ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে গ্রেফতার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এবং বাম নেতারা। তারা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তিও দাবি করেন।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে রবিবার সন্ধ্যায় আসলাম চৌধুরীকে তার এক সহযোগী এবং চালকসহ আটক করে পুলিশ।
এর আগে, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চট্টগ্রাম পুলিশ।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যখনই তাকে পাওয়া যাবে তখনই গ্রেফতার করা হবে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) সদর দপ্তরে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান তিনি।
রবিবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যেও পর কয়েক ঘণ্টার মাঝেই আটক হন বিএনপি নেতা আসলাম।
বিএনপির এই নেতার গ্রেফতারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জাসদ সভাপতি এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিবার্তাকে বলেন, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধীদের কোনো ক্ষমা নেই। চক্রান্তকারীরা দেশে কিছু করতে না পেরে বিদেশে গিয়ে চক্রান্তে লিপ্ত। অবশ্যই এই ষড়যন্ত্রের বিচার হওয়া উচিত। এই ষড়যন্ত্রের সাথে আসলাম চৌধুরী সরাসরি জড়িত কিনা জানতে চাইলে ইনু বলেন, আমি কোনো কল্পনা করি না। তবে বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।
বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, পত্রপত্রিকায়তো ছবি এসে গেছে। দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। যারাই এর সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি এবং বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খাঁন মেনন আসলাম প্রসঙ্গে বিবার্তাকে বলেন, তাঁর (আসলাম চৌধুরী) গ্রেফতার হওয়া উচিত। এই ষড়যন্ত্রের সাথে আর কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে হবে। তার কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন করতে হবে। এর সাথে যারাই জড়িত থাক সবাইকে আইনের আওতায় এনে জনগণের কাছে এদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইসরাইলভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম অনলাইন ডটকম-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান ও লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফারির সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করা হয় অনলাইনটিতে।
অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া ও ছবি তোলার কথা স্বীকারও করছেন আসলাম চৌধুরী। তবে কোন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করে দেন তিনি। আসলাম চৌধুরীর দাবি, তিনি জানতেন না মেন্দি এন সাফারি ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জানতে পারেন তার সঙ্গে মোসাদের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এখন তার মনে হচ্ছে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কারও ফাঁদে পা দিয়েছিলেন তিনি।
বিবার্তা/বিপ্লব/জিয়া