স্ফটিকস্বচ্ছ ঝকঝকে, কাচের মত একটা দিঘির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আপনি। দিঘির উপর আপনার মায়াবি প্রতিবিম্ব। কেমন লাগছে ভাবতে? সত্যিই কি এমন জায়গাও আছে? পৃথিবীতে আছে এমনই চমৎকার সব জায়গা যা এক দেশে বসে ভাবাও যায় না।
আয়না হ্রদ: মিরর লেক বা আয়না হ্রদের পানি এতই স্থির আর পরিষ্কার যে এর উপর চমৎকারভাবে প্রতিবিম্বিত হয় আশপাশের পর্বতমালা, গাছগাছালি, উড়ে যাওয়া পাখি, আকাশের মেঘ, সবকিছু। কিন্তু এমন লেক কোথায় আছে? আপনার কাছে যা অসম্ভব মনে হচ্ছে তা কিন্তু আসলে এতটাও অসম্ভব নয়। বিভিন্ন জায়গায় এমন স্বচ্ছ পানির লেক আছে। নিউ হ্যাম্পসায়ারের টাফটোনবোরো, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, ওহিও, ওয়ালোয়্যা এবং ক্লাকামাস ইত্যাদি অঞ্চলে এ রকম হ্রদ দেখা যায়। নিউজিল্যান্ডে এমন অনেক লেক আছে যেগুলোকে মিরর লেক বলে। এই লেকগুলো এমন এলাকায় অবস্থিত যেখানে লোক সমাগম নেই বললেই চলে। আমাদের কাছাকাছি এমন লেক আছে তিব্বতের মানস সরোবর।
সালার ডি ইউনি, দক্ষিণ আমেরিকা: এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লবণের ফ্লাটস, প্রচুর পরিমাণে লবণ সেই আদিম সময় থেকে জমে জমে এই লেকের তৈরি হয়েছে। এখন এখানে পুরু লবণের সমান বিশাল স্তর হয়ে গেছে। শুস্ক মৌসুমে এটি থাকে ধবধবে শুভ্র, কিন্তু বর্ষায় স্তরটি একটা বিশাল আয়নায় পরিণত হয়। বৃষ্টির পানি কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে লবণের স্তরের উপর জমা হয়। কয়েক ইঞ্চি গভীর হয়ে জমে থাকা এই স্বচ্ছ পানিতে ফুটে ওঠে প্রকৃতির সব রূপ, রং। দক্ষিণ বলিভিয়ায় লবণের এই লেককে বলা হয় লাগো মিনচিন।
পাঁচ ফুলের লেক, চীন: চীনের সিচুয়ানে অবস্থিত এই ওয়াহুয়া লেক বা পাঁচ ফুলের লেক। একে বলা হয় চীনের জুঝাইগু ভ্যালির গর্ব। এই লেকের পানিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং হাইড্রোফাইটস, যা একত্রে পানিতে ভিন্ন ভিন্ন রং এর আভা তৈরি করে। লেকের তলায় সেই আদিকাল থেকে জমে থাকা গাছের গুড়ি, পাতারা মিলে ভিন্ন ভিন্ন শেডের সবুজ রং এর আভা তৈরি করেছে। লেকের উপর থেকেই সেই রং চোখে পড়ে। এর কোনটা নীলচে সবুজ, কোনটা কালচে, কোনটা হলদে। লেকের চারপাশেও রঙ্গীন গাছের সারি এর মোহনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
ক্রিস্টালের গুহা, মেক্সিকো: বিশ্বে অনেক গুহা আছে যেখানে প্রচুর ক্রিস্টাল আছে, এদেরকে ক্রিস্টাল গুহাও বলা হয়। তবে সবচেয়ে বড় ক্রিস্টাল গুহা হল মেক্সিকোর নাইকা। এটি স্বচ্ছ কাচের মত ক্রিস্টাল ফর্মেশনে ভরা। গুহার বেশিরভাগ অংশই এখনও মানুষের হস্তক্ষেপের বাইরে আছে। গুহার ভেতর ১০ মিনিটের বেশি তাপ সহ্য করা কঠিন। এর অপূর্ব বিস্ময়কর ক্রিস্টালের কলামগুলো গুহার উপর থেকে শুরু করে তলা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে। তবে দুঃখজনক হল গুহায় তাপের তারতম্যের কারণে নতুন ক্রিস্টাল ফর্মেশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর যেগুলো আছে সেগুলোও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
লেক হুরন, নর্থ আমেরিকা: আমেরিকার চমৎকার সুবিশাল লেক এটি। স্বচ্ছ জলরাশির এই লেক উত্তর আমেরিকা এবং কানাডার মাঝামঝি অবস্থিত। শেষ বরফ যুগের সময় থেকে মহাদেশীয় গ্লাসিয়ার থেকে বরফ গলে এই লেকের সৃষ্টি হয়। ১৭ শতক পর্যন্ত হাজারো জাহাজ হুরনে ডুবে গেছে। হুরনের পানির নিচে এখনও জাহাজের টুকরো দেখা যায়। টলটলে স্বচ্ছ পানিতে সবুজ নীল আভার লেকটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে দারুন।
ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের উষ্ণ প্রস্রবন: যুক্ত্ররাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে ১০ হাজারেরও বেশি উষ্ণ প্রস্রবন এবং গ্লেসিয়ার আছে। এদের কোন কোনটা তীব্র উজ্জ্বল রং ছড়ায়। পানির নীচের শ্যাওলাগুলি এই রংয়ের উৎস। এখানে পানি এতই পরিষ্কার আর স্বচ্ছ যে কখনো কখনো পানি আছে কি নেই সেই বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। মনে হয় শুধু রঙের ধোঁয়ারাই আছে। সে এক অন্য পৃথিবী, স্বর্গীয় সৌন্দর্য!
বিবার্তা/জিয়া