‘বিএনপির সাথে নাসিমের কিসের সম্পর্ক’?

‘বিএনপির সাথে নাসিমের কিসের সম্পর্ক’?
প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৬, ০৮:৪৭:৪৩
‘বিএনপির সাথে নাসিমের কিসের সম্পর্ক’?
জাহিদ হোসেন বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+
‘লজ্জা থাকলে সংসদে যাবেন না’- স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সেলিম ওসমান বলেছেন, ‘উনাকে এ কথা মিডিয়ার সামনে বলার অধিকার কে দিয়েছে? উনি বিএনপিকে উসকিয়ে দিচ্ছেন। বিএনপির সাথে তার কিসের সম্পর্ক? আমি নির্বাচিত সংসদ সদস্য। উনি আমাকে জনসম্মুখে হেয় করেছেন।’ 
 
তিনি আরো বলেন, আমি ইতিপূর্বে সংবাদ সম্মেলনে বলেছি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি যে সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছি সে সকল প্রতিষ্ঠানে এবং সংসদ সদস্য হিসেবে আমি সংসদে যাব না।’
 
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠ-বস করায় ফেসবুক ও গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে। পরে এ ঘটনা দেশে টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। সেদিনের ঘটনা এবং বিভিন্ন সমালোচনা নিয়ে বিবার্তার সাথে খোলামেলা কথা বলেন সেলিম ওসমান।
 
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে সকল ঘটনা তুলে ধরবেন বলেও তিনি জানান।
 
শুরুতেই সেলিম ওসমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিমের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমিতো বিরোধী দল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনা ব্যাখা করেছি। এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছি। একজন মন্ত্রী হয়ে উনি কি করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে সংসদ সদস্য হিসেবে আমাকে ছোট করলেন? আমাদের স্পীকার আছেন। উনি সংসদে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারতেন। তিনি মিডিয়ার সামনে একজন এমপির বিরুদ্ধে কিভাবে কথা বললেন? তার কি এই অধিকার আছে? আমিতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য।’
 
সেলিম ওসমান বলেন, অন্যদলের এমপিদের বিরুদ্ধে তিনি কটাক্ষ করে কথা বলতে পারেন না। এ সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার পিছনে আমাদের ভূমিকাও কম নয়। এই আওয়ামী লীগের জন্য এই ওসমান পরিবার জান বাজি রেখেছে। আপনি (নাসিম) আমার লজ্জার কথা বলেছেন। লজ্জাতো আপনাদের হওয়া উচিত। বাইরের লোক দিয়ে মন্ত্রীত্ব চালাতে হয়। বিমানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীতো আপনাদের হায়ার করে আনা।
 
তিনি বলেন, মাইনাস হাসিনা ফর্মুলায় কে কে ছিল তা দেশবাসীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেত্রীও জানেন। নাসিম সাহেবদের মত দুই একজনের অতিকথনের জন্য আওয়ামী লীগ মাঝে মাঝে বিতর্কিত হয় এবং তা ইচ্ছে করেই দলের ইমেজ ছোট করার জন্য তা করেন।
 
সেলিম ওসমান বলেন, নাসিম সাহেব শুধু আমার সম্পর্কেই নয় আমার দলকেও কটাক্ষ করেছেন। আমার দলকে কটাক্ষ করার সাহস তাকে কে দিয়েছে? উনি কেন বিএনপিকে উসকিয়ে দিচ্ছেন? বিএনপির সাথে তার কিসের সম্পর্ক? উনি কি বিএনপির কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ দিতে পারেন?
 
শিক্ষক লাঞ্ছনা প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান বলেন, ঘটনার দিন খবর পাই সকাল সাড়ে দশটার সময় স্থানীয় জনতা প্রধানশিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছিত করে তার কক্ষে তাকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। আমি ঢাকায় থাকার কারণে যেতে যেতে বিকাল চারটা বেজে যায়। আমি যদি জানতাম এ ধরনের ঘটনা ঘটবে তাহলে আমি র্যা বের সহযোগিতা নিতাম। আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরই আমার পা জড়িয়ে ধরে শ্যামল কান্তি বললেন, ‘আপনি আমার ভগবান। আমি অন্যায় করেছি, এই এলাকাবাসী থেকে আমাকে রক্ষা করুন।’ তখন আমি জনরোষ থেকে বাঁচাতে তাকে লঘু শাস্তি দেই। স্থানীয়রা তাকে পুলিশে দিতে চাইলে আমি পুলিশকে রিকয়েস্ট করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
 
সেলিম ওসমান বলেন, ‘যে মহলটি এটা ভিডিও চিত্র ধারণ করল তারা নাটকীয়ভাবে চারপাশ ভিডিও করলো না। চারপাশে হাজার হাজার নারীপুরুষ তার বিচারের দাবিতে শ্লোগান দিচ্ছে তা ভিডিওতে কিছুই ধারণ করা হল না!’
 
তিনি বলেন, পরে হাসপাতাল থেকে সেই শিক্ষকের অনুরোধে তাকে কেবিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। তার চিকিৎসার সকল ব্যয় আমি বহন করি। তখনতো কেউ দশ টাকা বা একটি হরলিক্স নিয়ে তাকে দেখতে গেল না। এই শিক্ষকের আঘাতে একটি ছেলে অজ্ঞান হয়ে গেছে, আজও সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কই সেই মাসুম বাচ্চাকে তো মন্ত্রী দেখতে গেলেন না? দেখতে গেলেন সেই শিক্ষককে। শিশু বা ছাত্রদের শারীরিক আঘাত করার ব্যাপারেওতো হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা আছে।
 
সেলিম ওসমান বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে সেদিন লঘু দেওয়ায় শ্যামল কান্তির স্ত্রী লিখিতভাবে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিখিতভাবে আমাকে ‘ভগবান’ বলে আখ্যা বলেন, ‘আপনার কারণে আমার স্বামীর প্রাণরক্ষা পেয়েছে। আপনি আমাদের ভগবান।’ সে চিঠিও আমার কাছে আছে। 
 
সেলিম ওসমান বলেন, আমি শ্যামল কান্তিকে বলেছিলাম যেহেতু এই স্কুলের শিক্ষক, অবিভাবক এবং এলাকাবাসী আপনাকে চায় না তাই আপনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে আমি আপনার ভবিষৎ পথচলার ব্যবস্থা করে দিব। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত শনিবার সকালে আমার প্রেস সচিবের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করল। যুক্তি হিসেবে সে (শ্যামল কান্তি) টেলিফোনে আমাকে বলল আমার তিন মেয়ের বিয়ের জন্য ৯০ লাখ টাকা, আর ব্যবসা করার জন্য দশ লাখ টাকা। এখন অনুরোধ নয় দাবি করলেন এই টাকা।
 
দলীয় প্রধান এরশাদের সাথে দেখা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্যার (এরশাদ) আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেছেন, যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, হাইকোর্টের রুল জারি হয়েছে, সেহেতু এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পযর্ন্ত কিছুই করার নেই। এরশাদ সাহেব আমাকেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার আহবান জানিয়ে আইনি প্রত্রিয়ায় মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছেন।
 
বিবার্তা/বিপ্লব/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com