গত ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় বিএনপিতে বাড়ছে হতাশা ও কোন্দল। অপেক্ষায় থাকা পদপ্রত্যাশী অনেকেই এখন বিরক্ত ।তবে কাউন্সিলে দলীয় প্রধানকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সর্বময় ক্ষমতা দেয়ায় এ নিয়ে কথা বলারও সুযোগ নেই তাদের। তাই যে যা-ই বলছেন, সব আড়ালে-আবডালে। আর কবে নাগাদ এই কমিটি গঠন সম্ভব হবে তাও জানেন না কেউ।
বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলররা নির্বাহী ও স্থায়ী কমিটি গঠনের একক ক্ষমতা দেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
এর আগে ২০০৯ সালের কাউন্সিলেও খালেদা জিয়া এই ক্ষমতা পেয়েছিলেন। সেবার কাউন্সিলের ছয় দিনের মাথায় প্রথমে স্থায়ী কমিটি এবং ২০ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠন করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবার তা হয়নি।
কিছুদিন আগেও বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ছিল চাঙ্গা ভাব। কিন্তু কাউন্সিলের পর তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দলটি। ফলে হতাশ নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও বন্ধ। অঙ্গসংগঠন কিংবা ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। জনগুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে দলের রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিও নেই।
এছাড়া অভিযোগ আছে নেতারা ব্যস্ত অভ্যন্তরীণ দলাদলিতে ও গ্রুপিং-তদবিরে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেতে যে যার মতো করে দৌড়ঝাঁপ করছেন। নিজের পদ পাওয়ার পাশাপাশি গ্রুপ সমর্থকদেরও পদ পাইয়ে দেয়ার জন্য বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন নেতারা।
সদ্যসমাপ্ত কাউন্সিলের পর আংশিক কমিটি ঘোষণা হলেও তাতে স্বস্তি মেলেনি নেতা-কর্মীদের । বরং কয়েকটি পদ নিয়ে দলাদলিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, অতি মূল্যায়ন কিংবা প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় চলছে চাপা ক্ষোভ। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও চলছে নেতাদের মধ্যে। পদহীন নেতাদের গা ছাড়া ভাব। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। দল কিংবা দেশের স্বার্থ নিয়ে কারও কোনো চিন্তাভাবনা নেই।
ষষ্ঠ কাউন্সিলের ১০ দিন পর ৩০ মার্চ খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দলের নতুন মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষের নাম ঘোষণা দেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এর পরের ধাপে ৯ এপ্রিল সাতজন যুগ্ম মহাসচিব আর ৯ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল একজন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২০ জন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আটকে আছে বিএনপির কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া।
দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ঘোষিত আংশিক কমিটিতে অনেক অনভিজ্ঞ ও জুনিয়র নেতাকে দেয়া হয়েছে বড় পদ। আবার সিনিয়র অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন কাঙ্ক্ষিত পদ থেকে। নতুন নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অনেক নেতাকেও মূল্যায়ন করা হয়নি। এছাড়া কমিটি ঘোষণা প্রক্রিয়া থেমে থাকায় দীর্ঘ তিন মাস ধরে অনেক সিনিয়র নেতা পদবিহীন অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিও এড়িয়ে চলছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাকি কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন। তবে তিনি এ নিয়ে তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে পদের প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যা দেরিতে পাওয়া যায় তার প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকে।
তিনি বলেন, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে স্থান দেয়ার জন্যই আমাদের নেত্রী একটু সময় নিচ্ছেন। কমিটি নিয়ে বিএনপির কোনো নেতা হতাশ নয়।
বিবার্তা/বিপ্লব/মৌসুমী/হুমায়ুন