প্রতি বছরই মে দিবস আসে যায়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় জমকালো ও যথাযথ মর্যাদায়। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ে এই দিবস তারা আদৌও কি পেয়েছে ন্যায্য অধিকার?
গতকাল ছিল পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিক দিবসের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর চাতালকল শ্রমিকদের নমুনা নেওয়া যেতে পারে।
গতকাল মে দিবসে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর চাতালকল গুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কয়েক শত চাতালকল রয়েছে। অন্যান্য পেশার শ্রমিকেরা যখন মে দিবসকে নিয়ে মাতামাতি করছেন, তখন অনেক চাতালকল শ্রমিকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন।
চাতালকল শ্রমিকদের অনেকেরই মাথাব্যথা নেই মে দিবস নিয়ে। চাতালকল শ্রমিক রোকেয়া খাতুনের সাথে আলাপ করে ঠিক তেমনটাই বোঝা গেছে। তিনি একটু ক্ষোভেই জানান, ‘মে দিবস কি আমগর ভাত দেয়?’ রোকেয়ার সাথে থাকা অন্যান্য চাতালকল শ্রমিক একই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেন তাদের এতো ক্ষোভ?
‘আমগর নিয়তি, আমরা মেইলে কাম (কাজ) করি’ বলছিলেন জাহানারা। তিন বেলা কোনো মতো খেয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মেনেই নিয়েছেন, এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নিয়তি। তাই এখন আর মালিকদের প্রতি কোন ক্ষোভ নয়, ক্ষোভ নিজেদের নিয়তি উপর। ক্ষোভ থাকলেই কি, তাদের কষ্ট তো আর দেখার কেউ নেই। প্রতিদিন সকাল ৮টায় আগে কাজে যেতে হয়। কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দশ থেকে এগারো ঘন্টা অনবরত কাজ করতে হয়। দিন শেষে নাম মাত্র কিছু পারিশ্রমিক। যা দিয়ে দুবেলা দুমুঠো কোন মতো খাওয়া যায়। যে দিন তারা কাজে যেতে পারেন না, সেদিন তাদের দেওয়া হয় না কোনো পারিশ্রমিক।
চাতালকল শ্রমিক রফিক মিয়া বলেন, ‘নয়-দশ ঘণ্টা রইদে (রোদে) কাম করতে করতে মাঝে মাঝে চোক্কে কিছু দেহি না। তবুও ভালো লাগে যহন পোলা মাইয়াগোরে দুই বেলা খাওয়াইতে পারি।’
রফিক মিয়া যখন কথা বলছিলেন তখন তার চোখই বলে দিচ্ছিল, না, এভাবে আর বেঁচে থাকা যায় না। এটা কে বেঁচে থাকা বলে না।
বিবার্তা/সানী/জিয়া