চাপমুক্ত হতে পারছে না বিএনপি

চাপমুক্ত হতে পারছে না বিএনপি
প্রকাশ : ০১ জুন ২০১৬, ২১:১২:২২
চাপমুক্ত হতে পারছে না বিএনপি
জাহিদ হোসেন বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+
কিছুতেই চাপমুক্ত হতে পারছে না বিএনপি।  দীর্ঘদিন পর ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলকে চাঙ্গা করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও বর্তমানে তাও থেমে গেছে।
 
নতুন জাতীয় ও স্থায়ী কমিটি চূড়ান্ত করা নিয়ে জটিলতা, ঘোষিত আংশিক কমিটিতে পদ-বাণিজ্যসহ নানা সমালোচনা এবং নতুন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা না কাটতেই দলীয় চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে নতুন চাপে পড়েছে বিএনপি।
 
বিভিন্ন মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়া জোরদার এবং শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিপ্রেক্ষিতে এ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ সাময়িকভাবে জামিনে থাকলেও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন দলের অধিকাংশ শীর্ষনেতা। গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনেও দিন কাটাচ্ছেন কেউ কেউ। এতে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝেও হতাশা দেখা দিয়েছে।
 
বিএনপিকে চাপে রাখতে সরকার পরিকল্পিতভাবেই নেতাদের কারান্তরীণ করার ষড়যন্ত্র করছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি আইনগতভাবে মোকাবিলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বিবার্তাকে বলেন, আমরা যখন সফল কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি, ঠিক সেই মুহূর্তে দলের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল করার জন্যই চেয়ারপারসনসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা জোরদার করা হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, এ অবস্থা মোকাবেলায় আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করার কাজ অব্যাহত থাকবে। এই মুহূর্তে আন্দোলনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো জোরদার হওয়ায় দলের শীর্ষ নেতারা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। সম্প্রতি মামলার কার্যক্রম বিষয়ে জানতে দলের শীর্ষ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া।
 
সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার বিরূদ্ধে ১৯টি মামলার খড়গ ঝুলছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ জুন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওইদিন তিনি হাজির না হলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
 
সর্বশেষ বুধবার রাতে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় দায়ের করা নাশকতার একটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এতে বিএনপির ২৬ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সবাইকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। ১৩ জুন এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।
 
এ নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হলো বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মহানগর বিএনপির সদস্য-সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মির সরাফত আলী সফু প্রমুখ।
 
২৪মে যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়াকে ১৮ জুলাই হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া খালেদা জিয়ার  প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বরকতউল্লা বুলু, আমানউল্লাহ আমান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
 
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মামলা প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই। নেতাদের হয়রানি করতেই এসব মামলা করা হয়েছে।
 
তিনি জানান, বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে অনেকেই জামিন নিতে কোর্টে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।
 
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা জামিন নিতে গেলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এতে অন্য নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য-সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা আত্মগোপনে আছেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
 
এ প্রসঙ্গে বিএনপির আইনজীবী প্যানেল সদস্য অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা মানেই গ্রেফতারের নির্দেশ। তাই গ্রেফতার আতঙ্ক স্বাভাবিক।
বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবার নামেই অসংখ্য মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী সরকারের পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নেই, মানবতাবোধ বলে কিছু নেই। তবে তাকে গ্রেফতার করা খুব একটা সহজ হবে না। দেশনেত্রীকে গ্রেফতার করার পরিণাম ভালো হবে না। দেশের মানুষ তা সহজভাবে মেনে নেবে না।
 
বিবার্তা/ বিপ্লব/ মৌসুমী/কাফী
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com