জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা, ভাইস-চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসহ সাংগঠনিক সম্পাদকীয় পদগুলোতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩৭ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের তালিকা প্রকাশ করলেও কেউ কেউ এখনো প্রেসিডিয়াম পদ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এজন্য রাতদিন পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস, এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্টপার্ক, জাপা মহাসচিবের বাসভবন, বনানী কার্যালয়, রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবন ও জিএম কাদেরের উত্তরার বাসভবনে নেতারা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন।
এছাড়াও এদের বাইরে কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করছেন পছন্দের পদ পাওয়ার জন্য। তবে এবার যোগ্য কর্মীদেরই কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখতে চান এরশাদ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা সফলভাবে কাউন্সিল করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান ৩৭ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের তালিকা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম পরিষদ গঠনের এখতিয়ার শুধু স্যার এরশাদের। অন্য পদগুলোতে আসার জন্য নেতাকর্মীদের তদবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি বড় দল। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে দলটি নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বড় দলে পদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা থাকবেই। তবে এবার সৎ, যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাবেন।
১৪ মে দলটির ৮ম কাউন্সিলে চেয়ারম্যান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদের শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি।
তবে পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, চলতি রমজান মাসেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কমিটিতে দলের দুঃসময়ে সক্রিয় থাকা নেতারা ঠাঁই পাবেন।
তহবিল শক্তিশালী করতে উদ্যোগ
সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি গঠনের আগেই পার্টির দলীয় তহবিল শক্ত করতে চান এইচএম এরশাদ। আগের সব বকেয়া পরিশোধ সাপেক্ষে নতুন কমিটিতে অন্তুর্ভুক্ত হতে হবে এমন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতারা বিশেষ করে দীর্ঘদিন যারা দলীয় তহবিলে নিয়মিত চাঁদা দেননি তারা একটু বিপাকেই পড়েছেন।
৩৭ প্রেসিডিয়ামের সব সদস্য চাঁদা পরিশোধ করেছেন। ৪১ জন ভাইস-চেয়ারম্যান, ৩৪ উপদেষ্টা, ১৬ যুগ্ম মহাসচিব, ৩৬ সাংগঠনিক সম্পাদক, ২৩ বিভাগীয় সম্পাদক, ২৩ যুগ্ম সম্পাদক এবং ৯৯ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে জাপার এই কেন্দ্রীয় কমিটি। মোট সদস্য হবে ২৯৯।
সবাইকে অতীতের বকেয়া মাসিক চাঁদা পরিশোধ করতে হবে। প্রেসিডিয়াম এবং সংসদ সদস্য তিন হাজার টাকা, উপদেষ্টা দুই হাজার পাঁচশ, ভাইস-চেয়ারম্যান দুই হাজার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এক হাজার এবং সদস্যদের পাঁচশ টাকা হারে দলীয় ফান্ডে জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
জানা গেছে, এমন অনেক নেতা আছেন ২০১০ সালের জাপার সম্মেলনের পর এখনও কোনো টাকাই পরিশোধ করেননি। সে হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্যের কাছে ৫০ হাজারের বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে।
জাপার ৩৭ প্রেসিডিয়ামে আছেন যারা
এইচ এম এরশাদ বৃহস্পতিবার ৩৭জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন।
এরা হলেন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আবুল কাশেম, দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম হাবিব, গোলাম কিবরিয়া, সাহিদুর রহমান, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, ফকরুল ইমাম, মুজিবুল হক, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, সালমা ইসলাম, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, একেএম মাঈদুল ইসলাম, মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন আহমেদ, আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান, মহসিন রশীদ, মশিউর রহমান, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সোলায়মান আলম শেঠ, আতিকুর রহমান ও নাসরিন জাহান।
ঘোষিত নতুন উপদেষ্টা ও ভাইস-চেয়ারম্যান
৯ জন উপদেষ্টার মধ্যে রয়েছেন, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি (সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা), আ ন ম শাহজাহান, রিন্টু আনোয়ার, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মেরিনা রহমান, সৈয়দ দিদার বখত্, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার এবং সোমনাথ দে।
১৮ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে রয়েছেন, মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, নাসির মাহমুদ, মো. নুরুল আমিন শানু, ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবন, এম এ তালহা, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এমপি, মাহ জাবীন মোরশেদ এমপি, মো. নুরুল ইসলাম মিলন এমপি, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, শেরীফা কাদের, খন্দকার আব্দুস সালাম, সালাউদ্দিন আহমেদ, কোরবান আলী, অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন কাদেরী, অ্যাডভোকেট একরামুর হক, শামসুল আলম মাস্টার এবং এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী।
বিবার্তা/বিপ্লব/কাফী