দলের যুগ্ম দফতর সম্পাদক এবং জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো জাতীয় পার্টি। সরজমিনে পার্টির বনানী ও কাকরাইল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নেতাকর্মী ও কর্মচারীরা মলিন মুখে বসে আছেন। লিটনের অকাল মৃত্যু কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ লিটনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এরশাদসহ জাপার শীর্ষনেতারা। দলের এই মহৎ উদ্যোগ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাপার বনানী কার্যালয়ে দলীয় ফরম বিতরণের সময় ফখরুল ইসলাম লিটন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মহম্মদ এরশাদ তাৎক্ষণিক তাকে গুলশানের শিকদার মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন।
এরশাদ সে সময় শিকদার মেডিকেলে ফোন করে তার (লিটন) চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। শিকদার মেডিকেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে এরশাদ হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তিনি প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন।
দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতীসহ শীর্ষনেতারা এসময় এরশাদের সাথে ছিলেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা লিটনকে মৃত ঘোষণা করলে এসএম ফয়সল চিশতী, নুরুল ইসলাম নুরুসহ অনেকেই কাঁদতে থাকেন।
দলের মহাসচিব চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য লিটনের পরিবারকে তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা দেন। ফয়সল চিশতী ও অ্যাডভোকেট রেজাউল শিকদার মেডিকেলের এক লাখ দশ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন।
একইসাথে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ছয় লাখ টাকা এবং জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সল চিশতি দলের পক্ষ থেকে তার পরিবারের জন্য আরো পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সন্ধ্যার পরে লিটনের মরদেহ জাপার কাকরাইল কার্যালয়ে আনা হলে তাঁকে দলীয় পতাকা ও পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এসময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী মিলনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দলের এই মহৎ উদ্যোগ প্রসঙ্গে জাপা নেতারা জানান, দলের একজন নেতা বা কর্মীর মৃত্যুতে চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ সবাই যেভাবে তার পরিবারের এবং তার সন্তানের ভবিষৎ চিন্তা করে শারীরিক এবং আর্থিকভাবে এগিয়ে এসেছেন তাতে জাপার লাখ লাখ নেতাকর্মী এই দল এবং তাদের নেতা এরশাদের প্রতি ভালোবাসা বা কমিটমেন্ট অনেকগুণে বৃদ্ধিপাবে।
এ বিষয়ে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বিবার্তাকে বলেন, লিটনের অকাল মৃত্যুতে গোটা পার্টি শোকাহত। আমাদের চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেবও ভীষণ মর্মাহত। এরশাদ সাহেব লিটনকে এতটাই ভালবাসতেন যে, অসুস্থতার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। লিটনের দুটি অবুঝ শিশু দেখে স্যার (এরশাদ) আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। স্যার বলেছেন, আমরা লিটনের পরিবারের জন্য, ওর মাসুম শিশুর জন্য যা যা করা দরকার তা করবো।
রুহুল আমিন হাওলাদার চেয়ারম্যান এরশাদের পাশাপাশি লিটনের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাপা নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত সচিব মেজর অব. খালেদ আকতার বলেন, লিটনকে স্যারসহ আমরা সবাই খুব পছন্দ করতাম। তার সততা, নিষ্ঠা এবং দায়িত্ববোধের কারণে তিনি সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন। যখনই ভাবি সদা হাসিখুশি মানুষটিকে আর দেখতে পাব না তখন ভীষণ কষ্ট হয়।
বিবার্তা/বিপ্লব/মৌসুমী/কাফী