নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর ভ্রমণ শেষে রংপুর পৌঁছলাম। পৌঁছতেই সন্ধ্যা হল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই স্থানীয় বন্ধু আমান আর বাপ্পি বাস স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। রাতেই ভ্রমণের সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত হল।
রংপুর আসার আগেই ইচ্ছে ছিলো তাজহাট জমিদার বাড়িতে যাওয়ার। বিভিন্ন সময় ছবিতে দেখা অনন্য সুন্দর এই প্রাসাদের প্রতি একটা অন্যরকম আকর্ষণ ছিলো। বন্ধুদের জানাতেই তারা সম্মতি জানালো। নির্ধারিত দিন সকালেই বন্ধু মৌ, আমান আর বাপ্পি হাজির হল। অটোতে করে রওয়ানা হলাম শ্বেতশুভ্র তাজহাট জমিদার বাড়ি।
তাজহাট শহর থেকে তাজহাটের দূরত্ব মাত্র ৩ কিমি। বাংলাদেশে যে কয়টি সুবিশাল ও অনন্য সুন্দর স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে তাজহাট জমিদার বাড়ি অন্যতম। স্থাপত্যশৈলীতে ঢাকার আহসান মঞ্জিলের সাথে বেশ মিল রয়েছে এই জমিদার বাড়ির।
জানা যায় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় এই প্রাসাদ নির্মান করেন। প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে চমৎকার এই স্থাপনা তৈরিতে। ৭৬.২০ মিটার দৈর্ঘ্য ভবনটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ইতালি থেকে আমদানি করা শ্বেত পাথর।
পরবর্তীতে ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই প্রাসাদ রংপুর হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের শাখা বেঞ্চ হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নত্তত্ব বিভাগ এটিকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে।
শ্বেতপাথরের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম সবাই। দ্বিতীয় তলাতেই রয়েছে জমিদারবাড়ির সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। ক্ষুদ্রাকার কোরআন শরিফ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের স্বহস্তে লেখা খুৎবা, কবি শেখ সাদীর স্বহস্তে লেখা কবিতা, শিবলিঙ্গ, কষ্টিপাথরের মূর্তি, শিলামূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, সংস্কৃত ভাষায় লিখিত কিছু চিঠি, শিলালিপিসহ বেশ কিছু চমৎকার সংগ্রহ চোখে পড়লো। জাদুঘর দেখা শেষে ঘুরে দেখলাম বাড়ির অন্যান্য কক্ষ।
পুরো ভবনটিতে রয়েছে মোট ২৮টি কক্ষ। এখানে একটা গুপ্ত সিঁড়ি রয়েছে যা কোন সুড়ঙ্গের সাথে যুক্ত হয়ে ঘাঘট নদীতে মিলেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তা এখন বন্ধ। নিচতলায় সবাই মিলে বেশ কিছু ছবিও তোলা হল। অতঃপর প্রাসাদের ভেতর থেকে বের হয়ে নিচে আসলাম সবাই।
প্রাসাদ চত্বরে ফুল-ফলের নানা গাছের সারি ছাড়াও একটা ছোট দিঘী রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে বিশাল বাগান। সবাই মিলে বাগানে গল্প করে বেশ কিছুটা সময় কাটালাম। দুপুর হয়ে গিয়েছে। এখান থেকে যাওয়ার কথা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজ।
ভ্রমণার্থীদের জন্য বলে রাখি, এখান থেকে কারমাইকেল কলেজ বেশ কাছেই। তাই এখানে আসলে ঘুরে যেতে ভুলবেন না এই ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর দেরি করলাম না। তাজহাটকে সেদিনের মত বিদায় জানিয়ে রওয়ানা হলাম নতুন গন্তব্যে।
তাজহাট জমিদারবাড়ির গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। আর শীতকালীন (অক্টোবর-মার্চ) সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবসসহ সরকারি সব ছুটির দিনে জমিদার বাড়ি জাদুঘর বন্ধ থাকে। ঢাকা থেকে এখানে আসতে হলে গাবতলী অথবা কল্যাণপুর থেকে সরাসরি রংপুরের বাসে আসতে পারেন। হানিফ, শ্যামলি ও এস আর পরিবহনসহ বেশ কিছু এসি, নন এসি ভালো বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া পড়বে ৫৫০-৯০০ টাকা।
বিবার্তা/জিয়া