যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা দেয়ার আগেই এ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
প্রথমে ঘোষণা করা হবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পাঁচজনের নাম। এরপর এক পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। ঘোষিত এ কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ছয় মাস আগেই যুবদলের বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বিএনপির জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি এবং পরে বিএনপির নতুন কমিটি ঘিরে থমকে ছিল যুবদলের নতুন কমিটি। দলের নীতি নির্ধারকরা এর মধ্যেই যুবদলের নতুন কমিটি গঠন চূড়ান্ত করছে বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যুবদলের শীর্ষ পদের জন্য বিবেচনায় থাকা কোনো কোনো নেতাকে স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সম্পাদকীয় কিংবা সহ-সম্পাদকীয় পদেও দেখতে চায় দলের হাই কমান্ড। তবে নেতাকর্মীদের আশা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামসহ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে বিএনপি চেয়ারপারসন যুবদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
এদিকে যুবদলের কমিটি ঘোষণা হতে পারে এমন খবর প্রকাশের পর কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে নেতাকর্মীরা অনেকেটাই নড়েচড়ে বসেছেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে।
পদে আসতে চান এমন অনেকেই দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে জোর লবিং অব্যাহত রেখেছেন। ত্যাগী ও নিবেদিতদের আনা হতে পারে এবারের কমিটিতে। তবে বিতর্কিত ও সুবিধাভোগীদের দু’এক জনের নামও শোনা যাচ্ছে নতুন কমিটিতে। যার কারণে সংগঠনটির মধ্যে উৎকণ্ঠাও দেখা দিয়েছে।
বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে সংশোধনী আনা এক নেতা এক পদের কারণে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে যারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারা আর সেই সংগঠনের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।
যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ইতোমধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে অধিষ্ঠ হয়েছেন। যে কারণে যুবদলের নেতৃত্বে তিনি আর থাকতে পারছেন না।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়া ২১১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ২১১ সদস্যবিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বর্তমানে ২৭১ সদস্যবিশিষ্ট। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে আলাল এবং নীরব যুদলের নেতৃত্বে রয়েছেন। প্রতি তিন বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়ে ওঠেনি।
যুবদলের নতুন কমিটিতে খায়রুল কবির খোকন এবং ফজলুল হক মিলন সভাপতি হবার জন্য দৌড়ঝাপ করলেও তাদেরকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করায় যুবদলের নেতৃত্বে তারা আসতে পারছেন না।
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নাম সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রদল নেতা সানাউল হক নীরুর নাম শোনা যাচ্ছে। আর যুবদলের ভেতর থেকে সভাপতি পদের লড়াইয়ে বর্তমান সেক্রেটারি সাইফুল আলম নীরবের নাম সবার প্রথমে রয়েছে।
তবে সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনায় তাকে স্বপদেও বহাল রাখা হতে পারে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান রতন এবং যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলীর নাম শোনা গেছে।
ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো, সাবেক সহসভাপতি নূরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাঈদ ইকবাল টিটু, মোহাম্মদ আলী পাপ্পু, আবু সাঈদ, তরুণ দে’সহ ছাত্রদলের সাবেক অনেক যুবদলের শীর্ষপদে আসার জন্য লবিং করছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্রোহ ঠেকাতে যুবদলের নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির সক্রিয় নেতাদের কেউ বাদ পড়লে তাদেরকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি অথবা মহানগর বিএনপিতে ভালো পদে অধিষ্ঠিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষনেতারা।
নতুন কমিটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে বলেন, আমি যেদিন থেকে যুবদলের রাজনীতি ছেড়েছি সেদিন থেকে আমি যুবদলের কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য বা হস্তক্ষেপ করি না।
এ প্রসঙ্গে যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, রাজনৈতিক পদ কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। আমরা চেষ্টা করেছি এ সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার জন্য। বর্তমান এই একদলীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে যুবদলের অসংখ্য নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। আমিসহ যুবদলের সব নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকারের হয়রানি শিকার হচ্ছি। তারপরও যুবদলের কোনো নেতাকর্মী মাঠ ছাড়েনি।
নতুন কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুবদলকে বিকশিত করার জন্য অতীতে কারা ভালো ভূমিকা নিয়েছেন এবং কাকে নেতৃত্বে আনলে এই সংগঠন আরো শক্তিশালী হবে তা আমাদের দেশনেত্রী ভালো করেই জানেন। আমরা সবাই নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল।
বিবার্তা/বিপ্লব/মৌসুমী/কাফী