এক যুগে রাবির চার শিক্ষককে খুন

এক যুগে রাবির চার শিক্ষককে খুন
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:৩১:১২
এক যুগে রাবির চার শিক্ষককে খুন
মনিরুল ইসলাম নাঈম, রাবি
প্রিন্ট অ-অ+
গত এক যুগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারজন শিক্ষকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে মতিহারের সবুজ চত্বর। প্রশাসনের গাফলতি ও হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ায় কারণেই বারবার শিক্ষক হত্যার এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন বিভিন্ন মহল। 
 
সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকালে নিজ বাসার কাছে দর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী (৫৮)। এ নিয়ে গত এক যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক প্রাণ হারিয়েছেন।
 
এর আগে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. ইউনুস। ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের নিজ বাসভবনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়।এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। নিম্ন আদালত ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি নওগাঁ সদর থানার সারকডাঙ্গা গ্রামের মো. শহিদুল্লাহ ওরফে মাহবুব ও সাতক্ষীরার মো. শফিউল্লাহ ওরফে তারেক নামের জেএমবির দুই নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্য ছয় আসামিকে খালাস দেন আদালত।
 
একইভাবে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এস তাহের আহমেদ ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর তাঁর বাসার পেছনে সেফটিক ট্যাংক থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।এই মামালায় পুলিশ ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। নিম্ন আদালত ২০০৮ সালের ২২ মে ভ‚-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিনসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ডদেশ দেন। এ ছাড়া ছয় আসামির মধ্যে ছাত্রশিবিরের দুই নেতাকে খালাস দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে মহিউদ্দিন এবং প্রফেসর তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
 
একই কায়দায় ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকণ্ঠে চৌদ্দপাই এলাকায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর একেএম শফিউল ইসলাম। তাঁর নিজ বাসার কয়েক গজ দূরেই ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। ওই শিক্ষক ছিলেন লালল ভক্ত, মুক্তমনা ও প্রগতিশীল ধারার। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একজন সদস্য ছিলেন। ঘটনার দেড়বছর অতিক্রম হলেও গেলেও কে বা করা এ হত্যা কাণ্ডের সাথে জড়িত তা উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
 
এভাবে একেরপর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও সবগুলোর বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি।
 
সর্বশেষ গতকাল শনিবার ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী মুকুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে সাতটার পরপরই নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
 
প্রফেসর রেজাউল করিমকে যে জায়গায় গতকাল খুন করা হয়েছে, তার থেকে দেড়-দুশ’ গজ দূরে শালবাগান এলাকার প্রধান রাস্তায় ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল প্রকাশ্যে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে হেলমেট ও ইট দিয়ে পিটিয়ে মাথাসহ দেহ থেঁতলে দিয়েছিল। এ হত্যায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 
শাহাদত হোসেন জানান, গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ওই শিক্ষকের ছেলে সৌরভ হোসেন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 
 
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হন। এসময় আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলযোগে এসে পেছন দিক থেকে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
 
তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ হত্যার সাথে জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন পুলিশ।
 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক যুগে চার শিক্ষককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল শিক্ষক ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তার। ধারাবাহিক এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন, এভাবে কি চলতেই থাকবে?
 
এসব হত্যাকাণ্ডের কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান।
 
এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইউনূস, ড. তাহের, ড. শফিউলের পর এবার ড. রেজাউল হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষক হারানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা-গবেষণাও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
 
বিবার্তা//প্রতিনিধি//মাজহার
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com