কুয়াকাটা সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

কুয়াকাটা সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:০১:৩৩
কুয়াকাটা সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই
উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া
প্রিন্ট অ-অ+
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজারো পর্যটকের ঢল নেমেছে। দেশী-বিদেশী নানা বয়সের টুরিস্টদের আগমনে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার দিনভর সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। 
 
সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে উম্মাদনায় নেচে গেয়ে সৈকতে বিচরণ করেছেন হাজার হাজার পর্যটক। অধিকাংশ পর্যটক লম্বা ছুটিতে তাদের পরিবার পরিজন ও প্রিয়জন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে ৩-৪ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। এর ফলে আবাসিক হোটেল মোটেল, খাবার ঘর ও শপিংমলসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। 
 
এদিকে আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পর্যটন স্পটগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
 
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান, খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পরেছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বাস, টেম্পু, প্রাইভেটকার, মাইক্রোযোগে দলে দলে পর্যটকরা আসতে শুরু করে।
 
ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের বালিয়াড়িতে পাতা বেঞ্চ ও ছাতার নিচেসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নানা বয়সের মানুষ গল্প, গান আর আড্ডায় মেতে রয়েছে। ঘুরতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সাথে নতুন নতুন বন্ধুত্বের সুযোগে হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে নানা ঢংয়ের সেলফি তুলে সাথে সাথে পোস্ট করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। 
কুয়াকাটা সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই
আবার কেউ কেউ সৈকতে ফুটবল ও হাডুডু খেলায়ও মেতে রয়েছেন। এছাড়া সৈকত লাগোয়া নারিকেল বাগান, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী, লাল কাঁকড়ার চর, সৈকতের জিরো পয়েন্ট ও ইলিশ পার্কে শিশু কিশোর যুবকযুবতীসহ নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখরিত। 
 
এদিকে ঈদুল আজহার সরকারি লম্বা ছুটিতে হোটেল মোটেলের সিট অগ্রিম বুকিং রয়েছে বলে ওখানকার একাধিক হোটেল মোটেল মালিকরা জানিয়েছেন।
 
গৃহিণী এলিজাবেথ তার পরিবারে খুলনা থেকে কুয়াকাটায় এসেছেন। তাদের সাথে সৈকতে ফুচকার দোকানে বসে কথা হয়। তিনি বলেন, এখানে আরো বেশ কয়েকবার এসেছি। এখানকার সবকিছুই ভাল। এখন কুয়ায়াকাটায় আসার জন্য যোগাযোগ আরো উন্নত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটে যাওয়ার অভ্যন্তরীন সড়কগুলো একেবারেই অবহেলিত। এগুলো জরুরি ভিক্তিতে মেরামত করা প্রযোজন। এছাড়া সৈকত আরো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত বলে তিনি জানান।
 
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এমবিবিএর ছাত্রী ও চাকরিজীবী মোনালিসা জানান, দীর্ঘ ছুটিতে প্রথমবারের মত কুয়াকটায় তিনি আসেন। সৈকতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আমি বিমোহিত হয়েছি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সৈকতে রাতে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেকেই হাঁটতে গিয়ে পরে থাকা গাছের গোড়া ও  গাছের পুরনো ভগ্নাংশে  ধাক্কা খেয়ে পায়ে চোট পেয়েছেন। এ কারনে আমি আর রাতে রুম থেকে সৈকতে বের হইনি।’  
 
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির পরিচালক হোসাইন আমির বলেন, ‘আমাদের একের পর এক ভ্রমন নৌ-তরী পর্যটকদের নিয়ে সমুদ্র ঘুরে দেখাতে হচ্ছে।’ কুয়াকাটা ইলিশ পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। 
 
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ জানান, পর্যটকদের আগমনে এখানকার হোটেল মোটেলগুলো কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। ঈদের ছুটি উপলক্ষে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল মোটেল গুলোতে আগাম বুকিং রয়েছে। 
 
মহিপুর থানার ওসি এসএম মাসুদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আশা করি আগত পর্যটকরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ঘুরতে পারবেন। এজন্য জেলা পুলিশ, মহিপুর থানা পুলিশ ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ একসাথে কাজ করছে। 
 
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ দর্শনীয় স্থানগুলোতে টহলরত রয়েছে। এছাড়া সাথে গোয়েন্দা সদস্যদের একটি দল মাঠে কাজ করছে। তবে পর্যটকদের সতর্কভাবে সাগরে গোসল করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সাদেকুর রহমান জানান, পর্যটকদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় এজন্য সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশকে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। 
 
বিবার্তা/উত্তম/জিয়া 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com