ঘুরে বেড়াতে কার না ভাললাগে। যারা একটু বেড়াতে ভালোবাসেন তারা হরহামেশাই নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে চান, চান নতুন কিছু দেখতে, নতুন কিছু জানতে। তাদের জন্য জানাচ্ছি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ও হোছনাবাদ ইউনিয়নের জঙ্গল নিচিন্তাপুর পাহাড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম ও একমাত্র অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক (পক্ষীশালা ও বিনোদন কেন্দ্র)। দেশে দীর্ঘতম ২ কিলোমিটার পাহাড় বিস্তৃতি ক্যাবল কার স্থাপন হয়েছে এ পার্কে। পার্কটির নামকরণ হয়েছে ‘শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের কোদালা বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫৫০ একর বনভূমিতে অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। সারা বিশ্বের মধ্যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে এ ধরনের পার্ক। এটি এমন একটি পার্ক যেখানে শুধু পাখি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য একটি অভয়ারণ্যভিত্তিক বৃক্ষ আচ্ছাদিত সবুজ পাহাড়ি বন আছে। এখানে হাজার হাজার বুনো পাখি উড়ে বেড়ায়। তাদের ডাকে ডাকে জেগে ওঠে পুরো সবুজ বন। আর বুনোপথে ঘুরে বেড়ায় বিনোদনপ্রেমী মানুষ।
পার্কের অভ্যন্তরে অন্যান্য বৃক্ষের পাশাপাশি পাখিকুলের প্রাকৃতিক খাদ্যের ব্যবস্থার মাধ্যমে পাখিদের অভয়ারণ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ সূত্র জানায়, পার্কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি এবং পাখিদের জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা করতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সেগুন বাগান এলাকায় বনবিভাগের জমিতে খনন করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। পাখিদের পানীয়, স্নান এবং আহার-বিহারে পানির ব্যবহারসহ প্রকৃতি ও পাখিদের জীবনধারার অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা হয় এই লেকে।
সড়ক আর বনাঞ্চলের মাঝখানে দ্বীপ সমেত কৃত্রিম লেকের দারুণ উপভোগ্য এই দৃশ্য আকর্ষণ করবে পর্যটকদের। লেকের মাঝখানে গড়ে তোলা দ্বীপ থেকে তীরে আসা-যাওয়া করার জন্য রয়েচ্ছে আকর্ষণীয় ব্রীজ। পাখিশালার সদর দরজায় বিশালাকারের লেক এবং লেকের মাঝে দ্বীপের আকর্ষণ ছাড়াও এর ভিতরে একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় কৃত্রিম হ্রদ।
এসব হ্রদ পাখিশালার বাসিন্দা হরেক প্রজাতির পাখি ও পশুর পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দারুণ শোভা ছড়াচ্ছে। লেক খনন ও ব্রীজ নির্মাণের পাশাপাশি হরেক জাতের পশুখাদ্যের বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয় এই পার্কে। পাখিশালা এলাকার বাগানের শূন্যস্থানে এসব বৃক্ষের চারা রোপণ করে পাখিকুলের প্রাকৃতিক খাদ্যের সংস্থান করা হচ্ছে।
এ পার্কটিতে আর একটি বিশেষ আকর্ষণ আমাদের দেশে প্রথমবারের মত পার্কের ভিতরে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবলকার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া পার্ক এলাকায় কৃত্রিম লেক তৈরিসহ, পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করেছে বনবিভাগ।
নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পার্কে আনা হয়েছে পাখি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগীয় কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ জানান, কোদালা বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫‘শ একর বনভুমিতে দেশের প্রথম অ্যাভিয়ারি এন্ড রিক্রিয়েশন পার্ক গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। সারা বিশ্বের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে এ ধরনের অ্যাভিয়ারি এন্ড রিক্রিয়েশন পার্ক।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এখানে হাজার হাজার বুনো পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে শত শত মানুষের সামনে। তাদের কলতানে মুখরিত হবে সবুজ বন।
পার্কের অভ্যন্তরে অন্যান্য বৃক্ষের পাশাপাশি বট, অশ্বথ, পাঁকুড়, আমলকী, ডুমুর, ইত্যাদি পাখি খাদ্য ও বিভিন্ন ফলফলাদির বৃক্ষ চারা বনায়নে বাগান সৃজন এবং পাখিকুলের প্রাকৃতিক খাদ্যের ব্যবস্থার মাধ্যমে পাখিদের অভয়ারণ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এটি এমন একটি পার্ক যেখানে সবুজ পাহাড়ি বনের মাঝে হাজার হাজার বুনো পাখি উড়ে বেড়ায়। তাদের কলতানে মুখর হয়ে সবুজ বন আর বুনোপথে ঘুরে বেড়ায় ভ্রমনপিয়াসি মানুষ। আকাশ পথে ক্যাবল কারে চড়ে দেখে নিচের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
বিবার্তা/জিয়া