রাতে শ্যামলী বাসে যাত্রা করে ভোরে বুড়িমারি সীমান্তে। নাস্তা আর ইমিগ্রেশনের সব প্রক্রিয়া শেষ করতে ১০/১১টা বেজে যাবে। ওপারে চ্যাংড়াবান্দায় ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সেরে শ্যামলীর বাসে শিলিগুড়ি। টাকা বা ডলার সরকার অনুমোদিত ডিলারের কাছে রুপিতে পরিবর্তন করুন। অন্যথায় পরবর্তীতে ভাঙাতে সমস্যা হতে পারে।
চ্যাংড়াবান্দা থেকে ময়নাগুড়ির বাসে দেড় ঘণ্টায় শিলিগুড়ি জিপ স্টেশনে। সেখান থেকে দার্জিলিংগামী টাটা সুমো বা কমান্ডার জিপের টিকিট সংগ্রহ করে আড়াই ঘণ্টায় দার্জিলিং। কলকাতা শিয়ালদহ রেল স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দার্জিলিং মেল। টিকিট নেবেন ট্যুরিস্টদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টার ফেয়ারলি প্যালেস থেকে। পরদিন সকাল ১০টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। এখান থেকে রিকশায় শিলিগুড়ি জিপ স্টেশন। কলকাতা থেকে বিকাল ৪টা বা সন্ধ্যা ৬/৭ টায় পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন ছেড়ে, সকালে পৌঁছায়। সেখান থেকে দার্জিলিংয়ে।
দার্জিলিংয়ে কোথায় থাকবেন: দার্জিলিং শহরে সব মানের হোটেল আছে। গচ্ছা দিতে না চাইলে দালাল এড়িয়ে নিজে হোটেল ঠিক করুন। তবে ঠিক করার আগে জেনে নিন গরম পানি আর রুম হিটারের ব্যবস্থা আর বেড়ানোর জন্য জিপসহ তাৎক্ষণিক সেবা সম্পর্কে।
দার্জিলিংয়ে খাবার-দাবার: হোটেলে বাঙালি খাবারসহ সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ভোরবেলায় বেড-টি এবং ডিনারের আগে ইভনিং-টির ব্যবস্থা থাকে।
কোথায় বেড়াবেন
● পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন ঘুম।
● সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে অপূর্ব সূর্যোদয় দেখা।
● খুব ভোরে ৮ হাজার ৩’শ ফুট উঁচু টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড় চূড়ায় সূর্যোদয়ের অসাধারণ দৃশ্য।
● পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি।
● ছবির মতো সুন্দর স্মৃতিসৌধ বাতাসিয়া লুপ।
● বিলুপ্তপ্রায় পাহাড়ি বাঘ স্নো লিউপার্ড খ্যাত দার্জিলিং চিড়িয়াখানা।
● পাহাড়ে অভিযান শিক্ষাকেন্দ্র হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। সর্বপ্রথম এভারেস্ট বিজয়ী তেনজিং-রক- এর স্মৃতিস্তম্ভ।
● কেবল কারে ১৬ কিমিটার এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণ।
● হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেনে পৃথিবী খ্যাত ব্ল্যাক টি পানের অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
● যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থী কেন্দ্র তিব্বতিয়ান সেলফ হেলপ্ সেন্টার।
● প্রায় ৮’শ ফুট উঁচুতে দার্জিলিং গোরখা স্টেডিয়াম।
● নেপালি জাতির স্বাক্ষর বহনকারী দার্জিলিং মিউজিয়াম।
● পৃথিবীর বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার জাপানিজ টেম্পল, ব্রিটিশ আমলের সরকারি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কাউন্সিল হাউস লাল কুঠির অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন খ্যাত আভা আর্ট গ্যালারি।
● শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির দিরদাহাম টেম্পল।
● পাথর কেটে তৈরি রক গার্ডেন এবং গঙ্গামায়া পার্ক।
হিমালয় কন্যা কাঞ্চন-জংঘা, পানির অবিরাম ঝরনাধারা ভিক্টোরিয়া ফলস্ এবং সুসভ্য জাতির সংস্কৃতি।
দার্জিলিংয়ে কেনাকাটা: দার্জিলিং শহরের লাডেন-লা রোডের মার্কেটে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে শীতের পোশাক, হাতমোজা, কানটুপি, মাফলার, সোয়েটারসহ লেদার জ্যাকেট, নেপালি শাল এবং শাড়ি, অ্যান্টিক্স ও গিফট আইটেম, লেদার সু, সানগ্লাস। প্রতারনার শংকা নেই। তবে ভ্রাম্যমাণ ফেরি থেকে শাল, শাড়ি না কেনাই ভাল। যেতে বা আসতে শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট থেকেও কেনাকাটা করা যায়।
দার্জিলিংয়ে ভ্রমণের সময়: শীতের শুরু বা শেষের দিকে দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য ভালো। দার্জিলিংয়ে পাহাড়ি ধস নামে বর্ষা মৌসুমে। শীত বা গরমে সে ঝুঁকি নেই। ঠাণ্ডার এড়াতে গরম কাপড় নেয়া জরুরি। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে চলাফেরা করলে দালাল বা হারিয়ে যাওয়ার শংকা থাকে না।
দার্জিলিংয়ে বেড়ানোর মোট খরচ: ঢাকা থেকে দার্জিলিং থাকা, খাওয়া, যাতায়াত বাবদ প্রতিজনে সর্বোচ্চ খরচ ১৫ হাজার টাকা হতে পারে। বুড়িমারি দিয়ে খরচ কম। কলকাতার হয়ে গেলে খরচটা বাড়বে। ট্যুরিজম কোম্পানি প্যাকেজ ট্যুর করে থাকে।
দার্জিলিংয়ের আশপাশে: দার্জিলিং থেকে মিরিক লেক ও নেপালের পশুপতি মার্কেট জিপে ঘুরে আসুন সকাল ৯টা-বিকাল ৫টার মধ্যে। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনে কার্শিয়াংয়ে থাকার পরে শিলিগুড়ি। যাত্রার দিন থেকে ৫ দিনেই ঘুরে আসতে পারেন। ভারতীয় ভিসার আবেদনপত্র পূরণের সময় স্থলবন্দরের নাম উল্লেখ করুন।
বিবার্তা/জিয়া