কাকের মাংস কাকে খায় না, তবে পুলিশের মাংস পুলিশে খায়। ট্রাকচাপায় পা হারালাম, কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তার রিপোর্ট হালকা হওয়ার কারণে ঘাতক ড্রাইভার এক সপ্তাহে জামিনে মুক্ত। পুলিশ সদস্য হওয়ার পরও সু-বিচার পেলাম না। সাধারণ মানুষ কীভাবে পাবে?
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো মুন্সীগঞ্জের ট্রাফিক কনস্টেবল কোবাদ আলী ভূইয়া বিবার্তার সঙ্গে আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুলিশের এই কনস্টেবল বলেন, কী হবে বেঁচে থেকে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি না। ভাবছি মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের কী হবে। কে দেখবে ওদের। বেঁচে থাকার আশা করছি না। কারণ ডাক্তার আমাকে বেঁচে থাকার ভরসা দিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, প্রতিদিন খরচ ১৫ হাজার টাকা। এ্রই খরচ কারতে হিমশিম খাচ্ছি। কই পাবো এতো টাকা। প্রতিদিন ৪ ব্যাগ রক্তে ২ হাজার টাকা, ওষুধে ৮ হাজার, রিপোর্টে ৫ হাজার টাকা। এই ব্যায় বহন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
কোবাদ আলী ভূইয়া বলেন, আইজি স্যার আমাকে দুই লাখ টাকা আর ট্রাফিক বিভাগ থেকে ৮৪ হাজার টাকা দিয়েছে। সেই টাকাও শেষ। সব খরচ আত্মীয়-স্বজনরাই দিচ্ছেন। আর কত দেবেন? এখন ভিটামাটি বিক্রি করে চিকিৎসা চালাতে হবে। তবে ভিটামাটি হারিয়ে সন্তানদের পথে বসাতে চাই না।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে টাকা ছাড়া কিছু হয় না। ফ্রি বলতে কিছু নেই। সব ক্ষেত্রে টাকা। টাকা না হলে চিকিৎসা হবে না। প্রতিদিন বহু টাকা খরচ। এই ব্যায়বহুল চিকিৎসা আমার জন্য অসম্ভব। আমি জানি টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। বেশিদিন পৃথিবীতে থাকবো না।
পুলিশ কনস্টেবল কোবাদ আলীর ছোট ভাই মনির হোসেন ভূইয়া বিবার্তাকে বলেন, আমার ভাই বেঁচে থাকবে কি না জানি না। কারণ চিকিৎসক আমাদের সেই ভরসা দিচ্ছেন না। তবুও চিকিৎসা করে যাচ্ছি। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। আমরা সহযোগিতা চাই। আমার ভাই বাঁচতে চায়।
মুন্সীগঞ্জ সদরের ওসি ইউনুচ আলী মুঠোফোনে বিবার্তাকে বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কারণে ঘাতকের জামিন হয়েছে, এটা সঠিক নয়। আদালতে নিয়ম অনুযায়ী ট্রাক ড্রাইভারের জামিন হয়েছে। ট্রাক আটক করা হয়েছে। কোবাদের রক্তক্ষরণ মানেই আমার রক্তক্ষরণ। আমি চাই কোবাদ এটার সুষ্ঠু বিচার পাক। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী করা যায়।
মুন্সীগঞ্জ সদরের এসি(ট্রাফিক) আবু বকর সিদ্দিকি বিবার্তাকে মুঠোফোনে বলেন, কোবাদ আলী ভূঁইয়া পুলিশ বাহিনীর সদস্য। তাকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। তাই তার চিকিৎসার সব ব্যয়ভার পুলিশ বিভাগের। আমাদের সামর্থ অনুযায়ী তাকে খরচ দেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার ভার পুলিশ নেবে। আমরা সব সময় কোবাদের পাশে আছি।
উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল সকালে মুন্সীগঞ্জ সদরের মুক্তারপুর ব্রিজের ঢালে ডিউটিরত অবস্থায় ট্রাকচাপায় দুই পা হারান পুলিশ কনস্টেবলন কোবাদ আলী ভূঁইয়া। ৯ম শ্রেণি পাশ করে ১৯৮৭ সালের ১৮ নভেম্বর ট্রাফিক বিভাগে যোগদান করেন তিনি। পাঁচ ভাই, দুই বোনের মধ্য তিনি মেঝো। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামের রজব আলীর পুত্র। তার বড় ছেলে রনি (১৫) মাদ্রাসায়, ছোট ছেলে নাবিল (১১) ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আর ছোট মেয়ে ফাতেমা খাতুন (৭) জুনিয়র ওয়ানে পড়ে। তার স্ত্রী শিল্পী বেগম গৃহিণী।
বিবার্তা/বশির/মহসিন