বছরের পর বছর লোকসানের বোঝা বয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা শেষ ভরসা হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন।
বাজেটে পুঁজিবাজারবান্ধব কিছু থাকবে- এমন প্রত্যাশা তাদের। এজন্য তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি কামনা করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযাযী, পুঁজিবাজারে গত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে ভগ্নদশা চলছে। কোনোভাবেই এর রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরো প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। লোকসান দিতে দিতে বিনিয়োগকারীদের অবস্থা খুবই করুণ।
ব্রোকারেজ হাউসের দেয়া তথ্য মতে, ২০১০ সাল কিংবা তার আগে যারা বিনিয়োগ করেছেন সেই সব বিনিয়োগকারীর লোকসানের পরিমাণ এখনো ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হওয়া মার্জিন ঋণের বোঝা তাদের ক্ষত আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। সেই জন্য তারা আসন্ন বাজেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।
ইতোমধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে রাজস্ব বোর্ডের কাছে বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব। ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার করমুক্ত লভ্যাংশ প্রস্তাবের পাশাপাশি প্রস্তাবনায় ডিএসইর পাঁচ বছরের কর অবকাশের সুবিধার কথা উল্লেখ করা হযেছে।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে যে পাঁচ বছর মেয়াদি ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে, তাতে দ্বিতীয় বছর ৮০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা ছিল, তার সাথে আরও ২০ শতাংসসহ ১০০ ভাগ কর রেয়াত সুবিধা দেয়া রয়েছে। ডিএসই চায় আরো পাঁচ বছর করমুক্ত থাকতে।
এছাড়া ট্রেক-হোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর উৎসে কর ০.০৫ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ডিমিউচ্যুয়ালাইজড শেয়ার হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি হতে অব্যাহতি দেয়ার কথাও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কালো টাকা বিনিয়োগ করার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
ডিএসই কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা সবই বাজারবান্ধব। এতে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। উল্লেখ্য, ডিএসই থেকে কালো টাকার কথা কিছু না বললেও এফবিসিসিআই থেকে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, ডিএসই কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনায় কিছু সংশোধন আনা দরকার। তাদের দাবি, আগামী পাঁচ বছরের জন্য যে কোনো ধরনের লভ্যাংশের করমুক্ত রাখা হোক। এতে তারা কিছুটা হলেও লোকসান পোষানোর সুযোগ পাবেন।
সেই সঙ্গে আইপিওতে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা। তাদের প্রস্তাবনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ করার বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মতে গেইন ট্যাক্স লোকসান পোষানোর ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা।
এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী হাসান মাসুদ বলেন, আমরা প্রতি বছরই বাজেটের দিয়ে তাকিয়ে থাকি ভালো কিছু পাবো- এই প্রত্যাশায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশার প্রতিফলন বাজেটে দেখতে পাই না। আশা করছি এবার নিশ্চয়ই এর প্রতিফলন দেখতে পাবো।
অন্যদিকে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে এনবিআরের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আশা করি বাজেটে এই বিষয়গুলো থাকবে। তাহলে তা পুঁজিবাজারের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
বিবার্তা/নাহিদ/যুথি/জিয়া/কাফী