প্রকৃতি আমাদের প্রেরণা। যখন মন অশান্ত হয়, কিছুই ভাল লাগে না তখন আমরা প্রকৃতির কাছে যাই। মনকে প্রশান্ত করি। কর্মব্যস্ত জীবনের উদ্বেগ, হতাশা সব ভুলে আমরা শ্বাস নিতে চাই। নিজেকে কিছুদিন রাখতে চাই সব বাস্তবতা থেকে দূরে। এই চাওয়া পূরণ করতে হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাড়ি জমায় দেশ-বিদেশের নানান দিকে, সুন্দর যেখানে হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানায়, আলিঙ্গন করে ভালবেসে।
আপনার ভ্রমণ ডায়েরিতে এবার যোগ করুন উপত্যকা। বিশ্বের চমৎকার এইসব উপত্যকা যেমন শান্তিময় তেমনি চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্যের আধার। আসুন জেনে নিই, বিশ্বের চমৎকার কিছু উপত্যকার কথা।
সাজেক ভ্যালি, বাংলাদেশ: চারিদিকে সবুজ সুউচ্চ পাহাড় আর আর তার মধ্যে অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্যের বাস, যার নাম সাজেক ভ্যালি। মেঘের রাজ্য সাজেক প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থীদের টেনে নেয় তার কাছে। শীত হোক বা গ্রীষ্ম সাজেক কখনই হতাশ করবে না আপনাকে। তবে বর্ষায় সাজেকে চলে জাদুর খেলা। এই মেঘ এসে ঢেকে ফেলবে আপনাকে, আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি, রংধনু। রাতের আকাশে তারা খসা দেখতে পারবেন হেলিপ্যাডে শুয়ে শুয়ে। শান্তির আবেশ পুরো গ্রামটিতে। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভাল। স্বপ্নের মাঝে কাটিয়ে আসতে পারেন কয়েকটা দিন এখানে। রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত সাজেক ভ্যালি। তবে যেতে হয় খাগড়াছড়ি দিয়ে। দূরের নীল পাহাড় আর আকাশের মিলন হার মানায় রুপকথার গল্পকে।
বরুন ভ্যালি, নেপাল: বরুণ ভ্যালি হিমালয়ান এলাকাভুক্ত এবং মাকালু পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে মালাকু বরুণ ন্যাশনাল পার্ক আছে, সারাদিন বেড়াতে পারেন এখানে। যখনই আপনি বরূণ এ যান, এর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি এই পার্কটিতে যেতে ভুলবেন না। চারিদিকের পর্বতের সবুজ আর তার মধ্য দিয়ে ছুটে আসা জলপ্রপাত আপনাকে নিশ্চিতভাবেই মুগ্ধ করবে। গভীর গিরিখাতগুলো এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
কালালাউ ভ্যালি, হাওয়াই: হাওয়াইয়ের কাওয়াইয়ের একটি দ্বীপে অবস্থান এই ভ্যালির। এই ভ্যালিতে আসতে আসতে চমৎকার যে বীচগুলো পেরিয়ে আসবেন তা ইতিমধ্যেই মন ভাল করে দেবে আপনার। কালালাউ বীচ তার অতুলনীয় সৌন্দর্য্যের জন্য অনেক ভ্রমণকারীরই বাকেট লিস্টে থাকে। আপনি যদি কালাউ ভ্যালি ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তবে জেনে রাখুন কোন যানবাহনই কিন্তু নেই সেখানে। পুরো ভ্যালি ট্রেকিং করে ভ্রমণ করতে হবে আপনাকে। তবে এর সৌন্দর্য্য আপনার সব ক্লান্তি দূর করে দেবে নিমেষে। এই ভ্যালিটিও ঘন সবুজ বৃক্ষে শ্যামল।
লটসচেন্তাল, সুইজারল্যান্ড: এই ভ্যালিটি শুধু বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ভ্যালির একটিই নয়, এটি সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় আয়তনের ভ্যালি। আপনি যত চান ততো বেড়াতে পারবেন এখানে, ভ্যালির কোণায় কোণায় ছড়ানো সৌন্দর্য্য, হতাশ হবেন না যেদিকেই যান। এটি ২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। ভ্যালিটিকে ঘিরে আছে অপরূপ সব পর্বতমালা যাদের উচ্চতা ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর সৌন্দর্য্যের বর্ণনা শেষ হবার নয়। এককথায় লটসচেন্তালের মত দ্বিতীয় সুন্দর ভ্যালি হয় না, এটি অনন্য।
হারাউ ভ্যালি, ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রায় হারাউ ভ্যালির অবস্থান। হারাউ ভ্যালির প্রাকৃতিক দৃশ্য একবার চোখে দেখতে পারা যেন জীবন ধন্য হয়ে যাওয়া। আপনি যখন এই ভ্যালি ভ্রমণ করতে যাবেন পেরিয়ে আসতে হবে চোখ ধাঁধানো পর্বতের সারি, পাথুরে গঠনের ঘন বন আর ধানক্ষেত। আপনি হেঁটেই যেতে পারবেন ভ্যালিতে আর রাত কাটাতে পারবেন স্থানীয়দের ঘরে।
ভ্যালি অব টেন পিকস, কানাডা: এই ভ্যালিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কানাডা ন্যাশনাল পার্ক। দশটি অপূর্ব ভিন্ন ভিন্ন পিক দ্বারা ঘেরা ভ্যালিটি বিশ্বের সেরা ভ্যালিগুলোর অন্যতম। এখানে একটি মোরিন লেকও আছে যার টলটলে পানিতে প্রতিফলিত হয় পর্বতের চূড়া, চূড়ায় জমে থাকা বরফ, ভ্যালির সবুজ। সবমিলিয়ে মায়াবি মোহময় এক দৃশ্যের সূচনা হয় এই ভ্যালিতে। পাহাড়ের চূড়াগূলোর নাম আগে ছিল ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা। তবে এখন ৭ পর্যন্ত রেখে বাকি ৩ টির ভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে। আপনি মোরিন লেকের তীর ধরে চলে যাওয়া পথ বেয়ে পৌঁছে যেতে পারেন চমৎকার এই উপত্যকায়।
বিবার্তা/জিয়া