বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) কর্মরত বিদেশিদের অবস্থান খতিয়ে দেখছে সরকার। এখাতে দেশে কমর্রত ৪২৬ জন বিদেশির তালিকা তৈরি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই তালিকা ধরে কাজ করবে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী।
গত বছরের শেষ দিকে, ইতালীয় নাগরিক উন্নয়ন কর্মী তাভেলা চেজারের হত্যাকাণ্ডের পর এই খাতে কমর্রত বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে কোনো বিদেশি এনজিও কর্মী কর্মএলাকা পরিদর্শনে গেলে তার নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ।
তাভেলা চেজারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর এনজিওতে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তারপর নড়ে চড়ে বসে সরকার। এদেশে কর্মরত বিদেশিদের তালিকা তৈরির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নির্দেশনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। খসড়া তালিকায় ৪২৬ জনের অবস্থান নিশ্চিত করেছে এনজিও ব্যুরো। তালিকায়, বিদেশির নাম ও অবস্থান, পার্সপোর্ট নম্বর ও মেয়াদ, দেশের নাম, কমর্রত প্রতিষ্ঠানের নাম তুলে ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এনজিও কর্মকাণ্ডে বিদেশিরা অংশগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক অ্যারোমা দত্ত বিবার্তাকে বলেন, ৭০-৮০ দশকে এইখাতে কমর্রত বিদেশিদের গ্রাম পর্যায়ে যতোটা অংশগ্রহণ ছিল এখন তেমনটি নেই। নানা কারণে তারা মাঠ পর্যায়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ সংকুচিত করেছে। অনেকেই ভয়ে ঢাকার বাইরে যেতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, বিদেশিরা দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যউন্নয়নে কাজ করছে, তাই তাদের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এনজিও ব্যুরো সূত্র জানায়, বিদেশিদের অবস্থান সংক্রান্ত তালিকা খুব স্পর্শকাতর। আইনশৃংখলা বাহিনী এই তালিকা ধরে ভবিষ্যতে নিরাপত্তার বিধানে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে।
তালিকায় দেখা যায়, এইখাতে অবস্থানরতদের বেশির ভাগের অবস্থান গুলশান, মহাখালী, বারিধারা ও বনানী এলাকায়। রাজধানীর বাইরেও বড় সংখ্যক বিদেশি অবস্থান করছে। মূলত যুক্তরাজ্য, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, তাইওয়ানের নাগরিকরা বেশি এদেশে এনজিওখাতে কাজ করছে বলে এনজিও ব্যুরোর তালিকায় তুলে ধরা হয়েছে।
সূত্র জানায়, অনেকে পাঁচ থেকে আট বছরও এদেশে অবস্থান করছে। অনেকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দেশ ত্যাগ করছেন।
এ বিষয়ে ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, সরকার এনজিওখাতে কমর্রত বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে। তবে, এ বিষয়ে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যন্নোয়নে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে প্রায় আড়াই হাজার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
বিবার্তা/মৌসুমী/জিয়া