রাজনৈতিক ও জাতিগত নানা টানাপোড়েনে পর্যটকরা মিয়ানমার বিমুখ ছিলেন। তবে দিন পাল্টেছে। এখন পর্যটকদের আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। সম্প্রতি দেশটির সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোও পর্যটকদের বিষয়ে ইতিবাচক নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
জানা গেছে, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মিয়ানমারের সড়ক ও অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হয়েছে তা সত্যি অবাক করার মতোই। বিশেষত ইয়াঙ্গুন ও আশেপাশে গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি পাঁচতারকা হোটেল। বলা হচ্ছে দীর্ঘদিনের এতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে দেশটি হতে পারে পর্যটকদের জন্য আকষর্ণীয় স্থান।
মায়ানমার দর্শনীয় কিছু স্থান
গোল্ডেন প্যলেস: মান্দালয় শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার গোল্ডেন প্যলেস। এটি প্যালেসের মূল অংশ ছিল কিন্তু তৎকালীন রাজার মৃত্যুর পর তার ছেলে এই অংশটি রাজবাড়ি হতে আলাদা করে দেয়। কারণ মনে করা হতো ওখানে মৃত রাজার আত্মা ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তীতে এটিকে বৌদ্ধ বিহারে পরিণত করা হয়। একসময় এটি স্বর্ণ দিয়ে ঘেরাছিল কিন্তু এখন তা বিহারের ভেতরে সাজানো আছে। এই বৌদ্ধবিহারটির স্থাপত্য নিদর্শন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রচলিত উপকথাকে উপস্থাপন করে।
ম্রাউক উ: এটি মিয়ানমার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক শহর। এর পুরু ঘেরা দেয়ালের জন্য একে দুর্গ মনে করা হত। এ দেয়ালটি প্রকৃতপক্ষে নির্মাণ করা হয় এখানে থাকা মন্দিরটিকে ভয়াল ঝড়ো হাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য।
তুয়াং কালাত: এটি মিয়ানমার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এই বিহারটি নির্মিত হয় আগ্নেয়গিরির ঠিক মুখে। এই বিহারটিতে যেতে হলে দর্শনার্থীদের ৭৭৭ টি সিঁড়ি পেরুতে হবে। এমন পাহাড় চূড়া থেকে চারপাশের প্রকৃতিকে দেখার অনুভূতি এক কথায় অতুলনীয়।
শ্বেন্দাগন প্যাগোডা: একে বৃহত্তম ড্রাগন প্যাগোডাও বলা হয়ে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান কেননা এখানে রাখা হয়েছে গৌতম বুদ্ধের একগাছি চুল ও বৌদ্ধ ধর্মের বহু অমূল্য পাণ্ডুলিপি।
ইরাবতীতে স্বাগত: পুরো মিয়ানমারেই ইরাবতীর স্পর্শ। মিয়ানমারের পাথেইন, লাইং ও ইয়াঙ্গুন এই ইরাবতীরই শাখা। প্রধান ১৫টি শহর অবস্থিত ইরাবতীর তীরে। এমনকি একসময়ের রাজধানী মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনও নদীসূত্রেই প্রতিষ্ঠিত। সেই প্রাচীনকাল থেকে ইরাবতীকে কেন্দ্র করেই ব্রহ্মদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা। যেতে পারেন নদী দেখতে আর এখানে বাড়তি পাওয়া যাবে রাস্তার দু’পাশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন, পাহাড়ের চুড়ায় মন্দিরগুলো সেই সঙ্গে জেলেদের ধরে আনা প্রচুর মাছ দেখারও সুযোগ।
আরেকটি বিষয়, এখানকার নারীরা আমার দেশের মতো নয়। তারা অনেক বেশি পরিশ্রম করে। বেশিরভাগ ছোটব্যবসা প্রতিষ্ঠানই চালায় নারীরা, সঙ্গে বাচ্চাদের দেখাশোনাসহ সংসারের অন্য কাজগুলোও করে হাসিমুখে।
রবীন্দ্রনাথ তার জাপান যাত্রার ডায়েরিতে এমন নারীদের কথাই বলেছিলেন। জাপান যাবার পথে তার বোট থেমেছিল ইরাবতীর পাশে। ব্রহ্মদেশের নারীরা নিজ গুণেই সুন্দর, ব্যাখ্যা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি প্যাগোডা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন।
বিবার্তা/জিয়া