ঈদের আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্ক। ঈদের দিন বিকেল থেকে চলছে এই উৎসবের আনন্দ।
বাংলার রাজধানী ঢাকার অদূরে শহরের কোল ঘেষে নরসিংদীর পাঁচদোনায় অবস্থিত ড্রিম হলিডে পার্কে ঈদকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র ড্রিম হলিডে পার্কটি ঈদের দিন থেকে দেশী-বিদশি পর্যটকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে মাতিয়ে রাখছেন পার্কটি।
তাই ঈদের আমেজকে ভরিয়ে দিতে ও বিনোদনপ্রেমীদের আরো আকৃষ্ট করতে পার্ককে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। সংযোজন করা হয়েছে বেশকিছু নতুন রাইড। পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। ফলে অনেকটা প্রাকৃতিক পরিবেশের মতোই প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা।
ঈদ উপলক্ষে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে ক্যাবল কার, ৯ডি থিয়েটারসহ আকর্ষণীয় নয়টি নতুন রাইড, বুলেট ট্রেন, রোলার কোস্টার ও ভূতের রাজ্যসহ আরো বেশ কয়েটি রাউড।
ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক জ্যামস চে জং বলেন, আমি ঈদের ছুটিতে একটু ঘুরতে এসেছি। আমার সাথে বাংলাদেশী শরিফ নামের এক যুবকও এসেছে। আমি অনেক অনেক খুশি এখানে আসতে পেরে।
তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাংলাদেশে এখনো প্রচুর সম্ভবনাময় সম্পদ রয়েছে। যা ব্যবহার করে এদেশ অনেক এগিয়ে যেতে পারে। এই পার্কটি ঘুরে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। কাজের ফাঁকে খুব একটা সময় পাই না। পেলে হয়তো আরো আসতাম। তবে আমি সময় পেলে এই পার্কে আরো আসার ইচ্ছা রাখি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রচুর বাহারি গাছ-গাছালি রোপণ করায় সবুজের এক মহাসমারোহ ঘটেছে এখানে। তাই পার্কে কিছুক্ষণের জন্য বসলে মুহূর্তেই নীরব-নিস্তব্ধতায় মন যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
এখানে মিলবে হিমালয় পর্বতের সাদৃশ্য। নাম যার ফেনটম হিল। স্বপ্নের এ পার্কে এখন বসবাস করছে ইতালি থেকে আনা ৩০টি ভূত। ভূতের রাজ্যের পাশাপাশি যোগ হয়েছে বুলেট ট্রেন, রোলার কোস্টার, অত্যাধুনিক সুইমিংপুল, বাম্পার কার, এয়ার বাইসাইকেল, আইচপাহাড়। সাথে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ওয়েবপুল, যেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কান পাতলেই শোনা যাবে সমুদ্রের বিশাল গর্জন।
এছাড়া পার্কে রয়েছে পিকনিক স্পট, শুটিং স্পটের জন্য খুবই সুন্দর মনোরম পরিবেশ। যা সত্যিই মনকে ভরিয়ে তোলে। পার্কে দর্শনার্থীদের খাবারের জন্য রয়েছে বিশাল রেস্টুরেন্ট, মিনি চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ খাবারের ব্যবস্থা।
রয়েছে আইসক্রিম পার্লার, কফি শপের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত জামদানি হাউস।
পার্কে বেড়াতে আসা পলাশ উপজেলার মাঝেরচর গ্রামের সিংগাপুর প্রবাসী কাইয়ুম মিয়া বলেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুর আছি। বেশ কয়েকটি পার্ক ঘুরেছি। তারা অল্প জায়গায় অধিক রাইড ব্যবহার করে থাকে, ফলে মন খুলে বেড়ানো যায় না। কিন্তু আমাদের এলাকায় সুবিশাল জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ড্রিম হলিডে পার্কে ঘুরতে এসে অবাক হয়ে গেছি। এখানে রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর রাইড। যেখানে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও ঘুরে রেড়াতে পারবে মনের আনন্দে।
পার্কে দর্শণার্থীদের জন্য সূলভমুল্যে মেয়েদের থ্রি-পিস, বেডশিট ও অন্যান্য জিনিসপত্রও পাওয়া যায়। রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও। রয়েছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় সপরিবারে রাত যাপনের জন্য ডুপ্লেক্স কটেজ ও সুবিশাল বাংলো।
জানা যায়, দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠি ফনিক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা রাজধানী ঢাকার অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা চৈতাবতে ২০০৭ সালে প্রায় ৭৫ বিঘা জমির উপর এ পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
২০১১ সালে এ বিনোদন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়। নাগরিক জীবনের কোলাহলের বাইরে পার্কের এ সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে ঈদের ছুটিতে অনেকেই সপরিবারে বেড়াতে আসেন।
ড্রিম হলিডে পার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে, বাংলাদেশে সে তুলনায় বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য। তার এ উপলব্ধি থেকে আজকের ড্রিম হলিডে পার্ক।
যে উদ্যোগে নরসিংদীর পাঁচদোনার মানুষ এখন গর্ববোধ করে। আন্তর্জাতিক মানের পার্কের জন্য পাঁচদোনা এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্কটি।
এ ঈদে বেড়ানোর জন্য যে কোনো বয়সের সদস্যরা সপরিবারে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে ড্রিম হলিডে পার্কে। প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছরেই পার্কটি দেশের পর্যটকদের দৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে পিকনিক বা শুটিং স্পটের জন্য অনেকেই পছন্দের তালিকায় রেখে দেন।
পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, ঈদে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে নিজস্ব ও সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিবার্তা/শরীফ/কাফী