ক্ষুদ্রঋণের চড়া সুদে বিপর্যস্ত গ্রাহক। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) আওতায় স্বাবলম্বী করতে ঋণ বিতরণে নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া স্বত্ত্বেও এসএমই ঋণে উদ্যোক্তাদের বেশি সুদ গুণতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণ নিতে উদ্যোক্তাদের গড়ে ১২ দশমিক ০২ শতাংশ সুদ গুণতে হয়েছে। একই সময়ে সেবাখাতের সুদ হার ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ, বড় শিল্পে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ ও কৃষিতে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে ঋণ গ্রহীতাদের বিভিন্ন সেবা মাশুলসহ দিতে হয় আরও অনেক বেশি।
ওই চারটি খাতের মধ্যে ক্ষুদ্রশিল্পের ঋণ বিতরণে সুদহার বেশি হওয়ায় আমানত ও ঋণে সুদহারের ব্যবধানও (স্প্রেড) বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরামর্শক সুকোমল সিংহ চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, ‘কয়েকটি ব্যাংক এখাতে সুদ বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে সেসব ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে সতর্ক করা হবে। এরপরেও যদি অভিযোগ আসে তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুযারি শেষে ক্ষুদ্র শিল্পের ঋণ বিতরণে গড় সুদ হার ১২ দশমিক ০২ শতাংশ ও আমানতে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ফলে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর সঙ্গে ব্যাংকের সার্ভিস চার্জসহ বিভিন্ন মাশুল যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করা হয়। ফলে গ্রাহককে আরও অনেক বেশি সুদ দিতে হয়।
এরপরের অবস্থানে থাকা সেবাখাতের আমানতে সুদ ৬ দশমিক ১০ শতাংশ ও ঋণে ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ খাতের স্প্রেড ৪ দশমিক ৮২ শতাংশীয় পয়েন্ট।
অন্যদিকে বড় শিল্পে ব্যাংকগুলো ৬ দশমিক ১০ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করলেও ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণ-আমানতে সুদহারের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এছাড়া কৃষিতে ঋণ সুদহার ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও আমানতে সুদ হার ৬ দশমিক ১০ হওয়ায় স্প্রেড ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, এপ্রিল শেষে এসএমই বাদ দিয়ে অন্য খাতগুলোর ঋণ ও আমানতে গড় সুদহার ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্য খাতগুলোর সম্মিলিত স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশীয় পয়েন্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে এসএমইতে ব্যাংকগুলো বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী হয়। কারণ অন্যান্য খাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এর বিপরীতে ১ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। অথচ এসএমই খাতকে উৎসাহিত করতে প্রভিশন সংরক্ষণের হার দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য খাতে ৩ মাস, ৬ মাস ও ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন হারে প্রভিশন রাখতে হলেও এসএমইতে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ৩ মাস বেশি সময় পায়।
বিবার্তা/মৌসুমী/জিয়া