বন্ধু হচ্ছে চাঁদের মতো। চাঁদনী রাতে যেখানেই যাবো, সঙ্গে যাবে চাঁদ। যতদূরেই হোক, দূর আকাশ থেকে জানান দেবে ‘আমি আছি’। জীবনে বন্ধু হচ্ছে তৃষ্ণায় এক আজলা শীতল জলের মতো। সময় পাল্টে যায়, তবে বন্ধুত্ব থাকে অটুট ও বর্তমান। আত্মার আত্মীয় বন্ধুকে ধন্যবাদান্তে একঝুড়ি ভালোবাসা জানাতে দীর্ঘদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব বন্ধু দিবস।আগস্টের প্রথম রবিবার, বন্ধু দিবস। প্রতিবছর প্রিয় বন্ধুর শুভকামনায় পালিত হয় দিনটি।
বন্ধু দিবসের সূচনা বহু আগে। ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস বন্ধুদের সম্মানে একটি দিন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আগস্টের প্রথম রবিবারকে জাতীয় বন্ধু দিবস বলে ঘোষণা করে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়। তখন থেকে প্রতিবছর দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে, বিশেষ করে প্যারাগুয়েতে ঘটা করে বন্ধু দিবস পালিত হতো। অাস্তে আস্তে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য দেশে দিনটি জনপ্রিয়তা পায়।
দিনটি পালনের ইতিহাস ঘাটতে গেলে কারণ হিসেবে কিছু সূত্র পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, ভয়াবহতা, বিশৃঙ্খলা ও হিংস্রতা মানুষের মধ্যে হতাশা ও একাকীত্ববোধ তৈরি করে। এ একাকীত্ব ও বন্ধুর অভাববোধ দূর করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধু দিবস নির্ধারণ করা হয়েছিলো।
আবার কথিত রয়েছে, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। দিনটি ছিলো আগস্টের প্রথম শনিবার। বন্ধু বিয়োগের আঘাত সহ্য করতে না পেরে মৃত ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। বন্ধুর জন্য বন্ধুর এ অাত্মত্যাগের ঘটনা চারদিকে ঝাঁ ঝাঁ উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সেবছর মার্কিন কংগ্রেস এ বন্ধুত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস ঘোষণা করে।
ভিন্ন আরেকটি সূত্রে জানা যায়, বন্ধু দিবসের সূচনা হয় ১৯১৯ সালে। তখন আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কার্ড, ফুল, উপহার ও ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বিনিময় করতো।
এরপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ে বন্ধু দিবসের দিন ও তারিখ পাল্টায়। ১৯৫৮ সালে বিশ্বে শান্তির উদ্দেশ্যে প্যারাগুয়েতে অান্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেয়। একই সালের ২০ জুলাই ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেডের প্রতিষ্ঠাতা ড. রেমন আর্তেমিও ব্রেঞ্চো বন্ধুদের সঙ্গে প্যারাগুয়ের পুয়ের্তো পিনাসকোতে রাত্রিভোজনে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে রাতেই প্রতিষ্ঠা পায় ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড।
তাদের এ প্রস্তাবনা জাতিসংঘে পেশ করার পর ২০১১ সালের ২৭ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রবিবারকেই বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কোনো কোনো দেশে আবার ৮ এপ্রিল বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
তবে দিন বা তারিখ যাই হোক, প্রতিটি দিনই বন্ধুত্বের বাঁধন থাকুক অটুট। প্রতিটি দিনই হোক বন্ধু দিবস।
বিবার্তা/ডিডি/ইফতি