জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহীর কমিটি ২৯৯ সদস্য বিশিষ্ট হলেও জাপার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে নতুন-পুরনো আট শতাধিক নেতা আবেদন করেছেন। বাদ পড়ছেন পূর্বের কমিটির এক চতুর্থাশং নেতা। এখানে স্থান পাচ্ছে দলের মেধাবী তরুণ এবং ত্যাগী নেতারা। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর বাড়ানো হতে পারে বলেও জানিয়েছেন দলটির শীর্ষনেতারা।
নেতারা এক হাজার টাকার বিনিময়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আবেদনকৃত নতুন সদস্যদের সাক্ষাৎকারপর্বও শেষ করেছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যারা বিগত কমিটিতে ছিলেন, তাদের সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন হয়নি। যারা নতুন কেবল তাদেরকেই যোগ্যতা প্রমাণে এরশাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৩ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত এরশাদ কেন্দ্রের পদ পেতে ইচ্ছুক এমন সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেন। প্রায় পাঁচশতাধিক দলীয় নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্য থেকে চার দিনে শতাধিক যোগ্য নেতা এরশাদ বাছাই করেছেন বলে দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় নেতা হতে হলে চেয়ারম্যানের মুখোমখি হতে হবে পার্টির এই সিদ্ধান্তে খুশি জেলা ও তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূল একাধিক নেতা বিবার্তাকে বলেন, আমরা তৃণমূলে রাজনীতি করি। যে কারণে আমাদের নেতা আমাদের আদর্শ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে সামনা-সামনি বসে কথা বলার সৌভাগ্য হয় না। এই সুযোগে নেতার সাথে সরাসরি কথা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পেলেও আর কষ্ট নেই।
এই নতুন মুখের অধিকাংশ দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী হিসেবে যার যার জেলা উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্য থেকেও অনেকে মূল দলের কেন্দ্রে ঠাঁই পেতে নানামুখী তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় ছাত্রসমাজ, মহিলা পার্টি, শ্রমিক পার্টি ও কৃষক পার্টির শতাধিক নেতা জাপার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে চান বলে জানা গেছে।
গত ১৪মে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আবারো পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তার স্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, তার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের কো-চেয়ারম্যান ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জাপার মহাসচিব নির্বাচিত হন।
ওই কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলররা জাপার অন্যান্য নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেন। সে অনুযায়ী এরশাদ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ৩৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচিত করেছেন কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা। অবশিষ্ট তালিকা বাছাইয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
জানা গেছে, এবারই প্রথম ফরম পূরণ ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর এই সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন খোদ দলের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের সাথে দলের শীর্ষনেতা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস এবং রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায়ও উপস্থিত ছিলেন।
দলের যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত তরুণ ও মেধাবীদের দলের কেন্দ্রীয় পদে ঠাঁই দিতে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সুনীল শুভ রায়।
তিনি বিবার্তাকে বলেন, জাতীয় পার্টি দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্বে আসতে চান। দলের চেয়ারম্যানও চান এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ্য মেধাবী, পার্টির জন্য নিবেদিত প্রাণ ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসুক। সে জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে সাক্ষাৎকারের মধ্যদিয়ে দলের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে নতুন পুরনো সবাই ব্যাপক তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের কাছে তদবিরবাজরা ভিড় বেশি করছেন। এ ছাড়া কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভ রায়, এম ফয়সল চিশতীসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার কাছেও ধর্ণা দিচ্ছেন বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।
তবে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি। তিনি এ বিষয়ে বিবার্তাকে বলেন, জাতীয় পার্টি অনেক বড় ও শক্তিশালী দল। বিশেষ করে সফল কাউন্সিলের পর পার্টি শহর বন্দর, গ্রামগঞ্জে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
অনেক নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে চান। স্বাভাবিক ভাবে তারা নেতাদের কাছে একটু সুপারিশ আশা করতেই পারে। তবে আমাদের স্যার (এরশাদ)এবার নিজে যোগ্য, মেধাবী, দলের জন্য নিবেদিত ও বয়সে প্রবীণের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত তরুণদেরকে প্রধান্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
বিবার্তা/বিপ্লব/মৌসুমী/কাফী