মৌচাক মার্কেট ভেঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট !

মৌচাক মার্কেট ভেঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট !
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৬, ১৫:৪৬:০৪
মৌচাক মার্কেট ভেঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট !
আলী মোহাম্মদ ঢালী
প্রিন্ট অ-অ+
মার্কেট বন্ধ হবে না।ছয় সপ্তাহ পরে কোর্টে আবেদন করবো, সময় বৃদ্ধি করবো।মার্কেট চালু রেখে পার্ট টু পার্ট বন্ধ রেখে রিপেয়ারিং  কাজ করবো। গাউসিয়া মার্কেট, বঙ্গমার্কেট, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের কাজ এভাবেই হয়েছিলো। আমরাও একইভাবে কাজ করব। এ সময়ের মধ্যে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেটার দায়ভার আমরা বহন করব।
 
এসব কথা বলছিলেন রাজধানীর মৌচাক মার্কেট বণিক সমিতির সভাপতি সাঈদুর রহমান পিন্টু।
 
তিনি বলেন, মার্কেটের বয়স মাত্র ৪০ বছর। ফলে মার্কেট ভেঙ্গে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এ পর্যন্ত দেশে অনেকবার বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু এই মার্কেটের সামান্য ক্ষতিও হয়নি। মার্কেটের সব জায়গা আপনি ঘুরে দেখতে পারেন।
 
মার্কেট ভাঙ্গার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পেছনে একটা অসৎ উদ্দেশ্য আছে দাবি করে সাঈদুর রহমান পিন্টু বলেন,  মার্কেটের মালিক তিনজন - মরহুম আশরাফ কামাল পাশা,মো. মোতাহার হোসেন ও মো.আবুল হোসেন।এদের মধ্যে আশরাফ কামাল পাশা বাকি দুই মালিককে না জানিয়ে কোর্টে গিয়েছিলেন। বাকি দুই মালিক এঘটনা সম্পর্কে অবগত নন।কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো স্বাক্ষর ও মতামত কিছুই নেননি আশরাফ। তিনি একাই শুধু কোর্টে গিয়েছেন। 
 
তিনি বলেন,আশরাফের উদ্দেশ্য ছিল মৌচাক মার্কেট ভেঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট করা।তিনি ভেবেছিলেন,২০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট করবেন, তাহলে তার কয়েকশ কোটি টাকা ইনকামের একটা পথ তৈরি হবে।তা তিনি ২০তলা কেন,১০০তলা করুন।আমাদের কথা হলো,আমরা ব্যবসা করতে চাই।মার্কেট ভেঙ্গে ফেললে আমাদেরকে দুই বছরের সংসার খরচ দিতে হবে। নইলে তাকে আমরা মার্কেট বন্ধ করতে দেব না।
 
তিনি আরও বলেন,মরহুম আশরাফ কামাল পাশা ছয় মাস আগে কয়েকটি দোকান বিক্রি করে প্রায় সাত কোটি টাকা দোকান মালিকদের কাছ থেকে নিয়েছেন।এই মার্কেটে ৫০০ দোকান রয়েছে।এখন তিনি যদি মার্কেট বন্ধ করে অ্যাপার্টমেন্ট করেন তাহলে দোকানদারদের কী অবস্থা হবে ?
 
উল্লেখ্য,এ মাসের শুরুর দিকে মৌচাক মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট ।বুয়েটের প্রতিবেদনের আলোকে সংস্কার বা বিল্ডিং কোড অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সক্ষমতা সনদ না পাওয়া পর্যন্ত এসব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
 
মৌচাক মার্কেট বনিক সমিতির পক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার এ আদেশ দেন।একইসঙ্গে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।তবে ঈদকে কেন্দ্র করে দোকান মালিকদের বিক্রির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ছয় সপ্তাহ দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়।তবে এটাও বলা হয় ক্রেতা ও দোকানিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৌচাক মার্কেটে যেতে পারবেন নিজ দায়িত্বে। কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতার দায় নেবে না অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ।
 
জানা যায়,২০১৪ সালের ৭মে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) মার্কেটের মালিক মরহুম আশরাফ কামাল পাশাকে চিঠি দেয়।চিঠিতে বলা হয়,প্রাচীন মৌচাক ভবনটি বহুল ব্যবহৃত এবং এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। বর্তমান ইমারতটি জীর্ণ ও দৃশ্যত ঝুঁকিপূর্ণ প্রতীয়মান হয়েছে।তাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভবনের কাঠামোগত উপযুক্ততা প্রমাণ করতে হবে।
 
এর ধারাবাহিকতায় বুয়েটের দেয়া সুপারিশ রাজউকে জমা পড়ে,যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক গত ২ মে ভবন মালিককে আরেকটি চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ভবনের কাঠামোগত ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দায়িত্বহীনভাবে মার্কেট ব্যবহার অব্যাহত রাখা হয়েছে,যা জীবন ও সম্পদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
 
চিঠিতে ঝুঁকির কথা জানিয়ে দোকান খালি করে ভবনটি সংস্কার করতে বলা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ভবন মালিক আশরাফ কামাল পাশা হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট মার্কেট বন্ধের নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে দোকান মালিকরা চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন করেন।
 
বিবার্তা/আলী/মৌসুমী/হুমায়ুন
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com