প্রকৃতির সবখানেই যেন নতুন সুর। উৎসবের রঙ ছড়িয়ে এসেছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির সার্বজনীন উৎসব আজ। বিশ্বজুড়ে বাঙালি আজ মেতে উঠবে আনন্দে-উচ্ছ্বাসে। ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ একযোগে গাইবে, 'এসো হে বৈশাখ, এসো এসো'। সব গ্লানি মুছে নবোদ্যমে শুরু হবে পথচলা। স্বাগত ১৪২৩। শুভ নববর্ষ।
আজ প্রভাতে পূর্বাকাশে লাল টকটকে সূর্যের কিরণছটার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে নতুন বছর। উৎসবময় অনুভূতি সঙ্গী করে নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে বাঙালির। বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন করে যাত্রা শুরুর মুহূর্তে সবাই গেয়ে উঠবে, 'তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,/অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/মুছে যাক গ্গ্নানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগি্নস্নানে শুচি হোক ধরা।'
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
কর্মসূচি : অন্যান্যবারের মতো এবারও পহেলা বৈশাখের মূল আয়োজন হবে রমনা উদ্যানের অশ্বত্থমূলে, যা বটমূল হিসেবে পরিচিত। ছায়ানটের আয়োজনে প্রভাতি এ আয়োজনে সংগঠনটির প্রায় দেড়শ' শিল্পী গাইবেন মানবতার গান। এ বিষয়ে কথা বলবেন ছায়ানট সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুন। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। 'অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে' প্রতিপাদ্য নিয়ে এ শোভাযাত্রায় মানবতার জয়গান গাওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চ্যানেল আই ও সুরের ধারার যৌথ আয়োজনে 'হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ' অনুষ্ঠান হবে। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে এ আয়োজন চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি নিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্ব-স্ব উদ্যোগে অনুষ্ঠান হবে।
আজ সকাল ৭টায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হবে। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগেও থাকছে বর্ষবরণের আয়োজন। এতে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এ ছাড়া বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্র, বাংলা মা, গুলশান সাউথ পার্ক ক্লাব লিমিটেড, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাজধানীর পাঁচতারকা সোনারগাঁও হোটেল, র্যাডিসন ব্লু, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সি, খাজানাসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো করেছে বিশেষ আয়োজন। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবও করেছে নানা আয়োজন।
বিবার্তা/এম হায়দার