আমাদের জীবন কি? আমাদের জীবন নানান উদ্বিগ্নতার সমষ্টি। পড়াশোনায় ভাল করতে হবে, চাকরিতে উন্নতি করতে হবে, মানানসই জীবনসঙ্গী পেতে হবে, নিজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে হবে এমন নানান সব চিন্তা। সারাক্ষণ লেগে আছে প্রতিযোগিতা, সারাক্ষণ হেরে যাওয়ার ভয়। এর মাঝে আমাদের মস্তিষ্ক কখনোই বিশ্রাম পায় না। ঘুমের মাঝেও যেন আমরা দুশ্চিন্তার চাষাবাদ করতে থাকি।
ভ্রমণ মানেই শান্তি, রিল্যাক্স। সারা সপ্তাহ কাজের শেষে ছুটির দিন এলেই মন ভাল লাগতে শুরু করে আমাদের। কোন কাজ নেই, ভাবার মাঝেই অনেক আনন্দ। ঠিক যেমন অনেক কাজ আছে এই ভাবনা আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ায়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, বেড়াতে যাওয়া আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং মস্তিষ্ককে উন্নত করে।
কারণ? ভ্রমণ মেটায় মনের ক্ষুধা। আমরা যত সৌন্দর্য্যের কাছে যাই তত আমাদের মন প্রশান্ত হয়। যত নিরিবিলি জায়গায় যাই তত মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় দুশ্চিন্তা করা থেকে। যত যাই বনের গভীরে, যত যাই আদিম আবহাওয়ায় তত মস্তিষ্ক ভুলে যায় পার্থিব যত দুর্ভাবনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের মুড ভাল করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল অন্য বিষয়ে মনোযোগ দেয়া। এবং মজার ব্যাপার হল, আমরা যখনই এটা করি আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের তালে তালে ঠিকই পুরনো বিষয় ভুলে যায়! এই থিওরি নিয়েই একজন বিজ্ঞানী কিছু সংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা চালান। তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় বনে হাঁটার জন্য মাত্র দেড় ঘণ্টার জন্য। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কের প্রিফন্টাল কর্টেক্স পরীক্ষা করা হয়। মস্তিষ্কের এই এলাকা মানসিক রোগের জন্য দায়ী। দেখা যায় সেখানে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ভাবুন, মাত্র দেড় ঘণ্টায় যদি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তাহলে দীর্ঘ ভ্রমণের ফল হতে পারে কেমন!
বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করেন, মস্তিষ্কের এই পরিবর্তন কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। তারা একটি ভলান্টিয়ার গ্রুপকে শহরের বাইরে কিছুদিন অবস্থানের জন্য পাঠালেন। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় নিজেদের সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করে রাখার। ফিরে আসার পর তাদেরকে বেশ কিছু জটিল এবং সৃজনশীল কাজ করতে দেয়া হয়। দেখা যায়, তাদের সৃজনশীল ভাবনার ক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
ভ্রমণ কেন জরুরি তা নিশ্চয়ই আর ব্যাখার অপেক্ষা রাখে না। মনকে প্রফুল্ল রাখতে, নিজের জীবনের সকল জট খুলতে একটাই জাদুকরী সমাধান। সব সমস্যা থেকে দূরে পালিয়ে যান কিছুদিনের জন্য। অন্তত ১ দিনের জন্য। মস্তিষ্ককে আরাম দিন, সে আপনাকে দেবে কয়েকগুণ বেশী কাজ করার ক্ষমতা।
বিবার্তা/জিয়া