রাজধানীর শ্যামপুর বালুর মাঠ পশুর হাটটির ইজারাদার গত বছর ছিলেন জাতীয় পার্টির কদমতলী থানার সদস্য-সচিব শেখ মাসুক রহমান। তিনি স্থানীয় এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ভাগ্নে। এবারও হাটটি ইজারা নিতে আগ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার সংরক্ষিত আসনের এমপি সানজিদা খানমই কৌশলে হাটটির ইজারা নিয়ে নেন। এ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা গত বুধবার সিটি মেয়র সাইদ খোকনের সাথে দেখা করে হাটটির ইজারা বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায় ওখানে হাট বসতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন তারা।
পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে তারা একই দাবি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছেও। শুধু তাই নয়, হাটটির ইজারা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্যামপুর বালুর মাঠে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভ করেন।
কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৫২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাসিম মিয়া বলেন, আমরা (আ’লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা) মেয়র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। রোববারের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলে সোমবার থেকে লাগাতর আন্দোলনে যাবো আমরা।
জানা গেছে, হাটটির ইজারাদার ও ইজারাবঞ্চিতদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ নিয়ে কোনো মীমাংসা না হলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে পারে।
আরো জানা গেছে, প্রতি বছর শ্যামপুর বালুরমাঠের পশুর হাট নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমাঝোতা হয়। এবারও জাতীয় পার্টির এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয়, সবাই মিলেমিশে গরুর হাট পরিচালনা করা হবে। প্রথম দিকে সানজিদা খানমও এ বিষয়ে একমত ছিলেন।
কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসিম মিয়া বিবার্তাকে বলেন, তিনি (সানজিদা) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সন্ত্রাসী ফালান ও ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরকে দিয়ে টেন্ডার ড্রপ করে কৌশলে গরুর হাটটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যান।
শুধু শ্যামপুর বালুর মাঠ পশুর হাটই নয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) আওতাধীন পশুর হাট নিয়ে ইজারাদার ও ইজারাবঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শাসকদলীয় নেতাদের মধ্যে কে কোন হাট নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি গ্রুপিং চলছে।
তবে আগাম সংঘর্ষের আশঙ্কা নিয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ঈদে পশুর হাটে আধিপত্য নিয়ে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে তৎপর থাকতে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লায়, চেকপোস্টে, ফুট পেট্রোল, ভেহিক্যাল পেট্রোলসহ দৃশ্যমান পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশনা দেন তিনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কেউ যাতে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি করতে না পারে সে জন্য আগ থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। চাঁদাবাজিতে যারা যুক্ত তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আর যেখানে সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে সেখানে আগাম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সড়ক ও মহাসড়কে পশুবোঝাই ট্রাক নিয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে।
ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, এবার উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৮টি ও দক্ষিণে ১১টি এবং গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ২০টি হাট বসছে। এছাড়া সীমানা বেড়ে যাওয়ায় আরো ৫টি নতুন হাট বসতে পারে। যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত সোমবার হাট-বাজার ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইজাদারদের দেয়া ২৬টি শর্ত পালনে জোর দেয়া হয়। সর্বমোট ৪ দিন হাট বসার কথা থাকলেও প্রতি বছর অন্তত সপ্তাহখানেক বসে পশুর হাট।
ডিএসসিসি’র একাধিক সূত্র জানায়, ইজাদারদের অধিকাংশই ব্যাবসায়ী। তবে তাদের পেছনে রাজনৈতিক নেতারা রয়েছে। ধুপখোলা, কামরাঙ্গীরচর, সাদেক হোসেন খোকা মাঠ ও পোস্তগোলাসহ বেশ কয়েকটি হাটের ইজারাদারের পেছনে একাধিক রাজনৈতিক নেতা কাজ করছেন। এরূপ প্রত্যেকটি হাটের পেছনে রাজনৈতিক নেতারা জড়িত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ডিএমপি’র পক্ষ থেকে আসন্ন পশুর হাটের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। পুলিশের করা একটি প্রস্তাব সিটি করপোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ) কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও পশুর হাটের স্থান নির্ধারণ, হাটে গবাদি পশু ঢোকার তারিখ নির্ধারণ করে পূর্বে থেকেই পুলিশকে অবহিত করবে সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, নগদ অর্থ লেনদেন হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের বুথ/এটিএম বুথ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হবে। প্রতিটি পশুর হাটে সিসিটিভি মনিটিরিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা (রাত্রীকালীন ছবি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) স্থাপন, জাল নোট সনাক্তকারী মেশিনের ব্যবস্থা, হাটের চৌহদ্দি (চারপাশের সীমানা) নির্ধারণপূর্বক দরপত্রের শর্তে চৌহদ্দি উল্লেখ, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, পশুর হাটের হাসিলের হার নির্ধারণসহ দৃশ্যমান স্থানে বড় করে ব্যানার টাঙাবে সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা।
পশুর হাট নিয়ে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও করণীয় নিয়ে চলতি সপ্তাহে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এডিসি (মিডিয়া) ইউসূফ আলী।
বিবার্তা/বিপ্লব/হুমায়ুন