এক সময় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি চিংড়ির কদর থাকলেও ভেনামী চিংড়ির প্রভাবে এখন তাতে ভাটা পড়েছে। দেশি চিংড়ি গুনেমানে ভালো হলেও বিশ্ব বাজারে বর্তমানে দ্রতবর্ধনশীল ভেনামী চিংড়ির সরবরাহ বেশী থাকায় বাংলাদেশের চিংড়ির চাহিদা কম। ভেনামী জাতের (হাইব্রিড) চিংড়ির চাষ ও বিপুল পরিমাণ উৎপাদন হয় ভারত, চায়না, থাইল্যান্ড, ইন্দানেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওসসহ বেশ কয়েকটি দেশে।
জানা যায়, ভেনামী চিংড়ি বাংলাদেশি গলদা বা বাগদা চিংড়ির চেয়ে দ্রত বাড়ে। অল্প দিনে এর ওজনও বাড়ে প্রায় দ্বিগুন। তাছাড়া এই চিংড়ির দাম দেশি চিংড়ির চেয়ে অনেক কম। সে কারণে বিশ্বের চিংড়ি আমদানীকারক দেশগুলি ঝুকে পড়ছে সস্তা এই খাবারের প্রতি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আমাদের দেশের চিংড়ির কদর কমে যাওয়ার আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশের চিংড়িতে অপদ্রব পুশ ও এন্টিবায়োটিক ওষুধ মিশোনোসহ বিভিন্ন ভেজালের প্রমাণ পাওয়া।
ফ্রোজেন-ফুড এক্সপোর্ট বাইং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ জানান, বিশ্ব বাজারে ভেনামী চিংড়ির চেয়ে বাগদা চিংড়ির দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বাংলাদেশি চিংড়ির চাহিদা দিন দিন কমছে। এছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ বিক্রেতা, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলগুলো কম দামে মানসম্মত ভেনামী চিংড়ি পাওয়ায় বেশি লাভের কারণে বাংলাদেশি চিংড়ি কিনতে অনীহা দেখাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে আমাদের দেশের চিংড়ির চাহিদা।
চিংড়ি থেকে আয় কমে যাওয়ার আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে উৎপাদন কমে যাওয়া। বর্তমানে দেশে চিংড়ির গড় চাহিদা সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদিত চিংড়ির পরিমাণ মাত্র ৭০ হাজার মেট্রিক টন। চিংড়ি সংকটসহ নানা সংকটে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে অর্ধেকেরও বেশি কারখানা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশে ১৬৬টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠা হলেও বর্তমানে লাইসেন্স আছে ৯০টির, আর চালু আছে ৪০টি। খুলনার ৫০টি কারখানার ৩৫টি এবং চট্টগ্রামে চালু আছে ৫টি কারখানা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে ২০ কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি দিয়ে যাত্রা শুরুর পর থেকে থেকে রফতানি আয় বাড়তে থাকে। গত ৪০ বছেরে যা’ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার কোটিতে। ২০০৭-৮ অর্থবছরে বিশ্ব মন্দার কারণে চিংড়িকে বিলাসী খাদ্য হিসেবে ধরা হলেও ২০১০-১১ অর্থ বছরে পরিস্থিতির উন্নতি শুর হয়। পরবর্তী দু’বছরে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় হিমায়িত চিংড়ি শিল্প।
২০১২-১৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চিংড়ি রফতানি করে ৪ হাজার ২’শ ৪২ কোটি টাকা যা’ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯’শ কোটিতে। কিন্তু ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের শুরুতেই কমতে থাকে চিংড়ি রফতানি। বর্তমানে চিংড়ি রফতানির হার কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
এর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হলে সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদন ও রফতানি আয় কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে চিংড়ি চাষীদের আরো সহযোগিতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে চিংড়িতে ভেজাল মিশানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
বিবার্তা/নাহিদ/যুথি