পুঁজি আটকে থাকার যন্ত্রণা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছেন না ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) বা বিকল্প বাজারের বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তারা এই বাজার থেকে বের হওয়ার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন।
এই সময়ের মধ্যে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে নানা আশার কথা শোনালেও তা বাস্তব রুপ পায়নি। ফলে দিন যত যাচ্ছে তাদের হতাশার পাল্লা ততই ভারি হচ্ছে।
নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, উৎপাদন বন্ধ থাকা, স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি ফি পরিশোধ না করাসহ নানা কারণে কোম্পানিগুলোকে ২০০৯ সালের পর বিভিন্ন সময়ে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। কিন্তু জটিল লেনদেন প্রক্রিয়ার কারণে ওই বাজারে শেয়ারের কেনাবেচা হয় না বললেই চলে।
ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির জন্য এ বাজারের জন্ম হলেও নতুন কোনো কোম্পানি এ বাজারে আসেনি। বরং বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে মূল মার্কেটের কিছু কোম্পানিকে এই মার্কেটে পাঠানো হয়েছে।
তবে সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করায় ১২টি কোম্পানিকে ইতোমধ্যে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখনো এই মার্কেটে রয়েছে আরো ৫৫টি কোম্পানি। এর এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা আটকে রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মেটালেক্স কর্পোরেশন ১৯৯৬ সালে শেষবার এজিএম করেছে। এরপর ১৯ বছর পার হলেও আর কোনো ধরনের সভায় যেতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া অনিয়মিত এজিএমের তালিকায় রয়েছে- বেমকো (২০০৫ সালে সর্বশেষ এজিএম), আমাম সি ফুড (২০০৯ সালে), টিউলিপ ডেইরি (২০০৮ সালে), ঢাকা ফিশারিজ (২০০৯ সালে), মোনা ফুড (২০১০ সালে), জার্মান বাংলা জেভি ফুড (২০০৮ সালে), সালেহ কার্পেট মিলস (২০০২ সালে), ডায়নামিক টেক্সটাইল (২০০৪ সালে), মিতা টেক্সটাইল (২০০৯ সালে), বিডি ডায়িং (২০০৯ সালে), বিডি জিপার (২০০৯ সালে), এম হোসাইন গার্মেন্ট (২০০২ সালে), সজীব নিটওয়্যার (২০০৭ সালে), চিক টেক্সটাইল (২০০৪ সালে), ফার্মাকো (২০০৭ সালে), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (২০০৯ সালে), পারফিউম কেমিক্যাল (২০০৪ সালে), আজাদী প্রিন্টার্স (২০০৯ সালে), ম্যাক পেপার (২০০৭ সালে), ম্যাক এন্টারপ্রাইজ (২০০৬ সালে), রাশপিট ডাটা (২০০৪ সালে), বিডি লাগেজ (২০০৯ সালে), রোজ হ্যাভেন বলপেন (২০০৫ সালে)।
এ ছাড়া অন্যান্য কোম্পানিও অনিমিয়ত এমজিএম করা কিংবা অন্য কোনো অনিয়মের জন্য ওটিসি মার্কেটে রয়েছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী এই মার্কেটের কোম্পানি নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওটিসি মার্কেটে থাকা কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে আনার পক্রিয়া চলছে। শেয়ারহোল্ডারদের সুবিধার জন্য ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে কোম্পানিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। তবে মূল মার্কেটে আসাতে হলে অবশ্যই কোম্পানিগুলোকে আইন পরিপালন করতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তারা তারা হতাশ।
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলেন, কর্তৃপক্ষ কোম্পানিগুলোকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানোর আগে আমাদের কথা কথা ভাবেনি। তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানগুলো ওটিসি মার্কেটে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
কারণ এখানে তাদের টাকা আটকে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী আবু জালাল বলেন, এই মার্কেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে লেনদেন করতে অনেক সময় লাগে। আর সেলার থাকলেও বায়ার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একই প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী হাসান মাসুদ বলেন, আমাদের দাবি এই কোম্পানির লেনদেন পদ্ধতি সহজ করা হোক কিংবা কোম্পানিরগুলোকে নিলামে তুলে সেই টাকা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, ওটিসি মার্কেটে থাকাতে কোম্পানির কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। তারা নাম মাত্র শাস্তি পেয়ে বা জরিমানার শিকার হয়ে বেঁচে যাচ্ছে। সমস্যা যত তা বিনিয়োগকারীদের। তাই কোম্পানিগুলোকে নিলামে তোলা ছাড়া অর্থ ফেরত পাওয়ার অন্য কোনো উপাই নেই।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, এখানে বিনিয়োগকারীদের অনেক টাকা আটকে রয়েছে। আমার জানা মতে এসব কোম্পানি নিয়ে বিএসইসি কাজ করছে। আশা করা যায় খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।
অন্যদিকে ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরীন বলেন, ওটিসিতে যে সব কোম্পানি রয়েছে সবার আগে ওইসব কোম্পানির পরিচালক বা এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারা শাস্তি পেলেই সবার টনক নড়বে। পরে কোম্পানিগুলো মূল মার্কেটে আসতে আগ্রহী হবে।
বিবার্তা/নাহিদ/কাফী