দেশের পুঁজিবাজারে আবারো কালো মেঘের ঘনঘটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শেয়ারের দর পতন হতে হতে তা একেবারে খাদের কিনারে গিয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের চেয়ে এবছর পুঁজিবাজারের অবস্থা আরো করুণ বলে মনে করছেন তারা। বাজারের বাস্তব চিত্রেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চলতি বছর ডিএসই’র প্রধান সূচক কমেছে ৩৮৬ পয়েন্ট। বছরের শুরুর দিন সূচক ছিলো ৪ হাজার ৬২৪ পয়েন্টে। বর্তমানে যার পরিমাণ ৪ হাজার ২৩৮ পয়েন্ট। এসময় লেনদেনের পরিমাণ ছিলো ৩৬৬ কোটি টাকা। সম্প্রতি তা নেমে চলে এসেছে ২৭৮ কোটি টাকায়। এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে বাজার মূলধন। বছরের শুরুতে বাজার মূলধন ছিলো ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৮ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার টাকা। বর্তমানে যা দাড়িয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৩৮২ কোটি ৯২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে যেভাবে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেতো এখন তা দেখা যাচ্ছে না। অবস্থা ভালো না থাকায় তারা বাজার বিমুখ হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারীরা বলেন, ২০১০ সালের পুঁজি হারানোর ক্ষত আমরা আজো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। প্রতি বছর চিন্তা করি এবার বাজার একটু ভালো হবে। আর বাজার ভালো হলে আমাদের ক্ষত একটু হলেও শুকাবে। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। প্রতি বছরই আমাদের কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা এসে পড়ছে।
বিনিয়োগকারী শাহীনুর রহমান বলেন, লোকসান পোষানোর আশায় পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ করে আবারো ভুল করেছি। লাভের বদলে প্রতিদিনই লোকসান কতো হলো তা হিসাব করতে হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অবস্থা আরো করুণ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিনিয়োগকারী গৌরাঙ্গ কুণ্ডু বলেন, আগের গভর্নর পুঁজিবাজার বান্ধব ছিলেন না, ভেবেছিলাম তার স্থলে অন্য কেউ আসলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন বাজার এখনো খেলোয়াড়দের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। যে কারণে আমরা বাজারের আসল চিত্রটি দেখতে পাচ্ছি না।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাজারের অবস্থা একটু খারাপ যাচ্ছে এ কথা ঠিক, তবে এতে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তিনি বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার পরমর্শ দিয়ে বলেন, নিজের পুঁজির নিরাপত্তা সবার আগে নিজেরই নিতে হবে। আর তাই বিনিয়োগ করা উচিত ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিতে।
এ প্রসঙ্গে জয়তুন ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের অবস্থাকে এখন আর ভালো বলা যাচ্ছে না। সার্বিক লেনদেনের পাশাপাশি হাউজগুলোতেও লেনদেন কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর। হাউজ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিবার্তা/নাহিদ/মহসিন