গুণ)। পরীক্ষা নেওয়া হয় একটি ছেলে বা মেয়ের মূল্যায়ন করার জন্য, সে কতটুকু শিখেছে সেটা বের করার জন্য। কাজেই কেউ যদি সোজাসাপ্টা হিসাব করে, তাহলে বলবে নিশ্চয়ই এই দেশের ছেলেমেয়েরা গত ১৫ বছরে আগে যেটা শিখত তার থেকে হাজার গুণ বেশি শিখছে। তাই জিপিএ ফাইভের সংখ্যা হাজার গুণ বেড়ে গেছে। আমরা সবাই জানি এটা সত্য নয়, যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে থাকে, তাহলে সেটি তার উল্টো—গাইড বই থেকে প্রশ্ন করার কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার মান কমে যাচ্ছে (আমি তোতা পাখির মতো একটি কথা উচ্চারণ করে যাব, শুধু গাইড বই ব্যবসায়ীরা গাইড বই ছাপিয়ে ব্যবসা করছে, এটি সত্যি নয়। দেশের বড় বড় জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোও নিয়মিতভাবে তাদের পত্রিকায় গাইড বইয়ের মতো প্রশ্ন ও উত্তর ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে অভিশাপ!)। ছেলেমেয়েরা আগের মতো শিখছে না; কিন্তু জিপিএ ফাইভের সংখ্যা হাজার গুণ বেড়ে যাচ্ছে—তার অর্থ নিশ্চয়ই লেখাপড়ার মান হাজার গুণ কমে গেছে! আমার বক্তব্যটি শুনতে পাগলের প্রলাপের মতো শোনাচ্ছে। কিন্তু যুক্তিটির কোন অংশটুকু ভুল কেউ কি ধরিয়ে দিতে পারবে?
৩.
আমাদের দেশে প্রায় চার কোটি ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে—এটি যে আমাদের জন্য কত বড় একটা সম্ভাবনার কথা, সেটা কল্পনা করাও কঠিন। এই চার কোটি ছেলেমেয়ে চার সহস্র কোটি সম্পদ হতে পারে, যদি শুধু আমরা তাদের ঠিকভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিই।
বাজেটের অতিক্ষুদ্র একটা অংশ লেখাপড়ার জন্য খরচ করা হয়। তাই খুব সহজে যে আমরা লেখাপড়ার মান রাতারাতি উন্নত করে ফেলতে পারব, সেটি মনে হয় না। আমরা বাড়তি কিছু চাই না; কিন্তু যেটা আমার অধিকার সেটা তো চাইতে পারি। আমরা এখন আর কিছু চাই না, শুধু পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস না করে এই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নিতে চাই। আমাদের সোনার টুকরো ছেলেমেয়েদের যখন আমরা ভালো জিপিএর লোভ দেখিয়ে ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ার ফাঁদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই, অপরাধ করার যন্ত্রণায় যখন তাদের মুখটা ছোট হয়ে যায় তখন আমরা তাদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না।
দোহাই আপনাদের, আমাদের সন্তানদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিন!
লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট