২৩ জুন যুক্তরাজ্যের জনগণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় প্রদান করেছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে চলছে এখন ভালো মন্দের আলোচনা। ব্রেক্সিটের পক্ষরা বলছেন প্রথম দিকে বড় ধরনের ধাক্কা আসলেও ব্রিটেনের মতো রাষ্ট্র ধীরে ধীরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
অন্যদিকে রিমেইন অর্থাৎ ইইউ থেকে বের হওয়ার বিপক্ষরা বলছেন দেশটি এখন ভেঙ্গে যাবে। অর্থনৈতিক দিক থেকে একটা বড় চাপের মুখে পড়বে ব্রিটেন। এদিকে নির্বাচনের পূর্ব থেকেই বিভিন্ন জরিপ পরিসংখ্যানের রিপোর্টে থাকা আর না থাকার ব্যবধান ছিল খুবই কাছাকাছি। তবুও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেছিলেন হয়তো শেষ পর্যন্ত সামান্য ব্যবধান হলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষরাই করবে জয়লাভ। কিন্তু ২৪ জুন সকালের ফলাফল সারা বিশ্বকে দিয়েছে চমক। তাই এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি দেশ একই পন্থায় ইইউ থেকে বের হওয়ার কথা বলেছে। পরিস্থিতিকে সামাল দিতে ব্রিটেনকে বাদ দিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট এক জরুরি সভার ডাক দিয়েছেন।
ইতিহাসের পেছন দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, যে কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে একসময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তার অনেক কিছুই এখন আর বর্তমান নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ইউরোপের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে হয়ে যাওয়া রক্তাক্ত সংঘর্ষকে ভবিষ্যতে প্রতিহত করার চিন্তা থেকেই মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ইইউ। কারণ নিজেদের মধ্যে হয়ে যাওয়া এই যুদ্ধে অসংখ্য ইউরোপিয়ানকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে দেশগুলোর উপর পরবর্তীতে নেমে আসে এক বিরাট অর্থনৈতিক দুর্ভোগ। ঠিক একই সময় ইউরোপে পূর্ব ব্লক এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে মাত্র ছয়টি দেশ নিয়ে প্রথমত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তবে প্রথম দিকে নাম রাখা হয়েছিল The European Coal and Steel Community. পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিউনিটি (ইইসি) এবং সবশেষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এই ছয়টি সদস্যভুক্ত দেশ হলো বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড এবং তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিl
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সফলতা ও অগ্রগতিতে আকৃষ্ট হয়ে ১ জানুয়ারি ১৯৭৩ সালে ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য ইইউর সদস্য পদ গ্রহণ করলে দেশের সদস্য সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৯। একই বছরের অক্টোবর মাসে সংক্ষিপ্ত কিন্তু সহিংস আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইউরোপে জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ১৯৭৪ পর্তুগালে সালাজার একনায়কতন্ত্র শাসনের অবসান এবং ১৯৭৫ সালে স্পেনের একনায়ক ফ্রাঙ্কো মৃত্যুবরণ করেন। ইউরোপের রাজনীতিতে হটাৎ করে এ ধরনের একটা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রভাব ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৯ সালে ইইউ নাগরিকরা প্রথমবারের মতো তাদের সরাসরি ভোটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টে নিজ নিজ দেশের সদস্য নির্বাচিত করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা অনুসারে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সদস্যের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
১৯৯৯ আমস্টারডাম চুক্তি নামে আরো একটি নুতন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তি মতে ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এসাইলাম এবং অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়। পরবর্তীতে পরিবেশ সুরক্ষা করার বিষয়টি ইইউ নাগরিকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং কিভাবে দেশগুলোর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে ইইউ পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে। এছাড়াও আমস্টারডাম চুক্তি কর্মসংস্থান, পরিবেশ, লিঙ্গ সমতা, জনস্বাস্থ্য, কনজ্যুমার এবং সামাজিক নীতির বিষয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসে। তবে অবাধ কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নীতিটি কয়েকটি দেশে বিতর্কিত হয়। বিষয়টি নিয়ে সুইডিশ ট্রেড ইউনিয়ন ইউরোপের অন্যান্য কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়নের সাথে একত্রিতভাবে আদালতের সম্মুখীন হয়ে হেরে যায়। ইইউর ভেতরে বর্তমানে মুক্তকর্মসংস্থান সংক্রান্ত এই আইনটি এক বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করলেও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট তা মানতে রাজি নয়। তাদের মতে আইনটি স্ব স্ব দেশের শ্রমিক ঘাটতি পূরণে সহযোগিতা করবেl
মুক্ত শ্রমবাজার নীতি সংক্রান্ত নীতি নিয়ে ছোট একটি উদহারণ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশে একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার অন্য কোনো ইউরোপিয়ান সদস্যযুক্ত কোম্পানি পাওয়ার পর সে তার নিজের দেশ থেকে শ্রমিক নিযুক্ত করার সুযোগ পাবে। এখানে স্থানীয়ভাবে শ্রমিক নিতে কোম্পানি বাধ্য নয়। তবে শ্রমিক নিযুক্ততার বিষয়টি এখানে গুরুত্ব নয়l গুরুত্ব হলো শ্রমিক মজুরি নির্ধারণ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ধনী দেশগুলোতে এই সমস্যাটি দিন দিন এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছেl
