রাজবন বিহার নামটা হয়তো শুনেছেন কিন্তু দেখা হয়ে উঠেনি এখনও। বান্দরবনের জেলার অন্যত্ম একটি পর্যটন স্থান। বৃহত্তর পার্বত্য অঞ্চল তথা বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা ও প্রচার কল্পে রাঙামাটি রাজবন বিহার বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির প্রকাশ বনভন্তে এ বিহারে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রয়াণ পর্যন্ত অবস্থান করেন।
রাঙামাটি রাজবন বিহারকে দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পূর্ণতীর্থ বলে মনে করা হয়। এ বিহারে রয়েছে একাধিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র। দেশের অন্যান্য বিহারের চেয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য।
বৌদ্ধদের পূন্যতীর্থ হিসেবে রাজবন বিহার প্রাঙ্গন বৌদ্ধ নরনারীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। এ বিহার শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে নয় বৌদ্ধধর্মের লালন ভূমি হিসেবে রাজবন বিহার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মধ্যে গৌরব বৃদ্ধি করেছে।
রাঙামাটি শহরের উপকণ্ঠে কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত অরন্যময় এক টিলা সদৃশ্য ভূভাগের উপর এ বিহার অবস্থিত। ছোট বড় অসংখ্য গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ এলাকা নিয়ে এ রাজবন বিহার পার্বত্য জেলা রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিবছর লাখ লাখ দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে।
১৯৭৭ সালে রাজবন বিহারে স্থায়ীভাবে অবস্থান গ্রহণ করেন সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে। রাজবন বিহারে বনভন্তের অবস্থান গ্রহণের পর রাঙ্গামাটির রাজবন বিহার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে বিদেশে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
রাজবন বিহারে প্রতিদিন ভোর আসে মানুষের পুণ্য সঞ্চয়ের মহোৎসবে। ভোর ৫টার পূর্বের থেকেই সবাই ব্যাকুল চিত্তে অপেক্ষায় থাকেন ভিক্ষু সংঘের দর্শন লাভে। ভোর বেলায় যেমন পুণ্যার্থীরা আসেন তেমনি দুপুরে নানা জনের বিবিধ দানীয় সামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হন। সাপ্তাহিক ছুটির ছাড়াও অন্যান্য বন্ধের দিন ও পর্ব অনুষ্ঠানে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপস্থিতি ঘটে বেশি।
সর্বমোট ২২ একর অরণ্য ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত রাজবন বিহারে বর্তমানে যা কিছু প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা হচ্ছে:
(১) তিনতলা বিশিষ্ট রাজবন বিহার (প্যাগোডা),(২) মিয়ানমারের প্যাগোডার অনুকরণে নির্মিত সুদৃশ্য রাজবন বিহার সার্বজনীন উপসনালয়,(৩) উপসনালয়ের উভয় দিকে দুটি বাতিঘর,(৪) ভিক্ষু সংঘের দোতলা বাসভবন এবং ভিক্ষু সংঘের ভোজনালয়, (৫) শ্রদ্ধেয় বনভন্তের ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি স্থাপন কল্পে একটি মন্দির,(৬) দণ্ডায়মান বুদ্ধমুর্তি স্থাপন বুদ্ধ বিহার,(৭) শ্রদ্ধেয় বনভন্তের সুদৃশ্য দোতালা ভাবনা কুঠির,(৮) শ্রদ্ধেয় বনভন্তের চংক্রমন ঘর,(৯) শ্রদ্ধে বনভন্তের ভোজনশালা,(১০) তিনতলা বিশিষ্ট শ্রমণদের ভাবনা কুঠির,(১১) একতলা বিশিষ্ট ভিক্ষুদের ভাবনা কুঠির,(১২) ভিক্ষুদের চংক্রমণ ঘর (১৩) ২টি গুহা,(১৪) ভিক্ষু সীমা,(১৫) বোধিবৃক্ষাদ্বয়,(১৬) রাজবন বিহার দেশনালয়,(১৭) বেইন ঘর,(১৮) ঘাগড়া টেক্সটাইল মিলের বৌদ্ধ কর্মচারীদের প্রদত্ত দানে নির্মিত ভাবনা কুঠির,(১৯) ছড়ানো ছিটানো কয়েকটি পাকা এবং মাটির ভাবনা কুঠির ২টি ধ্যান পাথর এবং (২০)অতি সম্প্রতি নির্মিত ভিক্ষুদের জন্য লাইব্রেরি।
এছাড়া রাজবন বিহারের চতুর্দিকে সবুজ সৌন্দর্য্যের যেমন অপূর্ব সমাহার তেমনি পূর্বদিকে পশ্চিম দিকে এবং দক্ষিণ দিকে নিশ্চল হ্রদ তিনটি এই পবিত্র স্থানটি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বিবার্তা/জিয়া