দুবৃর্ত্তদের হাতে খুন হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী (৫৮) সবসময় লেখাপড়া আর শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বলে জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এমনকি এর আগে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায়নি। সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইংরেজী বিভাগের সভাপতি প্রফেসর শেহনাজ ইয়াসমীন আক্ষেপ করে বলেন, এমন একজন নিরপেক্ষ, সহজ সরল শিক্ষককে কী কারণে হত্যা করা হলো তা আমার বুঝে আসে না। এলাকার লোকজনদের সাথে কোনো প্রকার বৈরী সম্পর্ক ছিল না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, সিদ্দিকী ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে কোনো লেখালেখি করতেন না।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, স্যারের সাথে আমাদের কোনো প্রকার খারাপ সম্পর্ক ছিল না। স্যারের এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে পুলিশ ধারনা করে বলছে, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বামধারার লেখকদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক একইভাবে হত্যা করা হয়েছে শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। এ ঘটনায় কোনো জঙ্গি সংগঠন জড়িত থাকতে পারে।
নিহত রেজাউল করিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, শনিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শালবাগান বটতলা মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রেজাউল। এ সময় মোটরসাইকেল যোগে হেলমেট পরা দুই যুবক পেছন থেকে তার গলায় কোপ দেয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি শাহাদাত হোসেন জানান, ঘটানাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে (রামেকে) পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এ কে এম শফিউল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাসার সামনে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পাঁচ ঘণ্টার মাথায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামের একটি পেজ খুলে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।
২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় প্রাতভ্রমণের সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসকে। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এস তাহের। দুদিন পর ক্যাম্পাসের বাসার পাশের ম্যানহোলের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
রাবি/নাঈম/মহসিন