ব্রিটেনের ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে মুক্ত শ্রমবাজার নীতি হলো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ বলে পর্বেক্ষকমহল মনে করেনl কারণ পূর্ব ইউরোপ (বর্তমানে ইইউ নাগরিক) থেকে আসা শ্রমিকরা অতি অল্প মজুরিতে কাজ করার কারণে স্থানীয় শ্রমিকরা দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছেl পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া থেকে ব্রিটেনে আসা ইইউ নাগরিকরা এই কাজগুলোর বাজার দখল করে ফেলছে বলে ব্রিটিশরা মনে করেl ফলে ব্রিটিশ শ্রমিকদের কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছেl এছাড়া এ সকল দেশ থেকে আসা লোকজন প্রাথমিক অবস্থায় কাজ করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করার সুযোগ গ্রহণ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আসা ইইউ ইমিগ্রান্টদের আজকাল প্রায় প্রতিটি দেশে ভিক্ষাবৃত্তি আরেকটি নুতন সমস্যা সৃষ্টি করেছেl এ সকল সমস্যাকে পুঁজি করে ব্রিটেনের বহিরাগত বিরোধী বর্ণ বৈষম্যবাদী রাজনৈতিক দল United Kingdom Independence Party (Ukip) তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সুযোগ গ্রহণ করেছে। ব্রেক্সিটের নির্বাচনে জয়লাভের পর তাই দলের নেতাকে প্রকাশ্যে বলতে শুনা গেলো ব্রিটেনের স্বাধীনতা পাওয়ার কথা। একইভাবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বর্ণবৈষম্যবাদী রাজনৈতিক দলগুলো ইইউবিরোধী প্রচার চালিয়ে দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করছেl ইতিমধ্যে সুইডিশ ডেমোক্রেট লিডার জিম্মি অকেসন ইইউতে থাকা না থাকার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেনl
এদিকে সুইডেনসহ ইউরোপের ধনী দেশগুলোর ট্রেড ইউনিয়নের বক্তব্য হলো ইইউর নাগরিকরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে কাজ করার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যে দেশে কাজ করবে সেদেশের কালেকটিভ চুক্তির নিয়মে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করতে হবে। শ্রমিক মজুরি নিম্ন মূল্য পর্যায়ে নিয়ে আসাকে প্রতিহত করার লক্ষে এ ধরনের নিয়মের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ট্রেড ইউনিয়ন জোর প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও রক্ষণশীল জোটের নেতৃত্বাধীন ই ইউ পার্লামেন্টে কিছুতেই তা মানতে রাজি নয়।
এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙ্গন ধরলে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন কমে আসে। ২০০৪ সালে আরো দশটি দেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য পদ লাভ করে। একইপথ অনুসরণ করে ২০০৭ সালে আরো দুইটি দেশ ইইউর সদস্য পদ গ্রহণ করে। এখন মেক্যাডোনিয়া ও তুরস্ক সদস্য লাভের আবেদন করে অপেক্ষায় রয়েছে।
২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর উপর তার প্রভাব পড়লে তারা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে লিসবন চুক্তি স্বাক্ষরিত করে। চুক্তিটি ১ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে কার্যকর হয়। এইসময় জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি ও ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় সহযোগিতায় বিনিয়োগ, দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সাথে পারস্পরিক শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করে যাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
ক্রোয়েশিয়া ২০১৩ সালে ইইউর ২৮ তম সদস্য হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এই সময় সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে ২০১৫ সালের শেষের দিকে প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থী ইউরোপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নযুক্ত দেশগুলো যার যার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে বাধ্য হয়l ২০১৫ ডিসেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত একটি জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৫ দেশের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২সি নিচে সীমিত করে আনার বিষয়ে করতে সম্মত হয়।
৪৩ বছর পর ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হওয়া নিয়ে এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ হুমকির সামনে পড়েছে। ২৩ জুনের হয়ে যাওয়া নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল আশাতীত। ৭০% ভোটার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম ব্রিটেনের কোনো নির্বাচনে এতো ভোটার অংশগ্রহণ করলো যা ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলা যেতে পারে।
ব্রিটেনের পর এখন ডেনমার্ক, হল্যান্ডসহ আরো কয়েকটি দেশ ইইউতে থাকা না থাকার ব্যাপারে গণভোটের দাবি জানিয়েছে। এক জরিপ পরিসংখ্যান রিপোর্ট অনুসারে ৬৯% এর চেয়েও বেশি সুইডিশ ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে। ডেনমার্কে এই মতামতের পরিমাণ ৬৬% । নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আভাস দিয়েছেl ফ্রান্সের বর্ণবৈষম্যবাদী রাজনৈতিক দলের প্রধান মেরিন লেপেন বলেছেন ২০১৭ সালের নির্বাচনে ন্যাশনাল ফ্রন্ট জয়ী হতে পারলে ইইউতে থাকা আর না থাকার উপর গণভোট দেওয়া হবেl অস্ট্রিয়া থেকেও উঠেছে একইধরনের আওয়াজl এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৪৫% অস্ট্রিয়ানরা ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছেl নেদারল্যান্ডের ৭৬% নাগরিক ইইউতে অবস্থানের পক্ষে মতামত দিলেও বের হয়ে যাওয়ার পক্ষ গণভোটের দাবি করেছেl এখন প্রশ্ন হলো কেন এখন ইউরোপীয় দেশগুলো একের পর এক ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছে?
