রেশমা বানো কুরেশি মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। ১৯ বছর বয়সী এই তরুনীর বাবা একজন ট্যাক্সিচালক। বছর দুয়েক আগে, পারিবারিক অশান্তির জেরে ইলাহাবাদের রাস্তায় দিদি এবং তার উপর চড়াও হয়েছিলেন জামাইবাবু। রেশমার চুলের মুঠি ধরে মুখে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল সে। মুখের পুরোটাই পুড়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় একটি চোখ।
সেই ‘পোড়ামুখী’ রেশমা আগামী সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে দু’টি ‘ফ্যাশন শো’তে থাকবেন। র্যম্পে হাঁটবেন দেশের সব অ্যাসিড-আক্রান্ত মেয়েদের প্রতিনিধি হয়ে! ৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের র্যাম্পে হাটতে দেখা যাবে তাকে। রেশমার কথায়, ‘গর্ব হচ্ছে। আমায় দেখে বাকি অ্যাসিড-আক্রান্ত মেয়েরাও সাহস পাবেন। স্বপ্ন দেখবেন আবার!’
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মেক লাভ নট স্কারস’এর উদ্যোগে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন রেশমা। অবশ্য এই সংস্থার হয়েই আগেই ইউটিউবে দেখা গেছে রেশমাকে। অ্যাসিড আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রচারিত সেই ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া চামড়া লিপস্টিক, আইলাইনার দিয়ে সাজাচ্ছেন রেশমা। এ কথা বোঝাতে যে, লিপস্টিকের মতোই সহজে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসি়ড। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
আর এর সূত্র ধরেই রেশমাকে ‘শো-স্টপার’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানায় ফ্যাশন উইক প্রযোজক সংস্থা ‘এফটিএল মোডা’। তবে কোন কোন ডিজাইনারের পোশাকে র্যাম্পে হাঁটবেন রেশমা, তা গোপন রাখা হয়েছে।
রেশমার কথায়, ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার নামই জীবন। যারা আক্রান্ত এবং যারা আক্রান্ত নন, সব মেয়েকেই সমান চোখে দেখুন! সকলেই মানুষ। চেহারাই সব নয়।’ এই একই কথা দিল্লির ফোটোগ্রাফার রাহুল সাহারনের। বেশ কয়েকজন অ্যাসিড আক্রান্তকে নিয়ে ফোটোশ্যুটও করেছেন তিনি।
রাহুলের কথায়, ‘সৌন্দর্য আমার-আপনার দৃষ্টির উপর নির্ভর করে। কাউকে সুন্দর মনে হলে বুঝতে হবে, চোখের মালিকই সুন্দর। যার চোখ অন্যকে কুৎসিত দেখে, সে-ই হলো কুৎসিত!’
তবে অনেকের মতে, একজন রেশমা নিউইয়র্কের ফ্যাশন শোতে হাঁটলেই অ্যাসিড-আক্রান্ত মেয়েদের ভবিষ্যৎ বদলে যাবে না। কিন্তু রেশমা আশাবাদী। তার কথায়, ‘আমি মুখ ঢেকে রাস্তায় বেরোই না। কারণ, অপরাধ তো আমার নয়! এই মুখ নিয়েই যে নিউইয়র্কের মঞ্চে হাঁটব, তা কি কম বদল! এতে অনেকেই সতর্ক হতে পারেন। আবার কেউ এ বিষয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।’
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাসিড আক্রমণের স্বীকার স্নাতক মেয়েটি আপাতত চাকরির চেষ্টা করছেন। প্রতিবন্ধী সংরক্ষণের শংসাপত্র জোগাড় করতে দৌড়াচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে। তার কথায়, ‘সমাজে রূপ-ই সব। আগে রাস্তাঘাটে বেরোলে কান্না পেয়ে যেত। অনেকেই কটূক্তি করে। বেশি হাসাহাসি করে কিন্তু মেয়েরাই! তবে এখন অনেক শক্ত হয়ে গেছি।’
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি