সদস্য ও অসদস্যের কাছ থেকে আমানত ও সঞ্চয় না তুলতে দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডকে নির্দেশনা দিয়েছে সমবায় অধিদফতর। একই সাথে এই প্রতিষ্ঠানের কোনো শেয়ার বিক্রি না করার জন্যও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠান।
সমবায় সমিতির নামে নিবন্ধন নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার প্রমাণ মেলার পর মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ সোসাইটিকে কয়েক দফায় সতর্ক করে সমবায় অধিদফতর। সর্বশেষ গত ৯ জুন আমানত ও সঞ্চয় গ্রহণ না করতে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়। সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মাদ গালীব খান। তবে, সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এই সংস্থা।
নিষেধাজ্ঞার পরও সংস্থাটি তাদের বেআইনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে কীনা তা তদারকির জন্য ঢাকার প্রতিটি শাখায় দুইজন করে পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এর আগে, আইন ও বিধির শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে শাখা খুলে ব্যাংকের মতো সমিতির কার্যক্রম করায় কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না মর্মে কমিটির কাছে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় জেলা সমবায় কার্যালয়। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে গত মাসের শেষ সপ্তাহে দেয়া চিঠিতে সমবায় সমিতি আইনের ৫৩(খ) ও (ছ) ধারা অনুযায়ী উক্ত সমবায় সমিতিকে কেন অবসায়নে ন্যস্ত করে নিবন্ধন বাতিল করা হবে না, সমিতিতে কেন নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে না এবং ফৌজদারী আইনে কেন মামলা দায়ের করা হবে না মর্মে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়। চিঠিতে ১৫ দিনের মধ্যে মতামত দিতে বলা হয়। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও চিঠির জবাব দেয়নি মার্কেন্টাইল কর্তৃপক্ষ।
সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমীয় কুমার চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানান, বারবার সতর্ক করার পরও অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করেনি মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ। তাই সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে গ্রাহকদের আমানত যাতে সুরক্ষা পায় সেই লক্ষ্যে সমিতিতে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, ব্যাংকিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ধরনের সমিতির সঙ্গে লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহকদের সতর্ক করে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় বলেও জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুখপাত্র।
‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার ও অবৈধভাবে লেনদেন না করতে দি মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি.কে ইতিপূর্বে কয়েকদফা নির্দেশনা দেয় সমবায় অধিদফতর। তারপরও সংস্থাটি সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ (সংশোধিত ২০০২ ও ২০০৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা, ২০০৪ লঙ্ঘন করে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে।
সারাদেশেই কার্যক্রম পরিচালনা করে দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ। সমিতিটিতে আমানতকারীর সংখ্যা দুই লাখ ১৩ হাজার ৬১৭ জন। বিনিয়োগ গ্রহণকারীর সংখ্যা ৬২ হাজার ৮১ জন। মোট আমানতের পরিমাণ ৮৩৫ কোটি টাকা। তবে, সমিতিটির কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। সমিতির সদস্যসংখ্যা ৭০ হাজার দাবি করা হলেও এই তথ্য বিভ্রান্তিকর বলে মনে করে সমবায় অধিদফতর।
বিবার্তা/ মৌসুমী/হুমায়ুন