অনেকে মনে করেন প্রথমদিকে ইইউ পশ্চিম ইউরোপীয় ধনী দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাকালীন ইমিগ্রেশন সমস্যা ততটা জটিল আকার ধারণ করেনি। প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান কাছাকাছি থাকার কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বসবাস কিংবা বিভিন্ন সুযোগসুবিধা গ্রহণে নাগরিকরা তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সমস্যাটি ব্যাপকভাবে তখনি দেখা দেয় যখন পূর্ব ইউরোপের দরিদ্র দেশগুলো ইইউর সদস্য লাভ করে। কারণ অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও রাজনৈতিকভাবে এই দেশগুলোর অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য পদ লাভের সাথে সাথে এ সকল দেশ থেকে প্রচুর ইমিগ্রান্ট ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে বসবাসের জন্য পাড়ি দেয়l রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন কয়েকটি কারণের মধ্যে ইইউ ইমিগ্রান্ট সমস্যাই মূলত ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার স্লোগান সৃষ্টি করেছে। এছাড়া পুঁজিবাদীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ট্রেড ইউনিয়ন ও কর্মসংস্থান নীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়টি ধনী দেশের ট্রেড ইউনিয়ন কখনই সহজভাবে নেয়নি।
আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে ইইউ পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে দেশের জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে। যার কারণে জার্মান ৯৬, ফ্রান্স ৭৪, ব্রিটেন ৭৩, ইতালি ৭৩, স্পেন ৫৪, পোল্যান্ড ৫১ মোট ৪২১ সিট ধরে রেখে তাদের একক প্রভাব খাটানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এদিকে ইউরোপের লেফট এলাইন্স শুরু থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিপক্ষে থাকার কারণে নিজ নিজ দেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাদের আসন সংখ্যা বেশি না পাওয়ার কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টে অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে বলা যেতে পারে। ইইউ পার্লামেন্টে রক্ষণশীল জোটের প্রাধান্যতা থাকায় পুঁজিবাদীদের স্বার্থে অনেক প্রস্তাব তারা সহজেই পাস করে নিতে পারে। এক্ষেত্রে লেফট অ্যালাইন্সকে বার বার পরাজিত হতে হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা লক্ষ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে রাশিয়ার সাথে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে জার্মানের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোটের সীমানা পরিধি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নামটা হয়তো ঠিক হয়নি। কারণ বর্তমান রাশিয়া তার অতীতের সমাজতান্ত্রিক নীতি থেকে এখন মিশ্র অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তাছাড়া সেদিনের সেই সোভিয়েত সামরিক জোট এখন আর নাই বললেই চলে।
এদিকে সুইডিশ লেফট পার্টি লিডার ইউনাস সুসটেড বলেছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ইউনাইটেড স্টেটস অফ ইউরোপ প্রতিষ্ঠার ধারণা এখন পরিত্যাগ করতে হবেl তিনি সুইডিশ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন সুইডেনের ইইউ সদস্যপদ নিয়ে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করতে হবেl কারণ এখন আমরা একটি নতুন ইইউতে অবস্থান করছিl
সুতরাং ইইউর বর্তমান নেতৃত্ব যদি সময় থাকতে তাদের ভ্রান্ত নীতি থেকে সরে না আসে তাহলে ধীরে ধীরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ছোট হয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এই মুহূর্তে কর্মসংস্থান ও ইমিগ্রেশন নীতি নিয়ে ইইউকে নুতন করে ভাবা উচিত বলে অনেকে মনে করছেন। এভাবে আর দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে অন্য পথে চিন্তা করাটাই হবে সবচেয়ে উত্তম কাজ।
এছাড়া জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টিও গুরত্বসহকারে পুনরায় ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। ইইউ আছে, ইইউ থাকবে। তবে আজকের মতো নয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ নিয়ে একদিন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আজকের ইইউ কি আছে সেই পথে?
লেখক: ইলেকটেড কাউন্টি কাউন্সিলার স্টকহল্ম কাউন্টি কাউন্সিল, ইলেকটেড ভাইস প্রেসিডেন্ট সুইডিশ পোস্টাল ট্রেড ইউনিয়ন, স্টকহল্ম
বিবার্তা /জিয়া