সরু পথ উঠে গেছে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সে। ইট-কাঠের ফাঁক দিয়ে চোখে পড়া এক চিলতে আকাশ নয়। ওপরে যত দূরে তাকাই, চোখ আটকাবে শুধু সাদা মেঘে। বাকি পুরোটাই ঝকঝকে নীল আকাশ। নিচে একই রকম সবুজের ছড়াছড়ি।
মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সাদা ঝরনা, আদিবাসীদের টংঘর। নাকে আসছে বুনো ফুলের গন্ধ। দাঁড়িয়ে আছি সমতল থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট ওপরে। বান্দরবানের লামায় মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সে। পর্যটকদের বেশ নজর কেড়েছ নতুন এই কমপ্লেক্স। টাইটানিক জাহাজের আদলে এখানে বানানো হয়েছে এক স্থাপনা।
লোকমুখে জায়গাটার নাম এখন চালু হয়ে গেছে টাইটানিক পাহাড়। এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্য ডোবার দৃশ্য একবার দেখলে বারবার ফিরে আসতে চাইবেন। পরিষ্কার দিনে এখান থেকে দেখতে পাবেন কক্সবাজারে বেলাভূমি এমনকি বঙ্গোপসাগরের বাতিঘরের ঝিলিক।
পর্যটকদের জন্য এখানে আছে রেস্টহাউস, বসার ছাউনি। নির্জনে সময় কাটানোর জন্য সংযোগ সেতুসহ গোলঘর মালঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে টেলিস্কোপ ঘর। জ্যোৎস্না রাতে চাঁদ দেখার জন্য আছে চন্দ্রিমা গোলঘর। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি শিশুপার্ক। খাওয়াদাওয়ার জন্য রয়েছে শিশুপার্ক-সংলগ্ন রেস্তোরাঁ। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। সবুজ গাছ আর পাহাড়ঘেরা মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত মিরিঞ্জায় তাই বেড়াতে আসতে পারেন নিশ্চিন্তে।
শুধু দেখা নয়, কান পেতে শোনারও আছে অনেক কিছুই। গভীর ঝিরির কলকল, বনমোরগ, হরিণের ডাক, মাঝে মাঝে বুনো হাতির চিৎকার। আর দেখতে পাবেন টংঘরে আদিবাসীদের সাদামাটা জীবন। শহুরে জীবনটা ফেলে কিছুক্ষণের জন্য মিশে যেতে চাইবেন তাদের সঙ্গে।
মিরিঞ্জা ঘুরে এক ঘণ্টার মধ্যেই কক্সবাজার চলে যাওয়া যায়। যাঁরা রাতে এখানে থাকতে চান না, তাঁদের জন্য আছে লামাবাজারে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মিরিঞ্জা হোটেল। অল্প খরচে মানসম্মত সেবা পাওয়া যায়।
মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা লামা উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘উপজেলায় প্রথম দায়িত্ব নেয়ার জন্য লামায় আসার পথে রাস্তার পাশে দেখতে পেলাম বিশাল এক পাহাড়। এই পাহাড় হুবহু টাইটানিক জাহাজের মতো। তখনই ভাবলাম পর্যটনকেন্দ্র তৈরির কথা। ২০০৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৬ একর পাহাড়ি ভূমি নিয়ে এই পর্যটন কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই।’
কিভাবে আসবেন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে চকরিয়া উপজেলার চকরিয়া বাসস্টেশনে নেমে আপনি বাস, জিপ অথবা মাইক্রোবাসযোগে হাঁসের দিঘি হয়ে ২০ মিনিট সময়ের ব্যবধানে লামা মিরিঞ্জা টাইটানিক পাহাড়ে চলে আসতে পারবেন। আর এখান থেকে লামা বাজারে আসতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। লামা বাজার থেকে যেতে পারবেন সুখি-দুঃখী পাহাড়সহ অনেক দর্শনীয় জায়গায়।
বিবার্তা/জিয়া