ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ‘ষড়যন্ত্রে’ অভিযুক্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে দলটি। একই সাথে এ ঘটনায় আরো কয়েকজনের ফেঁসে যাওয়ার আতঙ্কও বিরাজ কাজ করছে নেতাদের মধ্যে।
ওই ‘ষড়যন্ত্রে’ আর কারা কারা জড়িত গ্রেফতারকৃত দলটির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে সে তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে। অবশ্য আসলামসহ ইতোমধ্যে বিএনপির ৭ নেতার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
জানা যায়, গত মার্চ মাসে আসলাম ভারতে যান। সেখানে মোসাদের এক এজেন্টের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তিনি একা উপস্থিত থাকলেও পরিকল্পনায় বিএনপির আরো কয়েকজন নেতা জড়িত বলে গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছেন। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে আলোচনার জন্য আসলামকে তারাই ভারত পাঠিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ইসরায়েলের সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলামের একাধিক ছবিও হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। আর এ সব তার একার সিদ্ধান্তে কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়।
এমনও হতে পারে ওই প্রভাবশালীদের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েছিলেন আসলাম চৌধুরী।
রিমান্ডে আসলাম বলেছেন, মার্চের শুরুর দিকে তিনি ভারতে যান। ওই সফর ছিল কেবল ব্যবসায়িক। ৫ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সে সময় মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার দেখা হয়। ভারতে যাওয়ার পর অন্য একজনের মাধ্যমে সাফাদির সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে জানান আসলাম।
তারা বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় একসঙ্গে ঘুরেছেন, খাওয়া-দাওয়াও করেছেন। আগ্রার মেয়র তাকে সংবর্ধনা দেন। তখন মেন্দি এন সাফাদিকেও সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু মেন্দি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা জানতেন না। ওই সব বৈঠকে ব্যবসায়িক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু রাজনীতি বা সরকার উৎখাতের কোনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন আসলাম।
এদিকে রিমান্ডে আসলাম চৌধুরী ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করছেন না বলে জানা গেছে। তবে ওই ষড়যন্ত্র কীভাবে করা হয়েছে, তার বিস্তারিত গোয়েন্দাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তাদের বৈঠকের ছবি দেখানো হলে তা আসলাম চৌধুরী স্বীকার করেছেন। তবে এর বাইরে তিনি কিছুই বলছেন না।
অন্যদিকে বিষয়টি বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করায় দলের হাইকমান্ড আসলাম চৌধুরীকে তলব করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আসলাম চৌধুরী ভারতে ব্যক্তিগত সফরে গিয়ে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা ও ছবি তোলার ঘটনা স্বীকার করলেও বিএনপির হাইকমান্ডের কাছেও বৈঠক করার কথা অস্বীকার করেন।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ করার না শর্তে বিবার্তাকে বলেন, আসলাম ইস্যুতে বিব্রত পুরো বিএনপি। আমাদের নেত্রী এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আসলাম চৌধুরীকে গুলশানে ডেকেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তাকে আটক করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই আসলামের বিএনপির রাজনীতিতে কতটুকু ভূমিকা আছে তা আমার জানা নাই, তবে দলকে হেয়পন্ন করতে তার এইসব কর্মকাণ্ড যথেস্ট।
বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বিবার্তাকে বলেন, এখন তো দেখছি সাধারণ কর্মী বা বিদেশী কোনো মেহমানের সাথে ছবি তোলাও পাপ! একটি ছবিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ অপরাজনীতি করছে। বর্তমান সরকার যে চেয়ারে বসে আছে তার তিনটি পা ভাঙ্গা, নড়বড়ে অবস্থানে আছে। তাই ক্ষমতা হারাবার ভয়ে তারা সব জায়গাই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়।
বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, সরকার বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য সকসময় একটি ইস্যু খুঁজতে থাকে। ইস্যু না পেয়ে নিজেই (সরকার) একটা ইস্যু সৃষ্টি করে ফায়দা লোটে। এই মিথ্যা একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা যাবে বিএনপির আরো অনেক নিরীহ নেতাকর্মীকে ফাঁসানোর চেস্টা করবে সরকার।
এদিকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আসলাম চৌধুরীর ভারত সফরটি ছিল ব্যক্তিগত। আর ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসরায়েলের সহযোগিতা নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রশ্নই উঠতে পারে না, জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি।
কে এই আসলাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু উপজেলার বাসিন্দা আসলাম চৌধুরী ২০০৩ সালে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি কনফিডেন্স সিমেন্টের হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি লায়ন্সেরও গভর্নর হন। ওয়ান-ইলেভেনে তিনি বিএনপির পক্ষে কাজ করেন। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পান।
২০০৯ সালে দলের জাতীয় কাউন্সিলের পর তিনি বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পান।
একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ায় বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন আসলাম চৌধুরী। এরই পুরস্কারস্বরূপ তাকে এবারের জাতীয় কাউন্সিলে দলের যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বিবার্তা/বিপ্লব/কাফী