প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চাপে সংকুচিত হয়ে পড়ছে সেকেন্ডারি মার্কেট। গত চার মাস ধরেই পুঁজিবাজারে টানা পতন চলছে। এই ধারাবাহিক পতনের মাঝেও পুঁজিবাজারে রাইট শেয়ার এবং আইপিও’র মাধ্যমে টাকা তোলার ধুম পড়েছে।
যে কারণে বাজারে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি মাসেই বাজার থেকে ৭২১ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে তিনটি কোম্পানি। এ সব কোম্পানি ৫ গুণ আবেদন পড়লেও এখানে দীর্ঘদিন আটকে থাকবে ৩ হাজার ৬০০কোটি টাকার বেশি। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
একমি ল্যাবরেটরিজ: চলতি মাসেই অতি মূল্যায়িত দরে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করছে একমি ল্যাবরেটরিজ। প্রতিটি শেয়ারে ৮৫.২০ টাকা ধরে কোম্পানিটি ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে তুলবে ৪০৯ কোটি টাকা। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কাট অফ প্রাইস হিসেবে ৭৭ টাকায় শেয়ারটি ছাড়বে কোম্পানিটি।
আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটি আন্তজার্তিক ও বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড রিপালনও করেনি। তাই প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এছাড়া কোম্পানির বিডিংয়ের দর নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট মহলের কিছুটা সংশয় রয়েছে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে পাঁচ গুণ আবেদন জমা পড়লেও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এক মাসের জন্য ব্লকড হয়ে যাবে। আর আইপিওয়ের চাঁদা গ্রহণের পরে ৪০৯ কোটি টাকা কোম্পানির একাউন্টে জমা হবে। ফলে এতো বড় টাকার চাহিদায় পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে দরপতন ঘটছে।
সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স: সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্সের ফি-বছর মূলধন বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের কোনো সুফল নেই। উল্টো মূলধন বাড়ার বিপরীতে কোম্পানিটিতে ধারাবাহিকভাবে মুনাফার পরিমাণ কমেছে।
এর মাঝেই অ্যালায়েন্স পোর্ট প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা দরে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৬টি শেয়ার ছেড়ে মোট ৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা উত্তোলন করছে। এখনও কোম্পানিটির চাঁদা গ্রহণ চলছে। উত্তোলন করতে যাওয়া টাকার মধ্যে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ দিয়ে জমি ও ১৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩০ মার্চ থেকে রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু করে চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত।
জিপিএইচ ইস্পাত: ঋণের সুদজনিত ব্যয় থেকে নিজেদের দূরে রাখতে জিপিএইচ ইস্পাত নতুন করে রাইট শেয়ার ছাড়ছে। রবিবার থেকে কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হয়েছে। চাঁদা গ্রহণ চলবে ১২ মে পর্যন্ত।
কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৩আর:২ রাইট শেয়ার ছেড়ে ২৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা তুলতে যাচ্ছে। ৪ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা। কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে বেনকো ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং লঙ্কা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে নতুন ফান্ড না আসায় তারল্য সংকট বাড়ছে। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো আইপিও ছেড়ে টাকা তুলছে এবং এক মাসেই দুটি কোম্পানি রাইট শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
যদিও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোম্পানির ঋণ শোধ এবং নতুন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এটি পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদে জন্য কল্যাণই বয়ে আনবে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে এতো টাকা উত্তোলনকে কোনোভাবেই বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজার থেকে কোম্পানি টাকা তুলবেই। কিন্তু তাদের সময়োপযুক্ত হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, রাইট শেয়ার এবং আইপিও অনুমোদন বাজারে নতুন করে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। অনেকেই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে একমির আইপিওর চাঁদা এবং জিপিএইচ ও সামিট পোর্টের রাইটের চাঁদা দিচ্ছেন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং সেকেন্ডারী মার্কেটের কথা মাথায় রাখা।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, বিএসইস আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেহিসাবি। তারা তুষ্ট হলেই কোম্পানির বাজারে চলে আসতে পারে। এরা বিনিয়োগকারীদের কথা ভাবেন না।
বিবার্তা/নাহিদ/কাফী